দিল্লি আর বাংলার পরিস্থিতি এক নয়। এই বার্তা দিয়েই আগামী বিধানসভা ভোটের আগে দলের মনোবল ধরে রাখতে উদ্যোগী হলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়কদের বৈঠকে তাঁর বক্তব্য, ‘এখানে মানুষ আমাদের ভালবাসে’।
আগামী বছর এ রাজ্যে বিধানসভা ভোট। কিন্তু দিল্লির বিধানসভা ভোটে আম আদমি পার্টির (আপ) পরাজয়ের পরে নতুন করে অঙ্ক কষতে শুরু করেছে বিজেপি। শতাংশের হিসেবে দিল্লিতে বিজেপি ও আপের ফারাক কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের থেকে কম। সেই অঙ্ক তুলে ধরে নানা স্তরে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূলও।
বিধানসভায় তৃণমূলের পরিষদীয় দলের বৈঠকে সোমবার বিষয়টি উত্থাপন করেন মমতাই। তবে ফল প্রকাশের পর এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি তিনি। সূত্রের খবর, বৈঠকে বিধায়কদের আশ্বস্ত করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘ও সব ভাবার দরকার নেই। ২৬-এ আমরা দুই-তৃতীয়াংশ আসনপেয়ে ক্ষমতায় ফিরব’। দলের এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিল্লির প্রেক্ষাপটে নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিকে ভাবতে নারাজ। কারণ এখানে কংগ্রেসের দিল্লির মতো জায়গাও নেই।’’
রাজধানী দিল্লিতে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দুই শরিক কংগ্রেস ও আপের মধ্যে আসন সমঝোতা হয়নি। বরং, পরস্পরকে আক্রমণ করে মুখোমুখি লড়াই করেছে তারা। আগের বিধানসভা ও শেষ লোকসভা ভোটে একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এ রাজ্যেও। এখানে সিপিএমের সঙ্গে রফা করেই একই সঙ্গে তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। তাতে ‘ফল’ না হলেও দিল্লির ভোটের পরে সতর্কই থাকতে চাইছে তৃণমূল। দলের বৈঠকে এ দিন মমতা বলেছেন, ‘দিল্লিতে কংগ্রেস ও আপের বোঝাপড়া হল না। হরিয়ানাতেও তা-ই হয়েছিল।’ তাদের ভোটে ভাগে বিজেপির জয় নিশ্চিত হয়েছে, এই ইঙ্গিত দিয়ে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘তারা ( কংগ্রেস ও আপ) নমনীয় হলে এই ফল হত না’।
দিল্লির ভোটে আপের পাশেই দাঁড়িয়েছিল তৃণমূল। দলের একাধিক সাংসদ দিল্লিতে আপের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারও করেছিলেন। তবে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দল হেরে যাওয়ার পরে তৃণমূল নেত্রীর ‘নীরবতা’কে রাজনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। দলীয় সূত্রে খবর, প্রকাশ্যে দিল্লির ভোটের ফল নিয়ে কিছু না বললেও ঘরোয়া আলোচনায় মমতা বেশ কিছু অস্বচ্ছতাকে চিহ্নিত করেছেন। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। ভোটার তালিকা নিয়েও বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লির ভোট নিয়ে সংশয় রয়েছে মমতার মনে।
তবে দলীয় বৈঠকে মমতা যে বার্তা দিয়েছেন, তা নিয়েই বিরোধীরা সরব হয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মন্তব্য, ‘‘কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তো এখানে ভোট কেটে তৃণমূলেরই সুবিধা করতে চেয়েছেন। নিজেদের দলের লড়াকু নেতা অধীর চৌধুরীর ভোটে প্রচার করতে রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা আসেননি, যাতে তৃণমূলের বহিরাগত প্রার্থী ইউসুফ পাঠান জিততে পারেন!’’ কংগ্রেসের তরফে পাল্টা সরব হয়ে সৌম্য আইচ রায়, সুমন রায়চৌধুরীরা বলেছেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রীর পরামর্শ মেনেই আপ নিজেরা লড়তে নেমেছিল, কংগ্রেসের দাদাগিরি মানব না বলে! এখন নীতিকথা শুনিয়ে কী হবে? আর বিজেপির কৃপায় এখানে তৃণমূলের মাথারা যে জেলযাত্রা এড়াচ্ছেন, শুভেন্দু আগে তার জবাব দিন!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এখানে চিন্তা না করতে বলছেন দলকে। কারণ, তিনি জানেন আরএসএস-বিজেপি তাঁদের পিছনে আছে!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)