Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

দরজা বাঁকিয়েও পিঠটান গজরাজের

জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে স্কুলের দরজা ভেঙে হাতির চাল চুরি জঙ্গলমহলের জেলায় নতুন নয়। চলতি বছরেই জেলার ৮টি স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ির দরজা ভেঙে চাল চুরি করেছে হাতিরা। সচরাচর নিশানা ফস্কায় না।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

তবে কি নিশানা ফস্কে গেল গজরাজের!

স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নাঘরে চড়াও হয়েছিল দলমার পালের একটি হাতি। কিন্তু লোহার দরজা বাঁকিয়েও শেষ মুহূর্তে আর ভাঙেনি হাতিটি। হাল ছেড়ে স্কুল চত্বর ছেড়ে চলে যায় সে। পরে এক সঙ্গীকে নিয়ে এসে আশপাশের পাঁচটি বাড়ির দরজা-জানলা ভেঙে মজুত ধান-আটা সাবাড় করে। শনিবার রাতে ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড়শালবনি পঞ্চায়েতের শিরশি গ্রামের ঘটনা।

জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে স্কুলের দরজা ভেঙে হাতির চাল চুরি জঙ্গলমহলের জেলায় নতুন নয়। চলতি বছরেই জেলার ৮টি স্কুল ও অঙ্গনওয়াড়ির দরজা ভেঙে চাল চুরি করেছে হাতিরা। সচরাচর নিশানা ফস্কায় না। এ বার সেটাই হল। তবে দরজা ভাঙলেও চাল পেত না হাতিটি। শিরশি প্রাথমিক স্কুলের টিচার-ইনচার্জ হিমাংশুশেখর মাহাতো জানালেন, মিড ডে মিলের রান্না ঘরে চালই ছিল না। চাল ছিল স্কুলের একটি ঘরের ভিতরে। আর এমনভাবে সেই চাল রাখা আছে, যাতে হাতির দল বুঝতে পারবে না।

এলাকায় বহু বছর ধরে দলমার পাল ও রেসিডেন্ট হাতির গতিবিধি রয়েছে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ চালের বস্তা দু’টি ক্লাসঘরের মাঝের দেওয়ালে ঢাকা দিয়ে রেখেছেন। সম্ভবত হাতি তা টের পায়নি। এ দিকে হাতির হানায় মিড ডে মিলের রান্নাঘরের লোহার দরজা পুরো বেঁকে গিয়েছে। দরজা খোলা যাচ্ছে না। বন দফতরকে বিষয়টি জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রাক্তন বনকর্তা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘হাতির ঘ্রাণশক্তি প্রবল। রান্নাঘরে রোজ মিড ডে মিল রান্না হয়। সেই গন্ধেই সম্ভবত হাতিটির ধারণা হয়েছিল, সেখানে খাবার মজুত রয়েছে। পরে বুঝতে পেরে দরজা না ভেঙেই চলে গিয়েছে। কারণ হাতির কাছে লোহার দরজা ভাঙা এমন কোনও ব্যাপারই নয়।’’

বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত কয়েকদিন ধরে ঝাড়গ্রাম, মানিকপাড়া ও লোধাশুলি রেঞ্জে দলমার পালের ৩০-৩৫টি হাতি রয়েছে। তারা ছোট দলে ভাগ হয়ে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে, নষ্ট করছে রোয়া ধানের খেত। স্থানীয়রা জানালেন, শনিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ জোয়ালভাঙার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে দশেক হাতি শিরষি লাগোয়া ধানখেতে নেমে পড়েছিল। হাতির পায়ের চাপে বিস্তীর্ণ রোয়া ধানের ক্ষতি হয়। ইতিমধ্যে দু’টি হাতি ঢুকে পড়ে শিরষি গ্রামে। একটি বড়, অন্যটি ছোট হাতি। শিরশি গ্রামের মনোজ মাহাতো বলেন, ‘‘রাত তখ‌ন প্রায় ১১ টা। বাড়ির সদর দরজা ভাঙার শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি একটি বড় হাতি দরজা ভেঙে শুঁড় ঢুকিয়ে আটার প্যাকেট, চালের বস্তা বার করে নিচ্ছে।’’ আরেকটি দরজা ভেঙে হাতি মনোজের মেয়ের সাইকেল শুঁড়ে ধরে টানাটানি করছিল।

মনোজদের চিৎকারে পড়শিরা ছুটে আসেন। হাতির চোখে টর্চের আলো ফেলেন গ্রামবাসী মিঠুন মাহাতো। হাতি ছুটে গিয়ে মিঠুনের বাড়ির দরজা ভেঙে আলুর বস্তা টেনে বার করার চেষ্টা করে। বস্তার উপর মিঠুন লাঠির বাড়ি মারতে শুরু করলে হাতি বস্তা ছেড়ে দিয়ে নিমাই মাহাতোর দরজা ভাঙে। সব মিলিয়ে পাঁচটি বাড়ির দরজা ভেঙে চাল, আটা, আনাজ খায় হাতি দু’টি। তখন মাঠে ছিল আরও তিনটি হাতি। গ্রামবাসীর তাড়ায় শেষে হাতিগুলি আমলাচটির জঙ্গলের দিকে পালিয়ে যায়।

ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হলেইচ্চি বলেন, ‘‘হাতির দলের উপর নজর রাখা হচ্ছে। স্কুল ও বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Elephant Rice Mid Day Meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE