বিক্ষোভ: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ধর্না। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
নিয়মিত ক্লাসে যাওয়ার, নিজ নিজ পাঠে মন দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আচার্য-রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট-১ পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক ফেল নিয়ে মুশকিল আসানে এ বার মুখ খুললেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও।
শুক্রবার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে নিজের দলের ছাত্র-যুব সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এটা আমার বলা ঠিক হবে কি না জানি না। তবু পার্থদাকে বলছি, খুব বেশি ফেল করেছে। ওদের বিষয়টি দেখুন। এটা আমার অনুরোধ থাকল।’’ একই সঙ্গে পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘দুষ্টুমির সময়ে দুষ্টুমি করবে। কাজের সময় কাজ করবে। মন দিয়ে পড়াশোনা করবে।’’
ফেল-জট নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ এবং সমালোচনার পরে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যে-ভাবে শিক্ষামন্ত্রীকে ‘বিষয়টি দেখার জন্য’ অনুরোধ করলেন, তাতে পড়ুয়াদের এ-যাত্রায় পাশ করিয়ে দেওয়া হবে বলেই শিক্ষা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। শিক্ষা শিবিরের একাংশ মনে করছে, আগেও ফেল করে পাশ করিয়ে দেওয়ার আবদার জানানো হয়েছে বিভিন্ন কলেজে। এ বার পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে কলেজ স্ট্রিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে ধুন্ধুমার বিক্ষোভ, ফটকে লাথালাথির সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রাস্তা অবরোধও করা হয়েছে বারবার। এই পরিস্থিতিতে পাশ করিয়ে দেওয়ার জল্পনা তুমুল হয়েছে।
আরও পড়ুন: আমার পরে অভিষেক-শুভেন্দু, ঘোষণা মমতার
২০১৬ সালের বিএ পার্ট-১ পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশ পাশ করলেও এ বার সেই হার কমে হয়েছে ৪২.৫০ শতাংশ। বিজ্ঞানে পাশের হার ছিল ৮৫ শতাংশ, এ বার কমে হয়েছে ৭১ শতাংশ। তার পরেই বিক্ষোভ শুরু করেন পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলনে বহিরাগতদের ভূমিকাকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। নতুন নিয়মের দোহাই দিয়ে প্রথম থেকে অকৃতকার্য পড়ুয়াদের প্রতি সহমর্মিতা দেখানোর ঝোঁক দেখা যাচ্ছে বলে শিক্ষা শিবিরের একটি অংশের পর্যবেক্ষণ। তাঁদের ধারণা, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন যে-ভাবে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন, তাতে পাশ করানোর পথেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হতে পারে।
শুক্রবারেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ দেখান পড়ুয়াদের একাংশ। এখানে হ্যান্ডমাইক নিয়ে কনভেনশন করেন তাঁরা। ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করে ফের পথ অবরোধ করা হয়। শিক্ষা সূত্রের খবর, আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেকেই কনভেনশনে আসেননি। তবে যোগ দেন ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। পড়ুয়াদের দাবি, ফেল-জট কাটাতে ৬ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের যে-বৈঠকে আলোচনা করার কথা, সেখানে পাঁচ জন পড়ুয়া-প্রতিনিধি রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী সেই সিন্ডিকেট-বৈঠকের আগেই শিক্ষামন্ত্রীকে বিষয়টি দেখতে বলায় সমাধানসূত্র হিসেবে পাশ করানোর জল্পনাই জোরদার হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন জট শুরু হয়েছে অসম্পূর্ণ ফল নিয়ে। পার্ট-১ পরীক্ষায় এ বার অসম্পূর্ণ ফলের সংখ্যা দশ হাজারের বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, অনেক কলেজ আবশ্যিক ভাষা পরীক্ষার সব নম্বর পাঠায়নি। তাই এত ফল অসম্পূর্ণ। কলেজগুলিকে নম্বর জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক কলেজের অধ্যক্ষদের বক্তব্য, পরীক্ষা হয় মার্চে। নম্বরও পাঠানো হয়েছিল। এখন অযথা সেই দায় কলেজের উপরে চাপানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy