Advertisement
E-Paper

শুভেন্দু-মমতার দ্বৈরথে মেরুকরণ স্পষ্ট, বিরোধী দলনেতার বক্তব্য নিয়ে মোদীকে লিখবেন দিদি

শুভেন্দু সরাসরি রাজ্যের শাসকদলকে মুসলিম লিগ বলে তোপ দেগেছিলেন। মমতা তাঁর বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, বিজেপি মুসলিম লিগের মতো দলের সাহায্য নিয়ে ভোটে জেতে।

Mamata Banerjee will write a letter to PM Narendra Modi regarding the comments of Suvendu Adhikari

(বাঁ দিকে) শুভেন্দু অধিকারী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:০০
Share
Save

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ নিয়ে কলকাতার রাস্তায় নেমেছিল বিজেপি। সেই একই পর্বে রানি রাসমণি রোডে ওয়াকফ সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে সংখ্যালঘু সেলকে দিয়ে বড় সমাবেশ করিয়েছিল তৃণমূল। সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, আপাতত মেরুকরণের ‘চক্রব্যূহ’ থেকে বঙ্গ রাজনীতির বেরোনোর সম্ভাবনা নেই। মঙ্গলবারের বিধানসভা অধিবেশন দেখিয়ে দিল, ২০২৬-এর আগে সেই মেরুকরণ আরও চড়া দাগের হতে চলেছে। হিন্দুত্বকে ‘হাতিয়ার’ করে রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা শুভেন্দুকে জবাব দিতে গিয়ে তাঁর ‘হিন্দুদর্শন’ তুলে ধরলেন মমতা। পাশাপাশিই, বার্তা দিলেন তিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের পক্ষে।

শুভেন্দু সরাসরি রাজ্যের শাসকদলকে ‘মুসলিম লিগ’ বলে তোপ দেগেছিলেন। অভিযোগ করেছিলেন, জম্মু-কাশ্মীর এবং বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে মমতার যোগ রয়েছে। সেই কথা তুলে ধরে মমতা বলেছেন, ‘‘বলছে আমি নাকি জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি! আমি নাকি মুসলিম লিগ! আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখছি। যদি প্রমাণ করতে পারে, তা হলে এক মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দেব।’’ পাল্টা মমতার একটি বক্তব্য তুলে শুভেন্দু বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি লিখবেন। মমতা অধিবেশনে বলেছেন, ‘‘সারা ক্ষণ একটা সম্প্রদায়কে কুৎসা করা হচ্ছে। তারা যদি রাস্তায় নামে, তুমি (শুভেন্দু) ঘরে থাকতে পারবে তো?’’ শুভেন্দু যার প্রেক্ষিতে বলেছেন, ‘‘উনি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখুন। আমিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি লিখব। একজন মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেতাকে কী বলে হুমকি দিচ্ছেন, দেশ জানুক।’’ চাপানউতরের বাক্যবন্ধ এবং শব্দচয়নে বারংবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বঙ্গ রাজনীতি আপাতত মেরুকরণের কক্ষপথেই আবর্তিত হবে।

অধিবেশনে অ-সংসদীয় আচরণের জন্য সোমবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় শুভেন্দু-সহ বিজেপির চার বিধায়ককে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিলেন। তার পরে শুভেন্দু বলেছিলেন, তিনি হিন্দুদের হয়ে কথা বলেছেন বলেই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যখন অধিবেশনে বক্তৃতা করছেন, ঠিক সেই একই সময়ে বিধানসভা চত্বরে পাল্টা কর্মসূচি করেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দুদের বক্তব্য ছিল, বাংলায় সরস্বতী পুজোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অধিবেশনে যোগেশচন্দ্র ল’ কলেজ এবং যোগেশচন্দ্র চৌধুরী কলেজে সরস্বতী পুজোর ছবি দেখিয়ে মমতা পাল্টা বলেন, পুজো সুষ্ঠু ভাবে হলেও বিজেপি রাজনীতি করছে।

মমতা তাঁর বক্তৃতায় অভিযোগ করেন, বিজেপি মুসলিম লিগের মতো দলের সাহায্য নিয়ে ভোটে জেতে। তাঁর কথায়, ‘‘তোমাদের মুসলিম লিগের মতো দলকে দরকার হয় তৃণমূলকে হারাতে, অন্য দলকে হারাতে।’’ বক্তৃতায় এক বারও শুভেন্দুর নাম করেননি মমতা। তবে নানা বিশেষণ ব্যবহার করেছেন বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে। কখনও ‘বাবুসোনা’, কখনও ‘সোনাবাবা’। শুভেন্দুকে মমতা মনে করিয়ে দেন, তিনি হিন্দু ব্রাহ্মণ বাড়ির মেয়ে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিধানসভা কক্ষের বাইরের কর্মসূচিতে বিধায়কদের পরনে ছিল সাদা টি-শার্ট। যাতে স্বামী বিবেকানন্দের উদ্ধৃতি লেখা ছিল— ‘গর্ব করে বলো আমি হিন্দু’। মাথায় ছিল গেরুয়া পাগড়ি। সেই পাগড়ি পরানোর জন্য পেশাদার লোকও আনা হয়েছিল। যার পাল্টা মমতা বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দকে বুঝতে হলে শিকাগো বিশ্ব ধর্ম মহাসম্মেলনের বক্তৃতা শুনতে হবে।’’ মমতার ৮২ মিনিটের বক্তৃতার অধিকাংশ জুড়েই ছিল ‘হিন্দুত্ব’ নিয়ে শুভেন্দুদের অভিযোগের জবাব। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আশা করি বকধার্মিকদের যোগ্য জবাব দিতে পেরেছি। যারা ধর্ম নিয়ে বকবক করে, ধর্ম বেচে খায়, তাদের জবাব দিয়েছি।’’

মহাকুম্ভ এখন মৃত্যুকুম্ভ

মহাকুম্ভের অব্যবস্থা নিয়ে মঙ্গলবার ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বলছে নাকি ৩০ জন মারা গিয়েছে! হাজার হাজার মারা গিয়েছে। পবিত্র জল এখন বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। মৃতদেহ নিয়ে যারা ‘হাইপ’ তুলছেন আর কোটি কোটি টাকা কামাচ্ছেন, তাঁদের আমি ঘৃণা করি।’’ কুম্ভে গরিব মানুষ এবং ভিভিআইপিদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা নিয়েও সরব হন মমতা। উল্লেখ্য, সেই ভিভিআইপি জ়োনে কুম্ভস্নান সেরে এসে ব্যবস্থাপনার কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তৃণমূলেরই সাংসদ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার মঙ্গলবারের বক্তব্য রচনার উদ্দেশেও কি না, সেই প্রশ্নও আলোচিত হচ্ছে তৃণমূলের বিধায়কদের মধ্যে। তবে রচনা ছাড়াও তৃণমূলের অনেক নেতা-নেত্রী কুম্ভস্নান সেরে এসেছেন। দু’দিন আগেই প্রয়াগে ডুব দিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ তথা রাসবিহারীর তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমার। সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী এবং অভিনেতা কন্যা। যদিও রচনা ছাড়া তৃণমূলের কেউই যোগীর ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেননি। আর মমতা বলেছেন, ‘‘এই সব সিরিয়াস বিষয় নিয়ে এত হাইপ তুলতে নেই। প্রপার প্ল্যানিং (যথাযথ পরিকল্পনা) করতে হয়। মহাকুম্ভে এত লোক মারা গেল। ক’টা কমিশন করেছেন? এমনকি, আমার রাজ্যে যে ডেডবডি এসেছে, তাতে একটা ডেথ সার্টিফিকেট পর্যন্ত দেননি! এর পর তো বলবেন হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছে। যাতে ক্ষতিপূরণ দিতে না হয়।’’ প্রথমে মহাকুম্ভকে মৃত্যুকুম্ভ বললেও পরে মমতা বলেন, ‘‘আমি মহাকুম্ভকে শ্রদ্ধা করি। মা গঙ্গাকে শ্রদ্ধা করি’।’

জগন্নাথধাম আটকে দেখাও

দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে। গত মাসে তার প্রস্তুতি দেখে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই ঘোষিত যে, আগামী অক্ষয় তৃতীয়ার দিন মন্দিরের উদ্বোধন। মমতা সেই জগন্নাথধামের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘বলছে জগন্নাথধাম করতে দেবে না। বুকের পাটা থাকলে আটকে দেখাও! আমরা সর্বধর্ম সমন্বয়ে বিশ্বাস করি। তোমাদের মতো ধর্ম বেচে খাই না।’’ মমতা জানিয়েছেন, জগন্নাথধাম উদ্বোধনে রাজ্য সরকার কুম্ভের মতো কোনও ‘উন্মাদনা’ তৈরি করবে না।

মহার্ঘ ভাতা প্রসঙ্গে

রাজ্য বাজেটে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের আরও ৪ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়েছে, যা কার্যকর করা হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে। মমতা জানান, সিপিএম আমলে ৩৫ শতাংশ ডিএ দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা মাঝেমাঝে নাটক করে সরকারি কর্মচারীদের মাথা খারাপ করেন, তাঁদের জন্য বলছি, ‘‘২০১১ সাল থেকে ডিএ বাবদ ২০২৫-’২৬ সাল পর্যন্ত সরকারের খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ২ লক্ষ কোটি টাকা।’’ মমতা বোঝাতে চেয়েছেন, এক দিকে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না। সেই সমস্ত প্রকল্পের ভার বহন করছে রাজ্য। তার পরেও রাজ্য সরকার ওই পরিমাণ ডিএ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ যেমন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ডিএ-র সঙ্গে ফারাকের শতাংশের হিসাব কষেন, তা ‘অমূলক’।

নিশানায় জয়শঙ্কর

আমেরিকা থেকে যে ভাবে অবৈধবাসী ভারতীয়দের পায়ে শিকল বেঁধে বিমানে করে আনা হচ্ছে, তা নিয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে নিশানা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘মিস্টার জয়শঙ্কর! আপনি কি দেখছেন না? এটা কী হচ্ছে? এতে কি দেশের সম্মান থাকছে না আপনার সম্মান বাড়ছে?’’ তবে পাশাপাশিই আরও এক বার মমতা মনে করিয়েছেন, বৈদেশিক বিষয়ে কেন্দ্র যা অবস্থান নেবে, সেটাই তাঁর এবং তাঁর দলের অবস্থান। যেমন বলেছিলেন বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও। কিন্তু আমেরিকা থেকে অবৈধবাসী ভারতীয়দের ফেরানোর প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘এ সব নিয়ে আমি বলতাম না। কিন্তু আপনারা যখন আমার কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তখন আমাকেও বলতে হচ্ছে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}