Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তাপস মামলা ফয়সালা করবেন বিচারপতি মাত্রে

ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি একমত না-হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে তাপস পাল-মামলার নিষ্পত্তির ভার গেল তৃতীয় বিচারপতির হাতে। মামলাটিকে এ বার বিচারপতি নিশীথা মাত্রের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কার্যালয়-সূত্রে শুক্রবার জানা গিয়েছে। এবং বিচারপতি মাত্রের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই হবে চূড়ান্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি একমত না-হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে তাপস পাল-মামলার নিষ্পত্তির ভার গেল তৃতীয় বিচারপতির হাতে। মামলাটিকে এ বার বিচারপতি নিশীথা মাত্রের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কার্যালয়-সূত্রে শুক্রবার জানা গিয়েছে।

এবং বিচারপতি মাত্রের সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই হবে চূড়ান্ত।

অর্থাৎ প্রকাশ্যে প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখার জন্য তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হবে কি না, সে বিষয়ে বিচারপতি মাত্রের সিদ্ধান্তই পুলিশকে কার্যকর করতে হবে। প্রসঙ্গত, গত ২৬ অগস্ট ডিভিশন বেঞ্চের দুই বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত ও তপোব্রত চক্রবর্তী জানিয়েছিলেন, মামলায় সব প্রশ্নেই তাঁরা ভিন্ন মত পোষণ করছেন। যে কারণে তখনই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, প্রধান বিচারপতি এ বার মামলাটি তৃতীয় কোনও বিচারপতির আদালতে পাঠাবেন।

কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ তাপসবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত জুন মাসে নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় একের পর এক সভায় তিনি বিভিন্ন উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন। অভিযোগ: নাকাশিপাড়ার চৌমুহায় তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রচুর মাস্তানি করেছি। একটা কেউ বিরোধী মাস্তানি করতে আসে, আমাদের ছেলেদের ঢুকিয়ে রেপ করিয়ে দেব। এই তাপস পাল ছেড়ে কথা বলবে না। তাপস পাল নিজের রিভলভার বার করে গুলি করে মারবে।”

সেখানেই শেষ নয়। অভিযোগ, ওই দিন তেহট্টের গোপীনাথপুরে ও নাকাশিপাড়ার তেঘড়িতে আরও দু’টি সভায় হিংসা ও বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাপসবাবু। গোপীনাথপুরে বলেছিলেন, “যারা আজ মানুষ খুন করে, তারা মানুষ হতে পারে না। মানুষ জন্ম দেয়নি। ওর মা কুকুরের সঙ্গে শুয়েছিল। তাই ওর জন্ম হয়েছিল।” শ্রোতাদের এ-ও পরামর্শ দেন, “মেয়েদের বলছি, বঁটি চেনেন? বঁটি দিয়ে গলা কাটতে হয়। আপনারা বঁটিটা দিয়ে পারলে কেটে দিন নলিটা। নয়তো আমি নিজে যদি পারি, গুলি করে মারব।” তেঘড়ির সভায় সাংসদের মন্তব্য ছিল, “নিজেদের কাছে কুড়ুল রাখুন। ভোজালি রাখুন। আপনারা মারুন। তার পরে কে আপনাদের জেলে নিয়ে যায়, আমি দেখব।”

সংবাদমাধ্যমে ঘটনাটি ফাঁস হলে শোরগোল পড়ে যায়। এক জন সাংসদ প্রকাশ্য সভায় এমন সব কথাবার্তা বললেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন জনৈক বিপ্লব চৌধুরী। যার ভিত্তিতে গত ২৮ জুলাই সিআইডি-তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। রাজ্য সরকার ও তাপস পালের তরফে নির্দেশটি চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি গিরীশচন্দ্র গুপ্ত-বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পেশ হয়। ১৪ অগস্ট পর্যন্ত সিআইডি-তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশ বলবৎ করে ডিভিশন বেঞ্চ তখন জানিয়ে দিয়েছিল, ১৩ অগস্ট তারা রায় ঘোষণা করবে।

কিন্তু ১৩ তারিখে ডিভিশন বেঞ্চে মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। কারণ, রায় দিতে গিয়ে দুই বিচারপতি সহমত হতে পারেননি। বিচারপতি গুপ্ত বলেছিলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের (বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের) সিদ্ধান্ত খারিজ করে তিনি রাজ্য সরকার ও তাপস পালের আপিল গ্রহণ করছেন। পাশাপাশি সিআইডি’র পরিবর্তে পুলিশকে নির্দেশ দিচ্ছেন ঘটনার তদন্ত করতে। অন্য দিকে বিচারপতি চক্রবর্তী উল্টো মত পোষণ করে জানান, তিনি রাজ্য সরকার ও তাপস পালের আপিল খারিজ করে দত্ত-এজলাসের নির্দেশই বহাল রাখার পক্ষপাতী।

এমতাবস্থায় মামলার ফয়সালার ভার তৃতীয় বিচারপতির হাতে যাওয়াটা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য সিআইডি-তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশের মেয়াদ ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু মূল বিচার্য নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ একমত হতে পারল না কেন?

বস্তুত হাইকোর্টেরই এক আইনজীবী সম্প্রতি লিখিত ভাবে ডিভিশন বেঞ্চের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন। যার ভিত্তিতে ডিভিশন বেঞ্চ গত ২৬ অগস্ট কারণটি ব্যাখ্যা করেছে। বেঞ্চের বক্তব্য: ব্যাপারটা এমন নয় যে, দুই বিচারপতির মধ্যে কিছু প্রশ্নে মতের মিল হয়েছে, কিছু প্রশ্নে হয়নি। বরং এ মামলায় কোনও ক্ষেত্রেই তাঁদের মত মেলেনি বলে জানিয়ে দেন বিচারপতি গুপ্ত। ওই দিন ডিভিশন বেঞ্চের কাছে তাপস পালের কৌঁসুলির আর্জি ছিল, সিআইডি-তদন্তের নির্দেশে স্থগিতাদেশের মেয়াদ ২ সেপ্টেম্বরের পরে আরও দু’সপ্তাহ বাড়ানো হোক। বেঞ্চ সে আর্জি শুনতেই রাজি হয়নি।

বিচারপতি নিশীথা মাত্রেই এখন স্থির করবেন, তাপস-মামলার শুনানি ফের কবে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE