Advertisement
E-Paper

সবই ছিল, তবু তাল কাটল সভায়

ভোটের আগে বেশ তৈরি হয়েই বক্তৃতা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর দেড়টা নাগাদ বোতলবন্দি জলে দু’বার গলা ভিজিয়ে বিশ্ববাংলার ব্র্যান্ডিং নিয়ে সবে কথা শুরু হয়েছিল। তাল কাটল। মেজাজ হারালেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বেশিক্ষণ নয়। সামলে নিয়ে ফিরে এলেন রাজ্য সরকারের সাফল্যে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৪
নয়াগ্রামের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

নয়াগ্রামের সভায় মুখ্যমন্ত্রী। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ভোটের আগে বেশ তৈরি হয়েই বক্তৃতা শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুর দেড়টা নাগাদ বোতলবন্দি জলে দু’বার গলা ভিজিয়ে বিশ্ববাংলার ব্র্যান্ডিং নিয়ে সবে কথা শুরু হয়েছিল। তাল কাটল। মেজাজ হারালেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বেশিক্ষণ নয়। সামলে নিয়ে ফিরে এলেন রাজ্য সরকারের সাফল্যে। কিন্তু অঙ্গনওয়াড়ি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলে বসলেন, ‘‘জেনে রাখুন, কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের টাকা নেই পয়সা নেই, তবু চালাচ্ছি। আমি চাই না অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ হয়ে যাক। কারণ আপনারা অনেক কাজ করেন।”

এ বিষয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “মা-মানুষ পাশে নেই, পায়ের তলায় মাটিও নেই। মেজাজ হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সভায় মিথ্যাভাষণ করেছেন। বলছেন, অঙ্গনওয়াড়ির বরাদ্দ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে, উনি নাকি সেই প্রকল্প চালাচ্ছেন।”

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নয়াগ্রামের সভামঞ্চে বক্তব্য রাখছেন, ঠিক তখনই দর্শকদের মধ্যে কয়েকজন অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী তাঁদের দাবি-দাওয়া জানাতে চাইছিলেন। তাঁদের হাতে ছিল বাদামি খাম এবং ‘নয়াগ্রাম সুসংহত শিশু বিকাশ সেবা প্রকল্প’-এর ব্যানার। মুখ্যমন্ত্রী যখন উন্নয়নের ফিরিস্তি দিয়ে জানাচ্ছিলেন, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সহায়িকা এবং সিভিক ভল্যান্টিয়ার, গ্রিন পুলিশদের সাইকেল দেওয়া হবে। তখনই দর্শক-শ্রোতার আসনের বেশ কিছু মহিলা উঠে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন। জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ মঞ্চ থেকে নেমে তাঁদের ফেরানোর চেষ্টা করতে থাকেন। চোখ কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও।

এ পর্যন্ত তবু ঠিক ছিল। গোল বাঁধল যখন অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী-সহায়িকাদের কয়েকজন ‘দিদি...দিদি’ বলে চিৎকার শুরু করলেন। ওই মহিলাদের প্রথমে বসে পড়তে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কাজ না হওয়ায় গলা চড়িয়ে তিনি বলে ওঠেন, “আপনারা একটা পোস্টার নিয়ে বসে আছেন। চোখের সামনে একটা ফেস্টুন নিয়ে চারজন দাঁড়িয়ে রয়েছে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কী করছে?” কিন্তু ধমকে ফল হয় উল্টো। আরও কিছু মহিলা দর্শক বেরিয়ে যান। পুলিশ কর্মীরাও ওই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের সরিয়ে দেন। এরপরই সুর নরম করে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “বললাম তো সাইকেল দেওয়া হবে। জেনে রাখুন, কেন্দ্রীয় সরকার আপনাদের স্কিম বন্ধ করে দিয়েছে।”

সারা বাংলা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকা ইউনিয়নের ঝাড়গ্রাম মহকুমা শাখার সম্পাদিকা কৃষ্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের ৬ দফা দাবি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কাজ না হওয়ায় এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন কর্মীরা। কিন্তু তিনি তো কথাই শুনতে চাইলেন না। উল্টে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিলেন।”

এ দিন নয়াগ্রামের সুবর্ণরেখায় নয়াগ্রাম-কেশিয়াড়ি সংযোগকারী জঙ্গলকন্যা সেতুর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে ৬০৫ কোটি টাকা খরচে তৈরি হওয়া ১৩৬টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১১১ কোটি টাকার ৩২ টি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তিনি। প্রায় ১৭ হাজার উপভোক্তার হাতে নানা পরিষেবা তুলে দেন।

সভায় হাজির ছিলেন রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঝাড়গ্রাম থেকে কপ্টারে এসেছিলেন দুই সাংসদ মুকুল রায় ও শুভেন্দু অধিকারী। মঞ্চে ছিলেন জেলার শাসক দলের সমস্ত জনপ্রতিনিধি ও নেতা-নেত্রীরা। ছিলেন মেদিনীপুরের সাংসদ সন্ধ্যা রায়ও। দলীয় পতাকা লাগানো শয়ে শয়ে বাস-সহ নানা ধরনের যানবাহনে হাজার হাজার লোক নিয়ে আসা হয়েছিল। জায়গা না পেয়ে অনেকে দূরে রাস্তায় এমনকী সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

তবু মুখ্যমন্ত্রীর শরীরী ভাষায় ছিল ছন্দহীন ভাব। পরিষেবা পেয়ে অনেকেই তাঁকে প্রণাম করেছেন। কিন্তু অমনযোগী ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তিনি জানাতে ভোলেননি, ক্ষমতায় এসে ২০১১ সালে জঙ্গলমহলের প্রথম প্রশাসনিকসভাটি করেছিলেন এই নয়াগ্রামেই। শুভেন্দু-মুকুলের ভারসাম্যের রাজনীতিতে এ দিন অবশ্য শুভেন্দু এগিয়ে গেলেন। শুরুতে একবার মুকুল আর শুভেন্দুর নাম বললেন বটে, তবে বক্তৃতায় আরও দু’বার উচ্চারিত হল শুধু শুভেন্দুর নাম— নয়াগ্রামের সেতু হওয়ায় শুভেন্দুর কাঁথির বাড়িতে যাতায়াতের সুবিধা ও শুভেন্দুর এলাকায় একটি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হওয়া প্রসঙ্গে।

প্রশাসনিক মঞ্চ থেকে জনতার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, “মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। আমরাই জঙ্গলমহলে শান্তি এনেছি। ৩৪ বছরে না হওয়া উন্নয়ন সাড়ে চার বছরে করেছি।” আশ্বাস দিয়ে বলেন, চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এমন ব্যবস্থা করছি যাতে তাদের মাথা নিচু না করতে হয়। দাবি করেন, রাজ্যে ৬৮ লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান হয়ে গিয়েছে। আরও ২ লক্ষের কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত হচ্ছে।

তবে এ দিনের সভা প্রসঙ্গে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রদীপ সরকার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানেন তিনি যা বলেন, তার সঙ্গে বাস্তবের আসমান-জমিন ফারাক। তাই নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে। মুখ্যমন্ত্রী ততই মেজাজ হারাচ্ছেন।”

MostReadStories
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy