আমপানের থেকে শিক্ষা! ইয়াসের ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যাতে সরকারি ক্ষতিপূরণ পায়, সে ব্যাপারে আগাম সতর্ক প্রশাসন। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি। ক্ষতিগ্রস্তেরা আবেদন করতে পারবেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, তদন্তকারী দল গঠন করা হচ্ছে। আবেদনের সত্যতা যাচাইয়ে সরেজমিনে তদন্তে যাবে তদন্তকারী দল। তার পরেই ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে। রাজ্যের এক নির্দেশিকাও এসেছে জেলায়। জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, নির্দেশ অনুযায়ী যাবতীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমল মানছেন, ‘‘রাজ্যের নির্দেশিকা এসেছে। এ ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ করার করা হচ্ছে।’’ যাবতীয় ত্রাণকার্য প্রশাসনের হাতে থাকবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী এ-ও স্পষ্ট করেছেন যে, ক্ষয়ক্ষতি কতখানি তা বুঝে তবেই দেওয়া হবে ইয়াসের ক্ষতিপূরণ। এ জেলায়ও আমপানের পরে ক্ষতিপূরণের টাকা বিলি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ক্ষতিপূরণের টাকা থেকে কাটমানি খেয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। তাই কি এ বার প্রথম থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে? সদুত্তর এড়িয়ে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের বঞ্চিত করে যাতে সরকারি অর্থের অপব্যবহার না- হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।’’ প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫৩৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে শুধু কৃষি ক্ষেত্রেই ৪৫৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে!
প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে, জেলার ৭টি ব্লকে ইয়াসের বেশি প্রভাব পড়েছে। এরমধ্যে ৪টি ব্লকে ক্ষয়ক্ষতি তুলনায় বেশি হয়েছে। এই ৪টি ব্লক হল দাঁতন- ১, দাঁতন- ২, মোহনপুর এবং সবং। তুলনায় কম ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ৩টি ব্লক হল কেশিয়াড়ি, দাসপুর- ২ এবং কেশপুর। এই ৭টি ব্লকে ‘দুয়ারে ত্রাণে’র শিবির হবে। ৩- ১৮ জুন পর্যন্ত ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি চলবে। কোন গ্রাম পঞ্চায়েতে, কবে শিবির হবে তা সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসন ঠিক করবে। রাজ্যের নির্দেশ মেনে পুরসভা বা গ্রাম পঞ্চায়েত ভবনে শিবির হচ্ছে না। স্থানীয় স্কুল- কলেজের মতো ভবনগুলিকে এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ২১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪১টি গ্রাম পঞ্চায়েতে শিবির হবে। এরমধ্যে ওই ৪টি ব্লকের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। আর ওই ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। পুর-এলাকার ক্ষেত্রে ড্রপ বক্স থাকতে পারে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৯- ৩০ জুনের মধ্যে জমা পড়া আবেদন খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য তদন্তকারী দল গঠন করা হচ্ছে। আবেদনের সংখ্যার নিরিখে কোনও ব্লকে তদন্তকারী দলের কর্মীর ক্ষেত্রে ‘ঘাটতি’ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ব্লকে পাশাপাশি অন্য ব্লক থেকেও কর্মী পাঠানো হতে পারে। ১-৮ জুলাইয়ের মধ্যে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে যাবে।
ইয়াসের পরে কিছু ব্লক থেকে ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। একাংশ পঞ্চায়েত সদস্যের দাবি ছিল, বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। অনেক বাড়ির চাল ভেঙে গিয়েছে। পরে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কিছু ক্ষেত্রে অ্যাসবেসটসের সামান্য যে অংশ ভেঙেছে তা আগে থেকেই ভাঙা ছিল! তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা খড়্গপুরের (গ্রামীণ) বিধায়ক দীনেন রায়েরও দাবি, ‘‘ইয়াসের প্রভাব জেলার সব ব্লকে পড়েনি। প্রশাসনকে বলব, সঠিকভাবে তদন্ত করতে।’’ ব্লকস্তরের বৈঠকেও গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ বার আবেদন করতে হবে ক্ষতিগ্রস্তকেই। কারও ‘সুপারিশ’ গ্রাহ্য হবে না।