Advertisement
E-Paper

কোষাগারে টান, নবান্নের মেনুতে কমছে সব্জি, মাংসের বদলে মাছ

নবান্নে কোনও বৈঠক থাকলে এলাহি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকত। আমিষ যাঁদের পছন্দ, তাঁদের জন্য থাকত তিন-চার রকমের মাঝের পদ, মুরগি, খাসি। নিরামিষ পদের সংখ্যাও হত অনেক বেশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ১৭:৩৪
সরকারি খরচে খাবারের এলাহি আয়োজন আর চলবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সরকারি খরচে খাবারের এলাহি আয়োজন আর চলবে না বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভাঁড়ারে টান। অবস্থা সামাল দিতে নবান্নে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেই বৈঠকের ফাঁকে মধ্যাহ্নভোজ সারতে গিয়েই মন্ত্রী-আমলারা টের পেয়ে গেলেন, বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই ব্যয়সঙ্কোচে শুরু হয়ে গিয়েছে। মেনুকার্ডে ঢালাও মাছ-মাংসের উপস্থিতি একেবারেই অমিল এ দিন। বৈঠক শেষে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিপুল ঋণের বোঝা রয়েছে রাজ্যের ঘাড়ে। তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে সরকারি কর্মীদের মহার্ঘ ভাতার (ডিএ) খরচ। উন্নয়ন এবং সরকারি পরিষেবা বহাল রাখতে তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ ছাঁটবে সরকার।

মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে এ দিন উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা, বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিব, সচিব এবং যুগ্ম সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় শ’তিনেক। সকলের জন্যই মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের মেনুকার্ড যতটা সম্ভব সাদামাটাই রাখার চেষ্টা হয়েছে এ দিন। ভাত, শুক্তো, সোনা মুগের ডাল, আলু ভাজা, আলু-পটলের তরকারি, নবরত্ন কারি, পনির— এই ছিল মেনুতে। আমিষ বলতে ছিল এক রকম মাছের পদ। শেষ পাতে চাটনি-পাঁপড়।

আগে কিন্তু নবান্নে কোনও বৈঠক থাকলে এলাহি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন থাকত। আমিষ যাঁদের পছন্দ, তাঁদের জন্য থাকত তিন-চার রকমের মাছের পদ, মুরগি, খাসি। নিরামিষ পদের সংখ্যাও হত অনেক বেশি। কিন্তু সরকারি খরচে ওই রকম এলাহি আয়োজন আর চলবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জানান। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি টাকা মানে জনগণের টাকা। ওই টাকায় কোনও বিলাসিতা করা যাবে না।’’

দেখুন ভিডিয়ো

বৈঠক সেরে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান রাজ্যের মাথায় বিপুল দেনার বোঝা আগে থেকেই রয়েছে, যা এখনও টানতে হচ্ছে। তার মধ্যে কেন্দ্র বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে নানা প্রকল্পে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে গোটা প্রকল্পই ছেঁটে দেওয়া হচ্ছে, অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর। তাই প্রত্যেকটা পয়সা খুব হিসেব করে খরচ করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২ লক্ষ ২৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ আমরা শোধ করা হয়েছে। প্রতি বছর ৪৬ হাজার কোটি টাকা করে মেটানোর দায় রয়েছে রাজ্যের, জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের নতুন হাতে ডিএ দিতে বছরে অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে তিনি জানান। কিন্তু কেন্দ্র টাকা দেওয়া বাড়াচ্ছে না, বরং বরাদ্দ ছেঁটে দিচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্পে। দাবি মুখ্যমন্ত্রীর। সেই কারণেই বৈঠক ডাকা হয়েছিল বলে তিনি জানান। এ বার থেকে যে কোনও প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করার সময় খুব পরিকল্পনার ভিত্তিতে করতে হবে, যাতে অপচয় একাবেরই না হয়— রাজ্য প্রশাসনকে বৈঠকে এই বার্তাই বৃহস্পতিবার দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন
ছাত্র আন্দোলন কই, কদর শুধু দাদাগিরির

সম্পদের সুচারু ব্যবহার, অপচয় রোধ করা, নিখুঁত পরিকল্পনা, যে কোনও খরচের চুলচেরা বিশ্লেষণ এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সরকারি কর্মীদের আরও দক্ষ করে তোলা— এই পথেই চলতে হবে রাজ্য প্রশাসনকে। নির্দেশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘অনেক রকম ভাবে অর্থের অপচয় হয়। অনেক সময় টেন্ডারে ত্রুটি থাকে। ফলে কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার পরে তা বন্ধ করে দিয়ে আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। এ সব যাতে না হয়, তা দেখতে বলেছি।’’

আরও পড়ুন
ভর্তিজটে সরানো হল টিএমসিপির সভানেত্রীকে

যে সব দফতর বা প্রতিষ্ঠান টাকা খরচ করার মতো পরিস্থিতিতে নেই, সেই সব দফতর পা প্রতিষ্ঠানকে বুঝেশুনে টাকা দিতে হবে, বৈঠকে বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বরাদ্দ টাকা কিছুটা খরচ হবে, বাকিটা দিনের পর দিন পড়ে থাকবে, এমন যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যে সব প্রকল্পে টাকা খরচ হচ্ছে না বা পড়ে রয়েছে, সে সব প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করে দিয়ে অতিরিক্ত টাকা ফিরিয়ে নেওয়া হবে এবং অন্য কোনও প্রকল্পে কাজে লাগানো হবে। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এমনও জানিয়েছেন। তবে উন্নয়নের কাজ বা সরকারি পরিষেবায় তিনি টান পড়তে দেবেন না, আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অর্থের অপচয় রুখতে হবে, কিন্তু সাধারণ মানুষ যে সব পরিষেবা সরকারের কাছ থেকে পান, সেই সব পরিষেবার জন্য অর্থ বরাদ্দ করতে যেন কোনও কার্পণ্য না হয়। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এমনই বার্তা দিয়েছেন বলে খবর।

Mamata Banerjee Nabanna Video মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy