Advertisement
১১ মে ২০২৪
Cyclone Yaas

 আমপানে শিক্ষা, কড়াকড়ি ইয়াসে, ক্ষতি কমে ৩০০ কোটি!

প্রাথমিকের চেয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টে ‘বিপুল’ ক্ষতি কমেছে কৃষিতেই।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৫:৩৯
Share: Save:

সচরাচর, প্রাথমিক রিপোর্টের চেয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশ খানিকটা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে উলটপুরাণ!

কেমন? প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জেরে পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫৩৪ কোটি টাকা। চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সেটাই কমে হয়েছে ৩১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে গিয়েছে ২১৫ কোটি টাকা! ইয়াসের প্রভাব জেলার সব ব্লকে তেমন পড়েনি। ‘বিপুল’ ক্ষয়ক্ষতি কী ভাবে হল, সে নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। জানা যাচ্ছে, জেলা থেকেও বিভিন্ন দফতরকে সতর্ক করে জানানো হয়েছিল, চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরির সময়ে সব দিক ভালভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। পরিদর্শক দলকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝিয়ে দেন, ত্রাণ ও পুনর্গঠনের কাজ একেবারে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে চাইছেন তিনি। তবে চূড়ান্ত রিপোর্টে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমে যাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি জেলাশাসক রশ্মি কমল। জেলাশাসক শুধু বলছেন, ‘‘ঝড়ের পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সবথেকে বেশি।’’

বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে লিখিত আবেদন নেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় শিবির হচ্ছে। রাজ্যস্তর থেকেই ঠিক হয়েছে, এ বার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় শুধু সরকারি আধিকারিকেরাই থাকবেন। বিভিন্ন মহল মনে করছে, আমপানের অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েই এ বার এই আগাম সতর্কতা। আমপানে ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতিটি চালু হয়েছিল ত্রাণ বন্টনের মাঝপথে, এ বার গোড়া থেকেই সেই পদ্ধতিতে কাজ শুরু করতে চেয়েছে তৃণমূল সরকার। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আমপানের পরে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিভিন্ন মহলের অনুমান, আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বার প্রথম থেকেই ‘কড়া’ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যাচ্ছে, ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির প্রস্তুতি নিয়ে জেলায় এবং ব্লকে একাধিক দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠক করেছে টাস্কফোর্স। বার্তা দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত নয়, এমন কাউকে ত্রাণ পাইয়ে দেওয়া যাবে না।

দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিকের চেয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টে ‘বিপুল’ ক্ষতি কমেছে কৃষিতেই। প্রাথমিক রিপোর্টে কৃষি দফতর জানিয়েছিল, ক্ষতির পরিমাণ ৪৫৫ কোটি টাকা। চূড়ান্ত রিপোর্টে তারা জানিয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ ২৯০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ক্ষতির পরিমাণ কমেছে ১৬৫ কোটি টাকা। জেলার এক কৃষি আধিকারিক জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। তখন ব্লকগুলি থেকে যে রিপোর্ট এসেছিল তা থেকে দেখা গিয়েছিল, জেলার ৬৪,০১২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। পরে এলাকা পরিদর্শনের পর দেখা গিয়েছে, জেলার ৬১,৩২৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই কৃষি আধিকারিকের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্ট যখন তৈরি হয়, তখনও অনেক জমি জলমগ্ন ছিল। পরে পরে জল নামতে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত তথ্য জানা গিয়েছে।’’

প্রশাসন সূত্রে খবর, ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির শিবিরে যে আবেদনগুলি আসবে, তার প্রত্যেকটি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হবে। এ জন্য তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। তদন্তে ক্ষতির সত্যতা মিললে তবেই ক্ষতিপূরণ মিলবে। আমপান থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়েছে শাসক দলও! তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায় বলছেন, ‘‘জেলায় ইয়াসের অভিঘাত বেশি নয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যাতে ক্ষতিপূরণ পায় তা দেখতে বলেছি প্রশাসনকে।’’ ব্লক প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছিলেন, ‘‘বিপর্যয়ের সময়ে বোঝা যায় না তার মাত্রাটা ঠিক কত। বোঝা যায় তা থামলে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE