চোলাইয়ে রাশ টানতে এ বার প্রমীলা বাহিনীর হাত ধরতে চাইছে প্রশাসন। মদ বিক্রির সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের আয়ের দিশা দেখাতে হবে কর্মশালাও। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান বলেন, “মহকুমার প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। চোলাইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত প্রমীলা বাহিনীর সদস্যদেরও নিয়েও বৈঠকে হবে। তাঁদের থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে।’’
ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে রমরমিয়ে চলছে চোলাইয়ের কারবার। ঘাটালের বরদাচৌকান, মনসুকা, দাসপুরের নন্দনপুরে প্রায়ই মদের ঠেকে ভাঙচুরের খবর সংবাদের শিরোনামে আসে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আবগারি দফতরের উদাসীনতার জন্যই বন্ধ করা যায়নি চোলাই ব্যবসা। ঠেকে ভাঙচুরের পর কয়েকদিন ব্যবসা বন্ধ থাকে। ফের যে কে সেই। চোলাই ঠেকগুলি বহু পরিবারে বিপর্যয় নামারও কারণ।
সম্প্রতি ঘাটালের গোপমহল গ্রামে চোলাই ঠেকে ভাঙচুর চালায় স্থানীয় মহিলারা। তাঁদের কথায়, ‘‘ঘরের ছেলেরা অসময়ে মারা যাচ্ছে। জটিল অসুখে ভুগছে। দেওয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গিয়েছে। প্রথমে আমাদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। হুঁশিয়ারিকে পাত্তা না দিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।” তারপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই গোপমহল গ্রামের আন্দোলনরত মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় মনোহরপুর-২ পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। এ ভাবেই অন্যান্য গ্রামের আন্দোলনরত মহিলাদের পাশেও দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, চোলাই নিয়ন্ত্রণের প্রথম ধাপে মদ ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করা হবে। ঘাটাল মহকুমায় পাঁচটি ব্লকের অধীনে ৪৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। এক প্রশাসনিক আধিকারিকের কথায়, “ঠিক কত সংখ্যক মানুষ চোলাইয়ের ব্যবসা চালিয়ে সংসার চালায়, সেই খোঁজটা আগে নিতে চাইছি। এই সকল ব্যবসায়ীদের নিয়েই কর্মশালা
করা হবে।’’
দিনকয়েক আগে কাজের আশ্বাসে লালগড়ের পডিহা গ্রামের মহিলারা চোলাই ব্যবসা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। মদ বিক্রি ছেড়ে একশো দিনের কাজেও যোগ দিয়েছেন তাঁরা। ঘাটালেও সরকারি নানা প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়ে চোলাই নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটতে চাইছে প্রশাসন। মদের ব্যবসা ছেড়ে কেউ অন্য কোনও ব্যবসা করতে চাইলে তাদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্প থেকে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে। এ ছাড়া একশো দিনের কাজের সুযোগ তো রয়েইছে।
আবগারি দফতরের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আধিকারিক অশোক দে বলেন, “চোলাই ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে লিফলেট বিলি করা হবে। হবে মাইকের মাধ্যমে প্রচারও। প্রয়োজনে আন্দোলনরত প্রমীলা বাহিনীদেরও প্রচারের কাজে লাগানো হবে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবগারি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “মহকুমাশাসকের এই উদ্যোগ ভাল। অনেক তো অভিযান হচ্ছে। কিন্তু চোলাই বন্ধ তো হয়নি। তাই এ বার সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চোলাই কারবারিদের বিকল্প আয়ের পথের দিশা দেখিয়েই বন্ধ করা যাবে এই কারবার। লালগড়ের পডিহা গ্রাম যদি পারে, ঘাটাল পারবে না কেন।”
আদৌ ঘাটালে চোলাইয়ে রাশ টানা যাবে কি, তা অবশ্য সয়মই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy