কলেজ মোড় এলাকায় একশো শতাংশ নিরামিষ ওই ক্যাফে চালু হয়েছে।
করোনা কালে আক্রান্তদের বাড়িতে নিখরচায় খাবার পৌঁছে দিয়ে প্রশংসিত হয়েছিল বিভিন্ন সংস্থা। অনেকে ব্যক্তিগত ভাবেও সেবামূলক পরিষেবা দিয়ে নজির গড়েছিলেন। করোনা সংক্রমণ এখন প্রায় নেই। এবার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে অন্যরকম ভাবনা ভেবেছে ঝাড়গ্রাম শহরের একটি ক্যাফে। ওই ক্যাফে কর্তৃপক্ষের ঘোষণা, প্রতিদিন তাঁরা ব্যবসার বাইরেও দুঃস্থ ও অসহায়দের বিনামূল্যে ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়াবেন। মূলত শহরে কাজ করতে আসা দিনমজুর, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজন এবং দুঃস্থ পড়ুয়াদের বিনামূল্যে ওই পরিষেবা দেওয়া হবে।
গত বছর ১ অক্টোবর পুজোর মরসুমে অরণ্য শহরের কলেজ মোড় এলাকায় একশো শতাংশ নিরামিষ ওই ক্যাফে চালু হয়েছে। সেখানে চা, কফি, মোমো-সহ ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ় নানা ধরনের মুখরোচক নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। তবে ভাত-ডাল-তরকারি মেলে না। এবার অসহায়দের জন্য দুপুরে ও রাতে সেই আয়োজন করছেন ক্যাফে কর্তৃপক্ষ। যাঁরা দুপুরে এই পরিষেবা নিতে চান, তাঁদের সকালে ক্যাফে কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়ে দিতে হবে। রাতে খাবার চাইলে জানাতে হবে বিকেলে। ওই ক্যাফের অন্যতম অংশীদার প্রতীক মৈত্র বলছেন, ‘‘গত পাঁচ মাসে আমাদের ক্যাফে ভোজন রসিকদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। তাই এবার সেবামূলক ভাবে প্রতিদিন দুপুরে ও রাতে বিনামূল্যে ভাত-ডাল-তরকারি খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহের সাতদিনই ওই পরিষেবা মিলবে।’’ ক্যাফের কর্মী সৌরভ ভুঁই, আশিস ভুঁই জানান, প্রথম দিকে প্রতিদিন ২০-৩০ জনের খাবারের সংস্থান রাখা হচ্ছে।
করোনা কালে প্রতীকের নেতৃত্বে শ্রমজীবী ক্যান্টিন শহরে জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে সেখানে ২০ টাকার বিনিময়ে খাবার দেওয়া হত। করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে অবশ্য খাবার পৌঁছে দেওয়া হত বিনামূল্যে। ৩৭৫ দিন চলার পর আর্থিক কারণে শ্রমজীবী ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে যায়। তারও পরেও রেড ভলান্টিয়ারদের মাধ্যমে নানা ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন প্রতীক ও তাঁর সহযোদ্ধারা। গত বছর পুরভোটে শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিআই প্রার্থী হিসেবে প্রতীক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূলের অজিত মাহাতোর কাছে হেরে যান। তারপরই গত বছর কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর এলাকার একটি ক্যাফে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ঝাড়গ্রাম শহরে ওই ক্যাফের শাখা চালু করেন তিনি। প্রতীক বলছেন, ‘‘এটা একেবারেই স্বার্থবিহীন মানবিক উদ্যোগ। প্রত্যেকেই সাধ্যমত যদি এক-দু’জনের খাবারের দায়িত্ব নেন, তাহলে সম্মিলিত ভাবে অনেক অভুক্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া সম্ভব।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন চিকিৎসার জন্য আসেন। রোগীর আত্মীয়রাও আছেন। তাদের মধ্যে গরিব মানুষের সংখ্যাটাই বেশি। আবার অনেক দুঃস্থ পড়ুয়াও শহরে পড়াশোনা করে। তেমনই গ্রামগঞ্জ থেকে শহরে দিনমজুরির কাজ করতে আসেন দরিদ্ররা। তাঁদের সাশ্রয়ের কথা ভেবেই বিনামূল্যে নিরামিষ খাবার খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সদ্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে কল্লোল লাহিড়ীর উপন্যাস অবলম্বনে ওয়েব সিরিজ ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’। সত্তরোর্ধ্ব ইন্দুবালা তাঁর বাড়িতে হোটেল চালানোর পাশাপাশি, গরিবদের কাছে খাবারের টাকা নিতেন না। করোনা কালে মালদহের ব্যবসায়ী সফিকুল আলম পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় খাওয়ানোর জন্য ভাতের হোটেল খুলে বসেছিলেন। বাংলাদেশের সিলেটের একটি হোটেল আজও প্রতিদিন দরিদ্রদের বিনামূল্যে খাবার খাওয়ায়। সেই তালিকায় নাম জুড়তে চলেছে ঝাড়গ্রামের ক্যাফেটিরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy