E-Paper

সাপ দেখে চিকিৎসা হয় না, তবু কেন ধোঁয়াশা

জাতীয় চিকিৎসা বিধি, ২০১৬ (সাপের ছোবল) তৈরির বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার অবশ্য এ মতের সম্পূর্ণ বিরোধী।

বিশ্বসিন্ধু দে

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৯
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সাপের ছোবলের চিকিৎসা ঘিরে তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি।

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোনও সাপ কাউকে ছোবল দিলে রোগীর চিকিৎসার জন্য ওই সাপটি চিহ্নিত করার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রোগীদের অন্যরকম অভিজ্ঞতা হচ্ছে। হাসপাতালে গেলে নাকি চিকিৎসকদের একাংশ জানতে চাইছেন, কী ধরনের সাপ ছোবল মেরেছে? বিষয়টির যে সারবত্তা রয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে নারায়ণগড় ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা হাসপাতালের সুপার আশিস মণ্ডলের কথায়। সাপের ছোবলের পর সেটিকে ধরে রোগী ও তাঁর পরিবারের হাসপাতালে হাজির হওয়ার প্রবণতাকে ‘ভাল’ বলে উল্লেখ করে আশিস বলেন, ‘‘এই প্রবণতাটা ভাল। এ ক্ষেত্রে বোঝা যায়, রোগীর বিষধর নাকি বিষহীন সাপে ছোবলের চিকিৎসা হবে। এটা আমাদের কাছে সুবিধার।" তবে পাশাপাশি তিনি এটা জানাতে ভোলেননি সাপ ধরে আনার ক্ষেত্রে সচেতন থাকার প্রয়োজন।

জাতীয় চিকিৎসা বিধি, ২০১৬ (সাপের ছোবল) তৈরির বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য চিকিৎসক দয়ালবন্ধু মজুমদার অবশ্য এ মতের সম্পূর্ণ বিরোধী। তিনি বলছেন, ‘‘সাপ মেরে বা ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোনও দরকার নেই। এ জন্য সাপটিকে খোঁজার বা মেরে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সময় নষ্ট করার দরকার নেই। সাপ দেখে চিকিৎসা হয় না, আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ দেখেই চিকিৎসা করা হয়।’’ তিনি জানান, সাপের ছোবলের চিকিৎসায় কোথাও বলা নেই সাপকে ধরে আনতে হবে, ধরে আনা সাপ দেখেই চিকিৎসা করা হবে। এটি সাপের চিকিৎসার ম্যানুয়ালে কোথাও লেখা নেই। সাপ যাঁকে ছোবল মেরেছে তিনি সাপ ধরে আনলেও সাপ দেখে চিকিৎসা হবে না। সাপ ধরে আনাটাও আইন বিরুদ্ধে কাজ।

বিশেষজ্ঞেরা যাই বাস্তব পরিস্থিতিটা ভিন্ন। সম্প্রতি কেশিয়াড়ির কানপুর এলাকার বাসিন্দা বাপ্পা মান্ডিকে বিষধর সাপে ছোবল মারে। পরিবার জানাচ্ছে, মাঠে চাষের কাজে গিয়েছিলেন বাপ্পা। বিষধর চন্দ্রবোড়া সাপ হঠাৎই তার ডান পায়ে ছোবল দেয়। ভয় না পেয়ে নিজেই সাপটিকে ধরে বালতিতে ভরে সটান হাসপাতালে চলে যান বাপ্পা। পরিবারের বক্তব্য, চিকিৎসক যদি বিশ্বাস না করেন। তাই সাপ ধরে আনা হয়েছে। চিকিৎসক সাপটি দেখেন। তার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করেন। এমন ঘটনা প্রায়শই ঘটছে। গত ২৯ জুলাই বেলদা থানার মুরাদপুরের এক ১২ বছরের বালককে সাপে ছোবল মারে। নাবালকের দাদু সেই বিষধর সাপ প্লাস্টিকের কৌটোতে ভরে হাসপাতালে হাজির হয়েছিলেন। গত ৬ মে দাঁতনের উঁচুডিহা এলাকার এক যুবতীর বাড়িতে পুজোর সময় সাপ তাঁকে ছোবল মারলে তাঁর শ্বশুরও একই কাজ করেছিলেন।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাপের বিষের রকম ফের রয়েছে। কোন সাপ ছোবল দিয়েছে তা দ্রুত জানা গেলে সেই মতো চিকিৎসা করা যায়। তেমন হলে দেরি না করেই দ্রুত এভিএস দেওয়া হয়। তা না হলে কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যায় না। কিছু ক্ষেত্রে বোঝা সম্ভব হয় না, ক্ষত সাপের ছোবলে নাকি কোনও পোকামাকড় কামড়ের ফল। সর্পবন্ধু দেবরাজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এখন কিছু চিকিৎসক কোন সাপ ছোবল দিয়েছে রোগীদের তা জিজ্ঞাসা করেন বলেই রোগী ও পরিজনদের মধ্যে দ্বিমত তৈরি হয়েছে। তাই অনেকেই সাপ ধরে হাজির হচ্ছেন।"

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Belda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy