Advertisement
E-Paper

এত দিচ্ছি তবু কেন ক্ষোভ, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

জেলাশাসক থেকে জনপ্রতিনিধিদের ওই সব এলাকায় নিয়মিত নজর দিতে বলে গেলেন। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:১২
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র

কাজ করেও জেলার জঙ্গলমহলের ক্ষোভ কেন? লোকসভা ভোটের আট মাসে পরে, বাঁকুড়া জেলায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা বার বার জানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাওয়ার আগে জেলাশাসক থেকে জনপ্রতিনিধিদের ওই সব এলাকায় নিয়মিত নজর দিতে বলে গেলেন।

এ দিন বৈঠকের মাঝে মমতা বলেন, ‘‘খাতড়ার লোকেদের এত ক্ষোভ কেন? এত কিছু দেওয়া সত্ত্বেও? কী সমস্যা জ্যোৎস্না মান্ডি (রানিবাঁধের তৃণমূল বিধায়ক) তোমার এলাকায়? যা যা চেয়েছে, সব কিছু দেওয়া হয়েছে। তাতেও কীসের ক্ষোভ খাতড়ায় এত? তুমি এলাকায় যাও?’’ এর পরেই তিনি খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত মিত্রের খোঁজ করেন। তাঁকে বলেন ‘‘লোকজনের কাজগুলো করো জয়ন্ত? না করো না?’’ বিধায়ক এবং জয়ন্তবাবু দাবি করেন, জলই এলাকার মূল সমস্যা। তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরকে এক হাত নেন মুখ্যমন্ত্রী।

একে একে তিনি জঙ্গলমহলের অন্য দুই বিধানসভা রাইপুর ও তালড্যাংরার বিধায়কদের কাছেও এলাকার সমস্যা নিয়ে খোঁজ করেন। সে প্রসঙ্গে বার বার মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কাজ করার পরেও মানুষের ক্ষোভ কেন?’’

শুধু প্রশাসনিক ভাবেই নয়, সংগঠনগত ভাবেও ওই এলাকায় সক্রিয় হতে বলেছেন দলের জনপ্রতিনিধিদের। সে ক্ষেত্রে পুরনো নেতা-কর্মীদের খুঁজে আনার পাশাপাশি, নতুনদেরও টানতে বলেছেন। খাতড়ার পুরনো দিনের নেতা মানিক মিত্রের সম্পর্কে খোঁজ নেন জয়ন্তবাবুর কাছে। মমতা বলেন, ‘‘তোমার বন্ধু মানিক কী করে?’’ জয়ন্ত জানান, তিনি বসে গিয়েছিলেন। এখন আবার দলের কাজ করতে চাইছেন। মমতা বলেন, ‘‘নামতে চাইছে, নিয়ে নাও। একা তোমার দ্বারা হবে না। আর তোমাদের ওখানে ভাল-ভাল আদিবাসী ছেলেমেয়েরা আছে। তাদের একটু নামাও। শুধু তোমাদের দ্বারা হবে না। নতুনদের নিয়ে এস।’’

তালড্যাংরার বিধায়ক সমীর চক্রবর্তী তাঁর এলাকায় কোনও সমস্যা নেই দাবি করে মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘আর কী চায় মানুষ? আমি বুঝতে পারছি না!’’ মমতা বলেন, ‘‘মানুষ চায় তোমরা একটু এলাকায় যাবে। ভাল ব্যবহার রাখবে।’’ বিধায়ক জানান, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সাইকেলে প্রত্যন্ত গ্রাম পরিদর্শনে যান। তা শুনে মমতা বলেন, ‘‘তোমাদেরও তা হলে হেঁটে বা সাইকেল নিয়ে যাওয়া উচিত।’’

লোকসভা ভোটের পরে ওন্দায় বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান-সহ সদস্যেরা বিজেপিতে গিয়েছিলেন। পরে তাঁদের প্রায় সবাই তৃণমূলে ফিরেছেন।

এ দিন মমতা ওন্দার বিধায়ক অরূপ খাঁকে বলেন, ‘‘অরূপ তোমার ওন্দায় এত সমস্যা কেন? তুমি কি এলাকা ঠিক মতো দেখ?’’ অরূপবাবু দাবি করেন, সমস্যা এখন নেই। তিনি প্রতিদিন এলাকায় যান। তারপরেই মমতা বলেন, ‘‘প্রতিদিন গেলেই এলাকা দেখা হয় না। এলাকাটাকে ভালবাসতে হয়।’’

বৈঠক থেকে বেরিয়ে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ বলেন, ‘‘দিদির পুরো হোমওয়ার্ক করেই জেলায় এসেছেন। যেখানে যা নিয়ে বেশি সমস্যা, শুধু সে সব নিয়েই মুখ খুলেছেন।’’

লাগোয়া খেলার মাঠ ও প্রেক্ষাগৃহ

গত বার বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রছাত্রী বাসের দাবি জানিয়েছিলেন প্রশাসনিক বৈঠকে। বুধবারও রবীন্দ্রভবনে হাজির ছিলেন কিছু পড়ুয়া প্রতিনিধি। তুললেন তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা।

• বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র: আমাদের ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন খেলার মাঠ নেই। ক্রিকেট বা ফুটবল টুর্নামেন্টের জন্য বাঁকুড়া স্টেডিয়ামে যেতে হয়। ইউনিভার্সিটি লাগোয়া একটা মাঠ আর ছোটখাট স্টেডিয়াম হলে ভাল হয়।
জেলাশাসক: বাঁকুড়া স্টেডিয়ামের কাছে একটা জায়গা দেখা হয়েছে। পূর্ত দফতরকে দিয়ে উঁচু করাতে হবে।
মমতা: একশো দিনের কাজে করতে হবে। পিডব্লিউডি খরচ করে দশ শতাংশ, নব্বই শতাংশ বেশি দিয়ে দেয়। (ছাত্রকে) বাঁকুড়া স্টেডিয়াম তোমার ইউনিভার্সিটি থেকে কতটা দূর?
ছাত্র: অনেকটা। ইউনিভার্সিটির বাসে যাতায়াত করতে হয়।
মমতা: তাতে অসুবিধা কী আছে? কিছু করলে আমাকে নেতাজি ইন্ডোর বা সল্টলেক স্টেডিয়াম যেতে হয়। কাছাকাছি স্টেডিয়ামটা তোমরা ব্যবহার করবে না কেন? স্টেডিয়াম তো তোমাদের জন্যই।

• ছাত্র: কিছু নতুন বিষয় চালু করা হলে ভাল হয়। যেমন ভূগোল, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, পর্যটন।
মমতা: (সচিবের সঙ্গে কথা বলে) পরিকাঠামো দরকার। ধীরে ধীরে
হয়ে যাবে।

• ছাত্রী: বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অনুষ্ঠান হয়। একটা প্রেক্ষাগৃহ হলে ভাল হয়।
মমতা: (বেশি টাকার প্রজেক্ট রিপোর্ট জমা পড়েছে শুনে) এত টাকা লাগে না। কে দিয়েছে এস্টিমেট? আবার পিডব্লিউডি। ওরা দু’কোটিরটা দশ কোটির করে দেয়। আমি নিজে কোনও কোনও জায়গায় দেখেছি। একেবারে বাতিল করে দাও। দু’আড়াই কোটি টাকায় হেসেখেলে হবে। অডিটোরিয়াম শেখাচ্ছে আমাকে?

Mamata banerjee Jangal Mahal BJP TMC
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy