‘প্রতিবেশীকে ভালবাসুন’ শীর্ষক কনক্লেভে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে কেন্দ্র তথা বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে কনস্টিটিউশন ক্লাবে আয়োজিত এক কর্মসূচিতে ভাষণ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা। অসমে বিজেপি বিভাজনের রাজনীতি করছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। ‘‘কে ভারতীয়, আর কে নন, তা ঠিক করার বিজেপি কে?’’ প্রশ্ন মমতার। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য। জাতীয় নিরাপত্তা নয়, ভোটব্যাঙ্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য, মন্তব্য অমিতের।
সোমবার অসমে এনআরসির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন কলকাতা থেকে। মঙ্গলবার তিনি নয়াদিল্লিতে কনস্টিটিউশন ক্লাবে একটি আলোচনাচক্রে যোগ দেন। সেই ভাষণে ফের বিজেপি-কে তীব্র আক্রমণ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অসমে এটা কী হচ্ছে! কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে! হঠাৎ করে বলা হচ্ছে দেশ ছেড়ে চলে যাও!’’ দেশে বিভাজন তৈরি করে বিজেপি ক্ষমতা নিজেদের দখলে রাখতে চাইছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেন। বিজেপির বিরুদ্ধে সুর তুঙ্গে তুলে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘শুধুমাত্র শাসক দলের লোকেরাই দেশে থাকতে পারবেন? অন্যরা থাকতে পারবেন না?’’
যাঁদের নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে, তাঁরা সকলে বাংলাদেশি নন বলে মমতা মঙ্গলবার ফের দাবি করেছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার অনেকেই কর্মসূত্রে অসমে গিয়ে বাস করছিলেন। তাঁদের নাম এনআরসি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, বলা হচ্ছে তাঁরা ভারতীয় নন— অভিযোগ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দেশের এক প্রান্তের মানুষ কেন অন্য প্রান্তে গিয়ে থাকতে পারবেন না? প্রশ্ন তৃণমূলনেত্রীর। তিনি বলেন, প্রতিটি রাজ্যেই অন্যান্য রাজ্যের লোক থাকেন। সব রাজ্যই যদি এ বার অন্য রাজ্য থেকে যাওয়া লোকজনকে বার করে দিতে শুরু করে, তা হলে ভারত কি অখণ্ড থাকবে? প্রশ্ন তোলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রাজীবের চুক্তির জন্যই অসমে এই সঙ্কট, অমিতের মন্তব্যে তুলকালাম রাজ্যসভায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার যা বলেছিলেন এনআরসি-র বিরুদ্ধে, তার জবাব রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবারই দিয়েছিলেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাতেও এনআরসি হবে এবং বাংলা থেকেও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বার করে দেওয়া হবে— বলেছিলেন দিলীপ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লির ভাষণে এ দিন দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের বিরুদ্ধেও প্রতিক্রিয়া দেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি স্পর্ধা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি! বলছে, এর পরে বাংলায় ক্ষমতায় আসবে এবং সেখানেও এনআরসি করবে!’’ মমতার প্রশ্ন, ‘‘ওঁরা কি বাংলার অভিভাবক? পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওঁরা কে? পশ্চিমবঙ্গের একটা সরকার রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিষয়ে সিদ্ধান্ত সরকারই নেবে।’’
আরও পড়ুন: এনআরসি-তে নাম নেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির ভাইপোরও!
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। নয়াদিল্লিতেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত শাহ মঙ্গলবার বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছেন।’’ তৃণমূলনেত্রী দেশের নিরাপত্তা নিয়ে একটুও ভাবিত নন, তিনি শুধুমাত্র নিজের ভোটব্যাঙ্ক দেখতে পান, আর কিছুই তাঁর চোখে পড়ে না— মন্তব্য বিজেপি সভাপতির। অসমে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীর উপস্থিতি দেশের নিরাপত্তার জন্য বিপদ বলে অমিত শাহ মন্তব্য করেছেন।
আরও পডু়ন: খসড়া নাগরিকপঞ্জির ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
রাজীব গাঁধী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সেই সময়ে অসম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং তার ভিত্তিতেই আজ এনআরসি তৈরি হয়েছে, বলেন অমিত শাহ। ২০০৫ সালে এনআরসি তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল এবং সে সময়ে কেন্দ্রে ও অসমে কংগ্রেসের সরকার ছিল, সে কথাও বিজেপি সভাপতি মনে করিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি এনআরসি এনে বহু মানুষকে দেশ থেকে বার করে দিতে চাইছে, এ কথা তা হলে কেন বলা হচ্ছে? প্রশ্ন অমিত শাহের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে কটাক্ষ ছুড়ে অমিত শাহের মন্তব্য, ‘‘মমতাজি নিজের সাধারণ জ্ঞানের সীমা একটু বাড়ান।’’
কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ যে সব দল সংসদে প্রবল হইচই শুরু করেছে এনআরসি ইস্যুতে, তাঁদের প্রতি অমিত শাহের বার্তা— আপনারা অবস্থান স্পষ্ট করুন। তিনি জানান, বিজেপির অবস্থান হল, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের এ দেশে থাকতে দেওয়া হবে না। বিরোধী দলগুলি কি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষে? স্পষ্ট করে জানাক। বলেন অমিত শাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy