Advertisement
E-Paper

নিজেরই প্রকল্প, তবু মমতা কোথায়

রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনিই আবার এই সব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেওয়ার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার ফলে প্রকল্পগুলির কাজ শিকেয় উঠেছে। যে দু’একটি প্রকল্পে জমি জোগাড় হয়েছে, সেখানেও কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসক দলের সমর্থক কিছু লোকের তোলাবাজি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০৩:৫১
জমির অভাবেই আটকে রাজ্যের প্রকল্প। মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে লেখা পূর্ব রেলের মুখ্য প্রশাসনিক কর্তা পি এন রামের লেখা চিঠি।

জমির অভাবেই আটকে রাজ্যের প্রকল্প। মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে লেখা পূর্ব রেলের মুখ্য প্রশাসনিক কর্তা পি এন রামের লেখা চিঠি।

রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিযোগ উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তিনিই আবার এই সব প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দেওয়ার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার ফলে প্রকল্পগুলির কাজ শিকেয় উঠেছে। যে দু’একটি প্রকল্পে জমি জোগাড় হয়েছে, সেখানেও কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শাসক দলের সমর্থক কিছু লোকের তোলাবাজি।

বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দলের অভিযোগ নয়, খোদ রেল মন্ত্রকের তরফেই রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে চিঠি লিখে এই ‘তথ্য’ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি রেল আরও প্রশ্ন তুলে বলেছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রেল প্রকল্পগুলিকে রাজ্য কি সত্যিই গুরুত্ব দেয়? তা হলে পর্যালোচনা বৈঠকগুলিতে কেন কোনও সিনিয়র আমলাকে পাঠানো হয় না?’’

যদিও রেল মন্ত্রকের অভিযোগ মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বরাবর বলে আসছেন— তাঁর আমলে ঘোষিত পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পগুলির জন্য রেল মন্ত্রক অর্থ বরাদ্দ করছে না বলেই কাজ এগোচ্ছে না। এ বিষয়ে রাজ্যের কোনও দায় নেই। রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় রেলের তোলা কোনও অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর সাফ কথা, ‘‘কেন্দ্র টাকা জোগাড় করতে না-পেরেই রাজ্যের ঘাড়ে দায় চাপাচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার মতো প্রকল্পের টাকাই ওরা দিতে পারছে না, সেখানে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া রেলের টাকা আসবে কোথা থেকে!’’

রেল মন্ত্রক সূত্রের খবর, সুরেশ প্রভূ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেওয়ার পর নীতি নেওয়া হয়— নতুন প্রকল্প ঘোষণা না-করে বিভিন্ন রাজ্যে বকেয়া পড়ে থাকা প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রতিটি রাজ্যে বকেয়া প্রকল্প রূপায়ণের জন্য একটি করে ‘প্রজেক্ট মনিটরিং অ্যান্ড কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ’ তৈরি করেছেন নতুন মন্ত্রী। এই কমিটিতে সামিল করা হয়েছে রাজ্য সরকারকেও। রেল মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় রেখে কাজ করার জন্যই এই কমিটি গড়া হয়েছে।’’ রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, প্রকল্প রূপায়ণের পথে বাধা-বিপত্তিগুলি তাঁরা আলোচনার টেবিলে বসে মিটিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলেও, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তাতে তেমন হেলদোল নেই।

কেন? রেল সূত্রের খবর, রেল-রাজ্য সমন্বয় কমিটি তৈরির পর ৩০ ডিসেম্বর এবং ৩ ফ্রেব্রুয়ারি দু’টি বৈঠক ডাকা হলেও তাতে পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিনিয়র অফিসার সেখানে যাননি। যিনি ওই বৈঠকে গিয়েছিলেন, তিনি রাজ্যের কোনও প্রকল্প সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল নন বলে বৈঠকে জানিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, রেল কর্তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে যখন তাঁর কাছে সমাধান সূত্র চান, তিনি সোজাসুজি বলেন, ‘‘আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। যা শুনলাম তা রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দেব।’’

রেল কর্তারা অবশ্য ওই অফিসারের মাধ্যমে রাজ্য সরকারকে কিছু জানানোর অপেক্ষা করেননি। বৈঠকে কোনও লাভ হচ্ছে না বুঝেই পূর্ব রেলের নির্মাণ বিভাগের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার পি এন রাম মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে বাস্তব অবস্থার কথা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে রেল বোর্ডের পরামর্শ মাফিক তৈরি হওয়া এই কমিটির বৈঠকে রাজ্য সরকার যাতে রেল প্রকল্প নিয়ে ওয়াকিবহাল কোনও সিনিয়র আমলাকে পাঠায়, সেই অনুরোধও করেছেন রেলের
ওই কর্তা।

রাজ্যের প্রকল্পগুলির কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে পূর্ব রেলের মুখ্য প্রশাসনিক অফিসার রাজ্যকে কয়েক দফা কারণ জানিয়েছেন। সেগুলি হল—

১) জমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়ায় প্রকল্পের কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।

২) বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত সরানো যাচ্ছে না।

৩) রেল ট্র্যাকের উপর দিয়ে বেআইনি পারাপার বন্ধ করা যাচ্ছে না।

৪) রেলের জমির দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না।

৫) স্থানীয় বাসিন্দারা বিভিন্ন স্থানে অন্যায্য দাবি তুলে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। সেই দাবি না-মানতে পারায় আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হয়ে কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

পূর্ব রেলের নির্মাণ বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘নতুন প্রকল্প নিয়ে আমাদের আগ্রহ কম। সরকার জমি দিতে না-পারলে তা হবে না। কিন্তু যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেও সামান্য জমি বা স্থানীয়দের অন্যায্য দাবির জন্য আটকে রয়েছে, সেগুলির জট ছাড়ানোই বেশি জরুরি।’’

ওই কর্তা জানাচ্ছেন, লক্ষ্মীকান্তপুর সেকশনে ডবল লাইনের কাজ শেষ হওয়ার মুখে। এ জন্য মাধবপুর স্টেশনে নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম বানাতে হবে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা তা করতে দিচ্ছেন না। ফলে লক্ষ্মীকান্তপুর ডবল লাইনের কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। বার বার রাজ্যের সাহায্য চেয়েও লাভ হয়নি।

তিনি আরও জানাচ্ছেন, মুর্শিদাবাদ আর আজিমগঞ্জের সং‌যোগকারী একটি সেতু তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অ্যাপ্রোচ রোড তৈরির জমিটুকু মিলছে না। ফলে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হওয়া সেতুটি কাজে লাগছে না। একই ভাবে তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর ৮২ কিলোমিটার রেল লাইনে কাজ প্রায় শেষ। কিন্তু মাঝের ১৫ কিলোমিটার লাইনের জমি রাজ্য রেলের হাতে তুলে দিতে পারেনি। ওই অবস্থাতেই কাজ বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। নলহাটির কাছে ব্রাহ্মণী নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ কিছু লোকের তোলাবাজি আর হামলার জন্য শুরুই করা যাচ্ছে না। মাত্র এক ছটাক জমির অভাবে ডানকুনি ফ্রেট করিডরের কাজও শুরু করা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওই রেল কর্তা।

শুধু নতুন লাইন পাতার কাজই নয়, পূর্ব রেলের বহরমপুর, নৈহাটি, বর্ধমান, ব্যান্ডেল, আদিসপ্তগ্রাম, শিমলাগড়, নলহাটি, মেমারি, নালিকুল, কামারকুণ্ডুর মতো ১২টি জায়গায় ওভারব্রিজ তৈরির কাজে কোথাও জবরদখল সরানো যায়নি, কোথাও আবার সামান্য জমিটুকু মিলছে না। রাজ্য এগিয়ে না-আসায় সেই কাজগুলিও হচ্ছে না বলে রেলের অভিযোগ।

পূর্ব রেলের মতোই দক্ষিণ পূর্ব রেলের নন্দীগ্রাম পর্যন্ত রেল চালু করা, আমতা-বাগনান লাইনেও একই সমস্যা দানা বেঁধেছে। এমনকী উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত রেলের সেবক-রংপো রেল লাইন বা নিউ ময়নাগুড়ি স্টেশন তৈরির কাজেও জমিই সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে রেল কর্তারা জানিয়েছেন। কোনও জায়গাতেই রাজ্যকে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে মুখ্যসচিবকে অভিযোগ জানিয়েছে রেল মন্ত্রক।

abpnewsletters mamata rail projects mamata state projects land problem mamata blocked projects mamata obstacle jagannath chattopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy