E-Paper

সামনে আসছে ‘নিগ্রহের’ কথা

সন্দেশখালিতে সামগ্রিক ভাবে অভিযোগ, সেখানকার অন্তত ২০০ পরিবারকে পথে বসিয়েছেন শাহজাহান। চার বছর আগে এক লপ্তে চার পরিবারের থেকে ৭০ বিঘা জমি জোর করে লিখিয়ে নেন শাহজাহান, এমন অভিযোগও মিলেছে।

নবেন্দু ঘোষ , ঋষি চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:৫৫
Shahjahan Sheikh

শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।

‘শিষ্য’ বেপাত্তা। ‘গুরু’ও চুপ।

চার দিন পার। খোঁজ মেলেনি সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা’ শেখ শাহজাহানের। তিনি এলাকায় না থাকলেও তাঁর ভয় এখনও বিদ্যমান। তবে, সন্তর্পণে মুখ খুলছেন কেউ কেউ। নাম না-প্রকাশের শর্তে বলছেন শাহজাহানের ‘অত্যাচারের’ কাহিনি।

সেই দলে অবশ্য মোসলেম শেখ নেই। ২০০৬ সালে মোসলেম ছিলেন সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান। অনেকেই বলছেন, তাঁর হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ শাহজাহানের। পরে মোসলেম তৃণমূলে আসেন। গত শুক্রবার শাহজাহানের বাড়ির কাছে যখন ইডি আধিকারিক ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে হামলা হচ্ছিল, মোসলেম সরবেড়িয়াতেই ছিলেন। তবে, ওই ঘটনা বা তাঁর ‘শিষ্য’ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হলেন না।

সাহস দেখালেন এক মহিলা। ১৮ বছর আগে তাঁদের জমি শাহজাহান জোর করে নিয়ে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সে দিনের কথা তুলে ডুকরে কেঁদে ওঠেন বছর চল্লিশের ওই মহিলা। তার পরেই বলেন, ‘‘ওই অত্যাচারীকে ফাঁসি দিলেও রাগ মিটবে না।’’ ওই মহিলা জানান, তাঁরা কংগ্রেসি পরিবার। ২০০৬ সালে এক দিন জনা দশেক সঙ্গীকে নিয়ে শাহজাহান দুপুরে তাঁদের বাড়িতে হাজির হন। অভিযোগ, জমি দিতে রাজি না হওয়ায় রাতে দলবল নিয়ে পরিবারের শিশু ও মহিলাদের টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে বেঁধে মারধর করেছিলেন শাহজাহান। সাত বিঘা জমি ওই রাতেই তিনি লিখিয়ে নেন বলেও ওই মহিলার দাবি।

সন্দেশখালিতে সামগ্রিক ভাবে অভিযোগ, সেখানকার অন্তত ২০০ পরিবারকে পথে বসিয়েছেন শাহজাহান। চার বছর আগে এক লপ্তে চার পরিবারের থেকে ৭০ বিঘা জমি জোর করে লিখিয়ে নেন শাহজাহান, এমন অভিযোগও মিলেছে। পরিবারগুলির অভিযোগ, জমির বিনিময়ে এক টাকাও মেলেনি। যাঁরা এক কথায় জমি দিতে রাজি হন, তাঁদের অল্প টাকা দেওয়া হয়। যাঁরা আগলে রাখতে চান, তাঁরা কিছু পান না— এমনই দাবি এলাকায়। এক পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘শাহজাহান সে দিন বলেছিলেন, তোরা সবাই আমার গোলাম। আমি যা বলব, সেটাই শুনতে হবে।’’

অভিযোগ, ‘ইয়াস’ ঝড়ে বিধ্বস্ত সন্দেশখালিতে ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে শাহজাহান বাহিনীর হাতে নিগ্রহের শিকার হন গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও। তাঁকে বাসন্তী হাইওয়ের উপর প্রায় আট ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, এমন দাবিও করেন সিদ্দিকুল্লা। পরে পুলিশ যায়।

শাহজাহানের ভাই অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে বলছেন, ‘‘দাদা অত্যাচারী নয়। যা বলা হচ্ছে, ভিত্তিহীন। দাদা সন্দেশখালির মানুষের জন্য অনেক কিছু করে। তাই সবাই দাদাকে ভালবাসে।’’ একই সুর বিধায়ক সুকুমার মাহাতোর গলাতেও।

তা-ই যদি হবে, তা হলে শাহজাহানের নাম শুনেই কেন ফোন রেখে দেবেন তৃণমূলেরই এক কর্মী? এক ‘অত্যাচারিত’কে ফোনে প্রশ্ন করায় উত্তর এল, ‘‘যা হয়েছিল, আমরা তো তা মেনে নিয়েছি। কোথাও অভিযোগও করিনি।’’ হোয়াটসঅ্যাপ কলে এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘ওঁর নাম না নিয়ে বলছি, শুধু উনি একা নন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দেখতে হবে, যারা ওঁর ডান হাত, তারা কী ভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে। মানুষের উপরে কেমন শোষণ-শাসন চালাচ্ছে, তা দেখা দরকার।’’

খুলনা এলাকার বিজেপির এক বুথ সভাপতির কাতর আর্জি, ‘‘এখনও কেউ ভয়মুক্ত নই। দয়া করে আমার নামে কিছু লিখবেন না।’’

তথ্য সহায়তা: নির্মল বসু

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Shahjahan Sheikh ED sandeshkhali TMC

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy