পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যারা একটা ট্রেন দেয়নি, চোরেদের দলে নিতে তারা জেট প্লেন পাঠাচ্ছে— বিজেপির দল ভাঙানোর রাজনীতিকে এ ভাবেই তীক্ষ্ণ কটাক্ষে বিঁধলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, তৃণমূল ত্যাগী কয়েক জন গত শনিবার বিশেষ বিমানে দিল্লি গিয়েছিলেন অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে যোগ দিতে। প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এঁদের অন্যতম।
বৃহস্পতিবার কসবায় গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামে দলের তফসিলি জাতি ও জনজাতি সংগঠনের সভায় দলবদলুদের বিরুদ্ধে ফের সরব হন মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘যাদের দু’নম্বরি টাকা আছে তারা বিজেপিতে যায়। টাকা রক্ষা করতে যায়।
ভাল কেউ যায় না।’’ তার পরেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা বিপদে পড়েছিলেন। পথে ১০০ জনের বেশি মারা গেল। বেচারা শিশুসন্তানকে সুটকেসে শুইয়ে টানতে টানতে হাঁটতে হল। তাঁদের জন্য পকেট থেকে একটা টাকা বার হয়নি। আমরা ট্রেন ভাড়া করে নিয়ে এসেছি। আর চোরেদের, ডাকাত সর্দারদের জন্য জেট প্লেন পাঠিয়ে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, যে বিপুল টাকা বিজেপি খরচ করছে তা তারা কোথায় পাচ্ছে?
গত লোকসভা ভোটে তফসিলি সংরক্ষিত জঙ্গলমহলে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে তৃণমূল। এ দিন খোলাখুলি সে প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেন, ‘‘পুরো জঙ্গলমহল, উত্তরবঙ্গের সব আসন আপনারা বিজেপিকে দিয়েছেন। কিন্তু তার বদলে কিছু দেয়নি।’’
বিজেপির শাসনকে ‘বিপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করে পার্শ্ববর্তী দুই রাজ্য অসম ও ত্রিপুরার কথাও টেনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলের মানুষকে সতর্ক করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অসমে এনআরসি করে কী অবস্থা করেছে! এখনও আইনটা রয়েছে। যে কোনও সময় কার্যকর করতে পারে।’’ রাজ্যে তৃণমূল যে এনআরসি, এনপিআর বা সিএএ আইন কার্যকর করতে দেবে না, এ দিনের সভায় তা আরও একবার জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিনের সভায় মূল্যবৃদ্ধি ও কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলায় শান্তিতে থাকতে বিজেপিকে বিদায় দিতে হবে। বাংলার সংহতি রক্ষায় বিজেপিকে বিদায় দিতে হবে।’’
দলত্যাগীদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কার জন্য দল রিকশ পাঠাবে আর কার জন্য গাড়ি পাঠাবে তা দলই ঠিক করবে। বাইরের কেউ ঠিক করবে না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘রাজ্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা এবং অন্য কোনও প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে পারেনি। এখন নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’’
এ দিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী এবং যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।