দুর্ভোগ: ধর্মতলার সভায় যাওয়ার জন্য বাস তুলে নিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের পতাকা (বাঁ দিকে)। বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেকার ও টোটো করে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। বুধবার ঘাটালে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
একুশের জয়ের উৎসব বাইশে। তেইশ, চব্বিশের ভোটের প্রস্তুতিও বাইশে। দু’বছরের জমে থাকা আবেগের প্রকাশ বাইশে।
জেলায় জেলায় তাই এ বার (২০২২ সালে) পুরনো চেহারায় ফিরল তৃণমূলের একুশে জুলাই সমাবেশের প্রস্তুতি। উৎসাহের হাত ধরে ফিরেছে শাসক দলের চেনা কোন্দলও। এক নেতা মিছিল নিয়ে গিয়েছেন এক গলি দিয়ে। অন্য নেতা সেসময় স্লোগান তুলেছেন সড়কপথে। এক নেতা কর্মী, সমর্থকদের জন্য খিচুড়ির আয়োজন করেছেন। অন্য নেতা ভরসা রেখেছেন চেনা ডিম-ভাতে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, মেদিনীপুরে এ বার যত মিছিল, পথসভা হয়েছে তা অন্যবার হয় না। ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার পরের বছর লোকসভা ভোট। তাই কি এত জোরালো প্রচার? তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলছেন, ‘‘একুশের বিজয়ের পর ফের ধর্মতলার পুরনো স্থানে পালিত হতে চলেছে শহিদ দিবসের সমাবেশ। কর্মীরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন। এটা স্বাভাবিক। আমাদের জেলা থেকেই ৫০ হাজার মানুষ যাচ্ছেন সমাবেশে।’’
তৃণমূলে গোষ্ঠীকোন্দল নতুন নয়। প্রায় সর্বত্র রয়েছে। কোন্দল না কি প্রস্তুতিপর্বে গতিও এনেছে! বাড়িয়েছে সমাবেশের সমর্থনে পথসভার সংখ্যা, মিছিলের সংখ্যাও। মেদিনীপুর শহরের কথাই ধরা যাক। জেলা সদর শহরে ২৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। একাংশ কর্মী শোনাচ্ছেন, শহরে পথসভা হয়েছে একশোটিরও বেশি। কেন্দ্রীয়ভাবে মিছিলও হয়েছে কতগুলি। মেদিনীপুরেও তৃণমূলে ‘বিভাজন’ রয়েছে। একদিকে রয়েছেন বিধায়ক জুন মালিয়া, পুরপ্রধান সৌমেন খানের অনুগামী বলে পরিচিতরা। অন্যদিকে রয়েছেন দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের অনুগামী বলে পরিচিতরা। যেখানে শুরুতে পুরপ্রধানের অনুগামীরা পথসভা করেছেন, সেই এলাকায় পরে শহর সভাপতির অনুগামীরা পথসভা করেছেন। আবার যেখানে শুরুতে শহর সভাপতির অনুগামীরা পথসভা করেছেন, সেই এলাকায় পরে পুরপ্রধানের অনুগামীরা পথসভা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে শহর সভাপতির অনুগামীরা পথসভা করেছেন ওয়ার্ড সভাপতিকে সামনে রেখে। কিছু ক্ষেত্রে পুরপ্রধানের অনুগামীরা পথসভা করেছেন দলীয় কাউন্সিলরকে সামনে রেখে। টক্কর চলেছে এ ভাবেই! তৃণমূলের জেলা সভাপতি অবশ্য শোনাচ্ছেন, ‘‘দলে কোনও কোন্দলই নেই।’’
মেদিনীপুরে শহর সভাপতির অনুগামীরা বিলি করেছেন মাস্ক আর শুকনো খাবার। পুরপ্রধানের অনুগামীরা বিলি করেছেন পাঁউরুটি আর জলের বোতল। অনেক কর্মী দুই শিবিরের বিলি করা সামগ্রীই নিয়েছেন। বুধবার এক কর্মী বলছিলেন, "যাক। আর ট্রেনে কিছু কিনতে হবে না। এই খাবারেই চলে যাবে!"
ঝাড়গ্রামে অবশ্য প্রস্তুতি সভা, প্রচার ঘিরে নেতাদের মধ্যে সে ভাবে টক্কর চোখে পড়েনি। শুধু কর্মী, সমর্থকদের জন্য খাবারের যোগানকে কেন্দ্র করে একে অপরকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছাড়া। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা জানান, শহরের রূপছায়া মোড়ে কর্মীদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা থাকছে। তবে জেলা তৃণমূলের কো- অর্ডিনেটর তথা পুরসভার কাউন্সিলর অজিত মাহাতোর উদ্যোগে বুধবার রাত থেকেই ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়াম লাগোয়া অজিতের কার্যালয়ে ডিমের ঝোল- ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা হয়েছে। একুশে জুলাইয়ের সমাবেশে যাওয়ার জন্য জেলা থেকে এ বার ব্লকগুলিকে টাকা দেওয়া হয়নি। জেলার বেশিরভাগ কর্মী ট্রেনেই যাচ্ছেন সমাবেশে। নেতানেত্রীরা ব্যক্তিগত গাড়িতে কিংবা ভাড়ার গাড়িতে যাচ্ছেন। দেবনাথ বলছেন, ‘‘প্রতিটি ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্ব নিজেদের উদ্যোগে বাসের ব্যবস্থা করেছেন। এখনও পর্যন্ত ১৩০টি বাস নেওয়া হয়েছে বলে খবর পেয়েছি।’’ লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো বলছেন, ‘‘২০১৯ সালে ২২টি বাস লালগড় থেকে গিয়েছিল। এ বার ১৪টি বাস করেছি। আরও কিছু ছোট গাড়ি ভাড়া করেছি। তবে এ বার ব্লকের বেশিরভাগ কর্মী ঝাড়গ্রাম থেকে ট্রেনেই যাবেন।’’
(সহ প্রতিবেদন: কিংশুক গুপ্ত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy