রেড রোডে ইদের নমাজের অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
ইদের ভাষণেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে বার্তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ‘ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই’— রেড রোডে ইদের নমাজের মঞ্চ থেকেই বুধবার একথাই বার বার বললেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও রাজনৈতিক দলের নাম করলেন না। কিন্তু বললেন, ‘‘যত দ্রুত ইভিএম দখল করেছে, তত দ্রুত চলেও যাবে।’’
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে রেড রোডে ইদের নমাজের অনুষ্ঠানে প্রতি বছরই যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এ বার তাঁর ভাষণের বয়ান কিছুটা ব্যতিক্রমী শুনিয়েছে। অন্যান্য বছর শুধুমাত্র সামাজিক বিষয় নিয়েই কথা বলেন মমতা। সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছা জানান। কিন্তু এ বছর তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে রাজনীতির ছায়া ছিল গাঢ়।
এ দিনও শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়ার মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ। তিনি বলেন, ‘‘আপনাদের পরিবার, আপনাদের ভবিষ্যৎ, আপনাদের সমাজ, আপনাদের সংস্কার, আপনার রাজ্য, আপনার দেশ, সারা বিশ্বে ইনশাল্লাহ আপনাদের জন্য ইদ খুশির হয়ে উঠুক।’’
আরও পড়ুন: নিমতায় তৃণমূল নেতা খুনে আটক ২, আগুন বিজেপি নেতার বাড়িতে
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ চলাকালীন বৃষ্টিও চলছিল কয়েক পশলা। বৃষ্টি দেখেই স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘‘এই বৃষ্টি শান্তির বৃষ্টি, এই বৃষ্টি বলছে যে, আকাশও আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। আপনারা ভয় পাবেন না। আপনারা ভাল থাকুন, আপনারা এগিয়ে চলুন, আপনারা মানবতার জন্য কাজ করুন।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ‘ভয় পাবেন না’ মন্তব্য নিয়েই নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাশে নিয়ে এ দিন রেড রোডের অনুষ্ঠানে নাতিদীর্ঘ ভাষণে অনেক বারই ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কারা ভয় পাবেন, কাকে ভয় পাবেন, কেনই বা পাবেন? সে সব প্রসঙ্গে ভেঙে কিছু মমতা বলেননি। তার জেরেই গুঞ্জন আরও বেড়েছে নানা শিবিরে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘এই ইদ আপনাদের জীবনে নতুন সকাল আনবে। কেউ রুখতে পারবে না। কেউ যদি বাধা দেন, তা হলে তার জন্য দুঃখিত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আপনারা একটা কথা অবশ্যই বুঝবেন, আপনারা বাংলার বিষয়ে যে সাহায্য করেছেন, যে আশীর্বাদ-শুভেচ্ছা দিয়েছেন, তার জন্য বাংলার পরিবারের তরফ থেকে আমি কৃতজ্ঞ। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’’
আরও পড়ুন: সারদার পর নারদ কাণ্ডেও সক্রিয় সিবিআই, আইপিএস অফিসার মির্জাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘একসঙ্গে থাকার জন্য, একতার জন্য, ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য, দেশের পরম্পরার জন্য, আমাদের রাজ্যের পরম্পরার জন্য... আপনারা সব সময় সাহায্য করেন।’’ এর পরে আরও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যদি আপনারা সবাই সঙ্গে থকেন, তা হলে দেখবেন আমরা কী ভাবে লড়ি। আমরা লড়ব।ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’’ তিনি বলেন, ‘‘যে ভয় পায়, সে মরে। যে লড়ে, সেই সফল হয়।’’
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের সিংহভাগটাই ছিল হিন্দিতে। তিনি বলেন, ‘‘সবাই আমরা এক। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। যো হামসে টকরায়েগা, উয়ো চুরচুর হো জায়েগা।’’
আরও পড়ুন: শিশুমৃত্যু, ডাক্তারকে বাড়িতে ডেকে বেধড়ক মার গার্ডেনরিচে
শুরুর দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে সামাজিক শুভেচ্ছা বার্তার আড়ালে ছিল রাজনৈতিক বার্তাটা। শেষ দিকে সেই আড়ালটাও সরিয়ে দেন মমতা নিজেই। কোনও দল বা ব্যক্তির নাম করেননি তিনি। কিন্তু বলেন, ‘‘ইতনা ডরনেকা বাত নেহি হ্যায়... সূর্যের তেজ কখনও কখনও খুব বেড়ে যায়। কিন্তু পরে কমেও যায়... টাইম বিইং, টাইম বিইং... যত দ্রুত ইভিএম ক্যাপচার করেছিল, তত দ্রুত চলেও যাবে। ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যেই এ দিন স্পষ্ট হয়ে যায় তাঁর রাজনৈতিক ইঙ্গিতটা। ভোটের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার বলছেন, ইভিএমে কারচুপি হয়েছে। তাই ইভিএম দখলের কথা উল্লেখ করে এ দিন যে তিনি বিজেপি-র দিকেই ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন, তা বুঝতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অসুবিধা হয়নি। বিজেপির নাম না করলেও, ইদের জমায়েতে গিয়ে যে তিনি বিজেপিকে ভয় না পাওয়ার বার্তাই দিতে চেয়েছেন, তাও অনেকের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy