মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ধৃত অভিষেক মাইতি (মাঝে)। —নিজস্ব চিত্র।
রবিবার সকাল সাড়ে দশটা। খড়্গপুর স্টেশনে বেশ কিছুক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে হাওড়াগামী গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস। এতক্ষণ অপেক্ষা করে বিরক্ত ট্রেনের যাত্রীরা। হঠাৎই কামরা থেকে লাল গেঞ্জি পরা বছর বাইশের এক যুবককে হিড়হিড় করে টেনে নামাল কয়েকজন। ঘটনায় স্বভাবতই হতচকিত ট্রেনের যাত্রীরা।
পরে পরিষ্কার হল গোটা বিষয়টি। জানা গেল, গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুম্বইতে কালীপদ ঘোড়ই (২২) নামে এক যুবককে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে তাঁর এক সহকর্মীর বিরুদ্ধে। আর সেই ঘটনার ৩২ ঘণ্টার মধ্যেই খড়্গপুর রেল পুলিশের সহযোগিতায় স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে অভিযুক্ত সেই সহকর্মী অভিষেক মাইতিকে গ্রেফতার করল মুম্বই থানার পুলিশ।
মুম্বইয়ের পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মালাড ইস্টের দিন্দোশি থানা এলাকার সন্তোষনগরে একটি গয়না কারখানায় কাজ করতেন পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন যুবক। এর মধ্যেই ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়ার ভবানীপুর থানা এলাকার বাসিন্দা অভিষেক মাইতি ও এগরার পিন্টু দাস ও কালীপদ ঘোড়ই। তাঁরা মুম্বই শহরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ গত শুক্রবার টাকা নিয়ে বচসার জেরে পিন্টু ও কালীপদ-র সঙ্গে ঝামেলা বাধে অভিষেকের। অভিযোগ, সেই সময়ই লোহার রড দিয়ে কালীপদ ও পিন্টুর মাথায় আঘাত করে অভিষেক। জখম দু’জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানেই মারা যান কালীপদ। রাতেই প্রবাসী যুবকের খুনের ঘটনার খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে মুম্বই থানার পুলিশ। জখম পিন্টুর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিষেককে ধরতে তৎপর হয় পুলিশ।
শনিবার ভোরে মুম্বই পুলিশ অভিষেকের মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান দেখে বুঝতে পারে সে রয়েছে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে ৮কিলোমিটার দূরে দাদর সেন্ট্রাল স্টেশনের কাছে। পুলিশের ৬ জনের দলের তদন্তকারী অফিসার রাকেশ পাওয়ার বলেন, “ঘড়ির কাঁটায় তখন ৬টা ১৫মিনিট। দাদর স্টেশনের টাওয়ার দেখানোর পরই বন্ধ করে দেওয়া হয় মোবাইল। তখনই আমরা সন্দেহ করি যে অভিষেক গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে পশ্চিমবঙ্গে আসছে।” এরপর মুম্বই পুলিশ যোগাযোগ করে খড়্গপুর জিআরপির সঙ্গে। আর ছয় সদস্যের মুম্বই পুলিশ বাহিনী বিমান ধরে কলকাতায় আসার উদ্দেশে রওনা দেয়।
রবিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মুম্বই পুলিশের নির্দেশমত হাওড়াগামী গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস খড়্গপুরে পৌঁছলে রেল পুলিশ ট্রেন দাঁড় করানোর আবেদন জানায়। তল্লাশি চালানো হয় রেলের প্রতিটি কামরায়। পাকড়াও করা হয় খুনে অভিযুক্ত অভিষেককে। এ দিন অভিযুক্তকে রেল পুলিশ থানার লক-আপে রেখে জেরা করে মুম্বই পুলিশ। পুলিশের সঙ্গেই এসেছিলেন অভিযোগকারী জখম পিন্টু দাসও। ধৃতকে তিন দিন ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে বিচারক তা মঞ্জুর করেন। তদন্তকারী অফিসার রাকেশ পাওয়ার জানান, “আমরা অভিযুক্তকে তিনদিনের মধ্যেই মুম্বই আদালতে হাজির করব। মৃতের বাড়িতেও খবর দেওয়া হয়েছে। ওঁরা মুম্বইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy