Advertisement
E-Paper

জিএসটিতে বিশ্বাসভঙ্গ, মোদীকে চিঠি মমতার

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, কেন্দ্রীয় সরকারই ধার করে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৫:২১
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ছবি পিটিআই।

প্রসঙ্গ জিএসটি-র ক্ষতিপূরণ। আর তাকে হাতিয়ার করেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং রাজ্যগুলির সঙ্গে সম্পর্কের মূলে কুঠারাঘাত করার অভিযোগ তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চার পাতার চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘জিএসটি রূপায়ণ সারা বিশ্বের কাছে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সর্বোত্তম উদাহরণ। কিন্তু রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে কেন্দ্রের প্রতি রাজ্যগুলির বিশ্বাস যাতে না উঠে যায়, তা দেখুন।’

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব, কেন্দ্রীয় সরকারই ধার করে রাজ্যগুলিকে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিক। পরিবর্তে পাঁচ বছর পরেও কেন্দ্র যাতে সেস তুলতে পারে সে ব্যাপারে সহমত হতে পারে সমস্ত রাজ্য। যত দিন না কেন্দ্র এই ধার পুরোপুরি মেটাতে পারছে, তত দিন সেস চালু রাখার ব্যাপারেও রাজ্যগুলি সায় দিতে পারে। রাজ্যগুলির ঘাড়ে ঋণের বোঝা না-চাপিয়ে কেন্দ্রই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুক, এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও।

সম্প্রতি জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছিল, এ বছর জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৩ লক্ষ কোটি টাকা মেটাতে হবে। তার মধ্যে সেস বাবদ ৬৫ হাজার কোটি টাকা উঠেছে। বাকি থাকছে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রের হিসেবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ঘাটতির পরিমাণ হত ৯৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু করোনার কারণেই তা এই বিপুল আকার নিয়েছে। বৈঠকে নির্মলা বলেন, কেন্দ্রের টাকা নেই। ফলে ক্ষতিপূরণ মেটানো সম্ভব নয়। রাজ্যগুলি ৯৭ হাজার কোটি টাকা অথবা ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকার সবটাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার করুক।

আরও পড়ুন: আত্মহত্যায় তৃতীয় স্থান বাংলার, শহরে দ্বিতীয় আসানসোল

পঞ্জাব, দিল্লি, ছত্তীসগঢ়, তেলঙ্গানা, রাজস্থানের মতো রাজ্যও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবের সঙ্গে এক মত নয়। তাদের বক্তব্য, রাজ্যকে ধার নিতে হলে সুদের দায়ও রাজ্যের ঘাড়ে চাপবে। বরং কেন্দ্র ধার নিয়ে ক্ষতিপূরণ মেটাক, ঋণের বোঝা তারাই বহন করুক। কিন্তু কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণে ঘাটতির অংশটুকু ঋণ নিতে রাজি। বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এমন প্রস্তাব দেওয়ায় অনেকের ধারণা, অন্যান্য বিজেপি বা এনডিএ-শাসিত রাজ্যগুলিও কেন্দ্রের প্রস্তাবে সম্মতি দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে জিএসটি কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কেন্দ্র ক্ষতিপূরণের দায় রাজ্যগুলির ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার পথ বার করে নিতে পারে।

আরও পড়ুন: ১১ বছর পরে ফের কলকাতা থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ান

প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জিএসটি-র প্রশ্নে রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্র কার্যত বিশ্বাসভঙ্গ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা লিখেছেন, জিএসটি-র ফলে রাজ্যের কর বসানোর ক্ষমতা ৭০% চলে গিয়েছে। কেন্দ্র বলেছিল, রাজ্যের রাজস্ব আদায়ে যে ঘাটতি হবে, পাঁচ বছর ধরে তা বাধ্যতামূলক ভাবে তারা পূরণ করে দেবে। শুধু এই কারণেই রাজ্যগুলি জিএসটি মেনে নিয়েছিল। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন মোদী যে জিএসটি-র বিরোধিতা করেছিলেন, সে কথাও তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি আরও বলেছেন, ২০১৩-র ডিসেম্বরে জিএসটি-র বিরোধিতা করতে গিয়ে অরুণ জেটলি বলেছিলেন, বিজেপি একটাই কারণে জিএসটি-র বিরোধিতা করছে। কারণ তারা (তৎকালীন) কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশ্বাস করে না। কেন্দ্র আদৌ ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি পালন করবে কি না, সেই ভরসা তৈরি হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘এখন যেন অরুণজির সেই কথাগুলিই কানে বাজছে।’

প্রধানমন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, অনেক রাজ্য কর্মীদের বেতন দিতেই নাজেহাল। অনেকে পেনশনের টাকা জোগাতে পারছে না। করোনার কারণে গত ছ’মাসে চাষিদের বেহাল অবস্থা, পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজ হারিয়েছেন, অসংগঠিত ক্ষেত্রের কর্মীদের অবস্থা সঙ্গিন। এমন একটা সময়ে যেখানে রাজ্যগুলিকে অর্থ দিয়ে কেন্দ্রের সাহায্য করার কথা, সেখানে রাজ্যগুলির ঘাড়ে বাড়তি বোঝা চাপানো কি উচিত হচ্ছে? রাজ্যগুলির পক্ষে বাড়তি ঋণের বোঝা সামলানো সম্ভব নয়। তা হলে তাদের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।

Mamata Banerjee Narendra Modi GST
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy