স্কুলের বাচ্চাদের ক্লাস করাতে গিয়েছিলেন পুলিশ অফিসারেরা। সাইবার সচেতনতার ক্লাস। সেই ক্লাস শেষের পর ঘর থেকে বেরোতেই ‘স্যর, স্যর’ বলতে বলতে অফিসারদের ঘিরে ধরে জনাপাঁচেক মেয়ে। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল তারা। কিন্তু সকলে একসঙ্গে বলতে থাকায় কিছুই বোধগম্য হচ্ছিল না অফিসারদের। এমন সময়েই কেঁদে ফেলে এক ছাত্রী। কাঁদতে কাঁদতে সে বলতে থাকে, ‘‘স্যর, আমার এক দাদাও এ রকম করে আমার সঙ্গে। আমার গায়ে খারাপ ভাবে হাত দেয়!’’
পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর মুখে এ কথা শুনেই থমকে গিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার পুলিশ অফিসারেরা। মেয়েটিকে কান্না থামিয়ে ঘটনাটি গুছিয়ে বলতে বলা হয়। তাতে মেয়েটি যা বলে, তা শুনে স্তম্ভিত হয়ে যান অফিসারেরা। তড়িঘড়িই বিষয়টি স্কুলের প্রধানশিক্ষিকাকে জানানো হয়। এর পর প্রধানশিক্ষিকাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতেই পঞ্চম শ্রেণির সেই ছাত্রীর পাড়াতুতো দাদাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে বালিকার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হয়। তাতে যৌন নিগ্রহের প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার মাজিদ ইকবাল। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়া এক পুলিশ আধিকারিকের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেছিল। স্কুলের প্রধানশিক্ষিকার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা হয়েছে। তাতে মেয়েটির উপর যৌন হেনস্থার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।’’
সরকারি পরিকল্পনা অনুসারেই স্কুলে স্কুলে সাইবার সচেতনতা এবং যৌন হেনস্থা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ক্লাস নিয়ে থাকেন পুলিশ আধিকারিকেরা। সে রকমই একটি কর্মশালা চলাকালীন বহরমপুরের একটি বাংলা মাধ্যম স্কুলে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্কুলের প্রধানশিক্ষিকার অভিযোগের ভিত্তিতে পকসো ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। এর পরেই স্কুলছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে যাওয়া হয়। কিন্তু সেই সময় বাড়িতে ছিলেন না অভিযুক্ত। পরে তাঁকে তাঁর দিদির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়।
ধৃত সোমবার জেলার পকসো আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক ধৃতকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।