Advertisement
E-Paper

কাকু থেকে ডাকু! দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের ডাকনামের রমরমা, এখনও পর্যন্ত পাঁচ নাম সর্বাধিক আলোচনায়

অনেকের ডাকনাম আগে থেকেই পরিচিত ছিল। কারও আবার নতুন করে তৈরি হয়েছে। শুধু ডাকনাম নয়, দুর্নীতির তদন্তে উঠে এসেছে ডায়েরিতে লেখা সাংকেতিক নামও। যা আদালতেও উল্লিখিত হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১১:০২
Many of those accused of corruption in West Bengal are known by nicknames

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অমর্ত্য সেনের ডাকনাম ‘বাবলু’। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ডাকনাম ‘বাচ্চু’। কিন্তু সে সব নামে তাঁদের সম্বোধন করেন, এমন মানুষ বিরল। আমজনতার মধ্যেও সে সব নাম কার্যত অপরিচিত। কিন্তু গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিবিধ দুর্নীতিতে যাঁদের নাম জড়িয়েছে, ঘটনাচক্রে, তাঁদের অনেকের ডাকনামেই বেশি নামডাক! এখনও পর্যন্ত এমন পাঁচটি ডাকনাম নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলেছে। চলছে। ভবিষ্যতেও চলবে। তাতে যেমন ‘কাকু’ আছে, তেমনই আছে ‘ডাকু’।

প্রথম ডাকনাম প্রকাশ্যে আসে কয়লাপাচার সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলায়। পুরুলিয়ার ব্যবসায়ী অনুপ মাঝি ওরফে ‘লালা’। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ‘অনুপ’ নাম উবে গিয়েছে। ‘লালা’ই বেশি উচ্চারিত। সে বিরোধী নেতাদের সমালোচনায় হোক বা খবরে। এমনকি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাও আদালতে অনুপকে ‘লালা’ বলেই উল্লেখ করত। আপাতত লালা সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ নিয়ে গ্রেফতারি এড়িয়ে রয়েছেন।

বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল জেলায় ‘কেষ্টদা’ হিসেবেই পরিচিত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে ‘কেষ্ট’ বলেই ডাকেন। গরুপাচার মামলায় তাঁর গ্রেফতারির পর থেকে তাঁকে ডাকনামেই বেশি ডাকা হচয়ে থাকে। অনুব্রত এসএসকেএমে ভর্তি থাকার পর্বে যখন তাঁর নানাবিধ অসুখ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল, তখন অনেকেই বলতেন, কষ্টে কেষ্ট! আগে অনুব্রতের ডাকনামটি দলীয় পরিসরে আবদ্ধ থাকলেও এখন সর্বজনীন।

তৃতীয় যে নামটি নিয়ে বাংলা আন্দোলিত, সেটি হল ‘কালীঘাটের কাকু’। অথবা শু‌ধু ‘কাকু’। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের কর্মচারী সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র এখন ‘কাকু’ বলেই সাধারণ্যে পরিচিত। নিয়োগ দুর্নীতিতে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তবে ‘কালীঘাটের কাকু’ তাঁর ডাকনাম নয়। এটি তৈরি করা। প্রথম নামটি শোনা গিয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তাপস মণ্ডলের মুখে। তাপস একদিন আদালতের বাইরে দাবি করেছিলেন, কুন্তল ঘোষ তাঁর থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছেন এই বলে যে, সে টাকা তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’কে দেবেন। তার পর খোঁজ করে জানা যায়, ‘কালীঘাটের কাকু’ হলেন সুজয়কৃষ্ণ। সম্প্রতি যাঁর কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা নিয়ে মহানাটক দেখেছে রাজ্য রাজনীতি। রসিকজনেরা কেউ কেউ বলেছেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পরে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বর নিয়ে এত আন্দোলিত হয়েছে বাঙালি! সুজয়কৃষ্ণ আপাতত ‘কালীঘাটের কাকু’ অথবা ‘কাকু’ নামেই খ্যাত।

জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দলীয় পরিসরে চিরকালই ‘বালু’ নামে পরিচিত। মমতাও তাঁকে ঘরোয়া অনুষ্ঠান বা প্রকাশ্য কর্মসূচিতে ‘বালু’ বলেই সম্বোধন করতেন। এখনও করেন। তবে রেশন দুর্নীতি মামলায় তাঁর গ্রেফতারির পর নতুন করে ‘বালু’ নামটি নিয়ে আলোচনা বেড়েছে।

সাম্প্রতিক কালে ডাকনামের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন ‘ডাকু’। রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তের সূত্রে গ্রেফতার হয়েছেন বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য। যিনি জেলার রাজনীতিতে ‘ডাকু’ বলেই পরিচিত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যে সব চিঠিপত্র চালাচালির কথা উল্লেখ করেছে, সেখানেও ‘ডাকু’, ‘বালুদা’ ইত্যাদি রয়েছে।

বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় ধৃত অন্যদেরও ডাকনাম রয়েছে। কিন্তু তা খুব একটা জানাজানি হয়নি। তাঁদের কেউ ওই সব নামে ডাকেনও না। যেমন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম কার্তিক মাসে হওয়ার কারণে তাঁর ডাকনাম ‘কাতু’। কিন্তু তাঁর ওই নাম তাঁর সমস্ত ঘনিষ্ঠেরাও জানেন না। অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যার বাড়ির নাম ‘রুবাই’। সেটিও প্রায় সকলেরই অজ্ঞাত। পাশাপাশিই, আবার বিবিধ দুর্নীতির তদন্তে বা খোঁজখবর করতে গিয়ে নানাবিধ সাঙ্কেতিক নামেরও খোঁজ মিলেছে। যেমন গরুপাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতের দেহরক্ষী শেখ সহগল হোসেনের নাম নাকি এনামুল হকের ডায়েরিতে ‘সাইকেল’ বলে লেখা ছিল। আদালতে তেমনই দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। যে সমস্ত ডাকনাম নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে, তার মধ্যে শেষেরটিই যে সবচেয়ে ‘অভিনব’, তা অবশ্য তদন্তকারীদের একাংশও স্বীকার করেন।

Kalighater Kaku lala Recruitment Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy