ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ (এসআইআর)-র নামে এনআরসি হচ্ছে! ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে আবার নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ৫০ বছর আগে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের জন্মের শংসাপত্র পাওয়া যাবে কী করে?
প্রসঙ্গত, বিহারে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবি়ড় সমীক্ষা’ নিয়ে উত্তাল জাতীয় রাজনীতি। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাও চলছে। বৃহস্পতিবারও শুনানি হয়েছে। সূত্রের খবর, বিহারের পরেই পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করবে নির্বাচন কমিশন। পুজোর পরেই তা শুরু হয়ে যেতে পারে। কমিশনের তেমনই পরিকল্পনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেহালায় প্রাক-স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই মঞ্চ থেকেই এসআইআর-এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘‘ভোটার তালিকার বিষয় নিয়ে আমরাই প্রথম সরব হয়েছিলাম। এসআইআর নিয়ে আমাদের দলেরও সুপ্রিম কোর্টে এক জন মামলা করেছেন। আমরাও সুপ্রিম কোর্টে আমাদের বক্তব্য জানাচ্ছি। এসআইআর-এর নামে এনআরসি হচ্ছে!’’
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ভোটার তালিকার নিবিড় সমীক্ষার জন্য যে সব নথি চাওয়া হচ্ছে, তার অনেক নথিই সাধারণ মানুষের কাছে নেই। মমতার প্রশ্ন, ক’টা মানুষের কাছে প্যান কার্ড বা পাসপোর্ট রয়েছে? জন্মের শংসাপত্রই বা ক’জনের কাছে আছে? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘জন্মের শংসাপত্র থাকবে কী করে? ধরুন, ১৯৮২ সালে যাঁরা জন্মেছেন, তাঁদের তো অধিকাংশেরই জন্ম বাড়িতে। তখন কি ইনস্টিটিউশনাল ডেলিভারি হত? কে দেবে জন্মের শংসাপত্র? আমারই তো নেই।’’ এসআইআর-এর জন্য কেন আধার কার্ড নেবে না কমিশন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এসআইআর মামলায় একই প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্টও। শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘আধার কার্ড স্থায়ী বসবাসের প্রমাণপত্র হিসাবে এবং পরিচয়পত্র হিসাবে আইনত স্বীকৃত একটি নথি। সে ক্ষেত্রে আধার কার্ড গ্রহণ করা হবে না কেন?’’ শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, কোনও রকম সমস্যা হলে পরিচয় এবং বাসস্থানের প্রমাণ হিসাবে আধার কার্ড নিয়ে নির্বাচনী আধিকারিকদের দ্বারস্থ হতে পারবেন নাগরিকেরা। সুপ্রিম কোর্ট এ-ও বলেছে, ‘‘স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে তালিকা থেকে নাম মুছে ফেলার অনুমোদন নেই। কেন নাম বাদ গিয়েছে তা জানার মৌলিক অধিকার নাগরিকদের রয়েছে। এ জন্য সর্বাধিক প্রচার প্রয়োজন। গোটা প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা চাই। নামের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হোক। যদি বিএলও দফতরের সামনে নামের তালিকা ঝোলানো যায়, তা হলে ওয়েবসাইটে নয় কেন?’’