আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাস্তার পাশে তাঁর ছবি দেওয়া পোস্টার-ব্যানার। পুরনো ঝাড়গ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।
কাল, বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক জনসভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। সেখানে এমবিবিএস পাঠক্রম চালু হয়েছে। তবে সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগই এখনও চালু হয়নি। যার ফলে যথাযথ পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ ওঠেই। লোকসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলের স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকাঠামোর এই খামতির বিষয়টিকে প্রচারে আনছে গেরুয়া শিবির। জঙ্গলমহলে এআইআইএমএস (এমস) ধাঁচের একটি অত্যাধুনিক হাসপাতালের জন্য কেন্দ্রে সওয়াল করেছেন ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রম। এমন আবহে প্রশাসনিক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নে নতুন কী কী ঘোষণা করতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।
২০২২ সালের ২১ জুলাই স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালটিকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানে অনেক কিছুই নেই। সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ার বরাদ্দই মেলেনি। ছ’শো শয্যার ওই হাসপাতালে নেই বার্ন ইউনিট। কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি, নেফ্রোলজি, ইউরোসার্জারির মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিও নেই। ফলে জেনারেল ফিজিশিয়ান দিয়ে হৃদরোগীদের চিকিৎসা করাতে হয়। কার্ডিওলজি বিভাগ না থাকায় ইকো কার্ডিওগ্রাফি বিভাগও নেই। ফলে, রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে করার কিছুই থাকে না। নিউরো সার্জেন না থাকায় ট্রমা কেয়ার চালু হলেও লেভেল-১ স্তরের পরিষেবা দেওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। দুর্ঘটনায় গুরুতর জখমদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীর প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থেই রেফার করতে হয়। হাসপাতালে অস্থিরোগ, শল্য চিকিৎসক ও ইএনটি বিশেষজ্ঞের সংখ্যা সংখ্যা হাতে গোনা। যদিও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘এত কিছুর অভাব সত্ত্বেও হাসপাতালের বার্ষিক রেফার রেট মাত্র তিন শতাংশ। একান্তই যে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়, কেবল তাঁদেরই রেফার করা হয়। সেই জন্যই রেফারের শতাংশ হার খুবই কম।’’
হাসপাতালে এমআরআই পরিষেবাও নেই। বেসরকারি নির্ণয় কেন্দ্রে এমআরআই করাতে গড়ে ১০-২০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। যা অধিকাংশ দরিদ্র রোগীর ক্ষেত্রে অসাধ্য। এ জন্য প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে কোনও রোগী ক্যানসার আক্রান্ত কি-না সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে দেরি হয়ে যায়। হেমাটোলজি বিভাগ এবং রেডিওথেরাপি বিভাগ নেই। ফলে রক্তের ও অন্যান্য ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করা কঠিন হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে আগুনে পোড়া এক রোগীকে রেফার করা হলেও পরিজনরা এখানেই চিকিৎসা চেয়েছিলেন। হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলছেন, ‘‘বার্ন ইউনিট না থাকায় সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের একদিকে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের রেখে চিকিৎসা করা হয়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এই বিষয়টাই রোগীর পরিজন বুঝতে চান না। তাঁরা ভাবেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হয়ে গিয়েছে মানেই সব পরিষেবা মিলবে।’’
ঝাড়গ্রামের বিজেপি সাংসদ কুনার হেমব্রমের অভিযোগ, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলার দু’টি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল— কোথাওই উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। স্বাস্থ্যের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উপযুক্ত পরিষেবা মেলে না বলে এলাকার মানুষ নিকটবর্তী ভুবনেশ্বর এআইআইএমএস-এ যান। সেখানে ভর্তির ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত বহু রোগীকে সহযোগিতা করেছি। আমরা চাই, জঙ্গলমহলেও এআইআইএমএস তৈরি হোক। ’’
ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন তথা মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা অবশ্য বলছেন, ‘‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হওয়ার পর রেফারের সংখ্যা অনেক কমেছে। গরিব মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন। পর্যায়ক্রমে পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে। এসব দেখে কার্যকালের শেষবেলায় সাংসদ এখন এআইআইএমএস-এর স্বপ্ন দেখিয়ে রাজনীতি করতে চাইছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy