Advertisement
E-Paper

দেখা না পেয়ে বাড়ির পথে

শুধু নমিতা, মানসীই নয়। ঢুকতে না পেরে ঘুরে যান গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীও।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৩
বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

সময়, সুযোগ পেলেই মানুষের মাঝে মিশে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাপত্তার বাড়াবাড়িও তাঁর না পসন্দ।

মঙ্গলবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের গ্রাম বীরসিংহে তাঁর জন্মের দ্বি -শতবর্ষ উদযাপনের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মহিলারা শাঁখ বাজালেন, উলু দিলেন। বেজে উঠল ধামসা, মাদল। বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরে যখন এমন কাণ্ড ঘটছে, তখন হতাশ হয়ে সেখান থেকে ফিরলেন ঊষা বাগ, নমিতা রানা, মানসী দাসেরা। ইচ্ছে ছিল মুখ্যমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখার। ইচ্ছে ছিল অনুষ্ঠান দেখার। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে তা সম্ভব হয়নি। তাঁরা বাড়ি ফিরে যান।

শুধু নমিতা, মানসীই নয়। ঢুকতে না পেরে ঘুরে যান গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তীও। পরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্মৃতি মন্দিরে ঢোকেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ, জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিরা। মন্দিরের ধারেকাছে আসতে দেওয়া হয়নি গ্রামের মানুষকে। সেখান থেকে মুখ্যমন্ত্রী হেঁটেই প্রায় আড়াইশো মিটার দূরে ভগবতী বিদ্যালয়ের সামনে সভামঞ্চে আসেন। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। স্মৃতি মন্দিরের সামনেই বাড়ি পদ্মা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। জানলার ফাঁক দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এত নিরাপত্তার কড়াকড়ি, যে ভাল করে ঘর থেকে বার হতে পারছি না।’’

কেন এত নিরাপত্তা?

কয়েকদিন আগেই বঞ্চনার অভিযোগ তুলে শাসকদলের নেতাকর্মীদের ঘেরাও করে তাঁদের উপর চড়াও হয়েছিল গ্রামবাসীদের একাংশ। তারপর সেখান দফায় দফায় গিয়েছেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, সম্ভবত কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই আঁটসাটো নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠান মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

এ দিন সকাল থেকেই মুখভার ছিল বীরসিংহের। সকালের দিকে বৃষ্টিও হয়। আবহাওয়ার কথা ভেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার সময় একঘণ্টা এগিয়ে দুপুর ২ টো করা হয়। তার ঘণ্টাদুয়েক আগে থেকেই বীরসিংহ কার্যত চলে যায় নিরাপত্তার ঘেরাটোপে। বীরসিংহে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির, লাইব্রেরি, বালিকা বিদ্যালয়, হাইস্কুল সর্বত্রই ছিল পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। কার্যত দুর্গের চেহারা নিয়েছিল বিদ্যাসাগরের গ্রাম। ড্রোন দিয়ে নজরদারি চলে বীরসিংহের আকাশে।

দুপুর আড়াইটে নাগাদ বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দিরের সামনে এসে দাঁড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়। সঙ্গে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, ঘাটালের সাংসদ দেব। সেখানে আগের থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় ছিলেন মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। নবরূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান। তাঁর আদিবাড়ির অনুকরণে আগেই সাজানো হয়েছিল জন্মভিটে। মমতা সেখানে বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান করেন, ফুল দেন জন্মস্থানেও। ঘুরে দেখেন জন্মভিটেও। স্মৃতি মন্দিরের একমাত্র কর্মী দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বিদ্যাসাগরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ঘুরিয়ে দেখান।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী সভামঞ্চ থেকে বীরসিংহকে কেন্দ্র করে পর্যটন কেন্দ্র, গবেষণাগার, এডুকেশন হাব-সহ বিদ্যাসাগরের জন্মস্থানকে সাজিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যা শুনে বীরসিংহের মানুষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিদ্যাসাগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক উমাশঙ্কর পাল বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় আমরা খুশি। বীরসিংহকে ঘিরে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্ল্যান খুব ভাল।’’ স্থানীয় যুবক দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, ‘‘এতদিন তো কিছুই হয় নি, যা হবে তাই ভাল।’’

একবার বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে ভিআইপি রোডে গাড়ি থেকে নেমে পড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কর্তব্যরত ট্রাফিকপুলিশ কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে যাতে বাড়াবাড়ি না করা হয়। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন এ কথা ভুলে গেলে চলবে না লোকসভা নির্বাচনের আগে এই জেলায় এসে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান শুনতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। প্রসঙ্গত, এ দিনের অনুষ্ঠান সেরে কোলাঘাটে ফিরছিলেন সে সময় পাঁশকুড়া যশোড়া বাজারের কাছে দুই বিজেপি নেতাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মদ খেয়ে গোলমাল করছিলেন তাঁরা। বিজেপির দাবি, কনভয় যাওয়ার সময় কয়েকজন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়েছিল। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতেই ওই দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

Mamata Banerjee Ishwar Chandra Vidyasagar Midnapore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy