চিকিৎসাধীন: জখম ভবতোষ বাড়ুই। নিজস্ব চিত্র
সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এসে লোকের চোখে ‘হিরো’ ভবতোষ বাড়ুই।
মাঝবয়সি মানুষটা এখনও চিকিৎসাধীন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে। দক্ষিণরায়ের মুখ থেকে ফিরে তাঁর উপলব্ধি, ‘‘মনের জোর, বুঝলেন... স্রেফ মনের জোরে রক্ষা পেলাম এ যাত্রা।’’
শনিবার সকালে বাঘনা রেঞ্জের ঝিলা ১ জঙ্গলের কাছে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন সুন্দরবন কোস্টাল থানার ৪ নম্বর ছোট মোল্লাখালির বাসিন্দা ভবতোষ আর তাঁর চার সঙ্গী। সড়কখালি জোড়াখালে নৌকো থেকে নেমে জাল পাতছিলেন। আচমকাই ঘন সবুজ বনের মধ্যে থেকে বাঘ বেরিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভবতোষের উপরে। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখে বাকিরা দিশাহারা। দু’জন জলে ঝাঁপ দেন। তার পর হাঁচড়পাঁচড় করে উঠে পড়েন গাছে।
খালপাড়ে তখন চলছে বাঘে-মানুষে টানাটানি। ভবতোষ বুঝে যান, বাঘের মুখ থেকে ছাড়া পাওয়ার একটাই রাস্তা— পাল্টা আক্রমণ। তাঁর সঙ্গীরা জানিয়েছেন, বাঘের মুখে হাত ঢুকিয়ে জিভ টেনে ধরেছিলেন ভবতোষ। আর এক হাত দিয়ে গলা টিপে ধরেন। ঝাপটাঝাপটি চলতে থাকে। দু’জনে জলে পড়ে যান। বাঘ বুঝে যায়, কঠিন শিকারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। একটা সময় হুঙ্কার ছাড়তে ছাড়তে জঙ্গলে সরে পড়ে।
ঝন্টু বাড়ুই, অরবিন্দ মণ্ডল, প্রতীশ মাঝি, হরিপদ মাঝিরা তখনও নিরাপদ দূরত্বে। খানিকটা সময় কাটার পরে যখন সকলে বুঝে যান, এলাকা ছেড়েছে দক্ষিণরায়।
দু’টো হাত তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছে ভবতোষের। ছোটমোল্লাখালি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখান থেকে গোসাবা হাসপাতাল। পরে পাঠানো হয় ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের এক আধিকারিক অনিন্দ্য গুহ ঠাকুর বলেন, ‘‘এমন একটি ঘটনার কথা শুনেছি। কী ঘটেছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ওই মৎস্যজীবী দলটির কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। এমন এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়া ঠিক হয়নি।’’ কিন্তু সে সব এখন
মাথায় নেই ঝন্টু, অরবিন্দদের। ‘ভবদা’র কেরামতি দেখে মুগ্ধ তাঁরা। বললেন, ‘‘কলজের জোর আছে বটে। এ গল্প অনেক দিন পর্যন্ত লোকের মুখে মুখে ফিরবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy