Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram

জেএমএম ঠেকাতে পদ্মের ভরসা নরেন

গত ১৪ নভেম্বর বিনপুরের মাগুরায় কালীপুজোর উদ্বোধনে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নরেনের স্ত্রী চুনিবালা হাঁসদা ও মেয়ে বিরবাহা হাঁসদাকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল।

বিনপুরের অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর সঙ্গে চুনিবালা ও বিরবাহা।

বিনপুরের অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর সঙ্গে চুনিবালা ও বিরবাহা। ফাইল চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২১ ০৮:২৪
Share: Save:

আসন্ন বিধানসভা ভোটে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা (জেএমএম)। আর তা হলে ভোট-অঙ্কে লাভ তৃণমূলেরই। জেএমএম মোকাবিলায় তাই জঙ্গলমহলে প্রয়াত নরেন হাঁসদার আবেগ উস্কে প্রচারে যাচ্ছে বিজেপি।
গত ১৪ নভেম্বর বিনপুরের মাগুরায় কালীপুজোর উদ্বোধনে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে নরেনের স্ত্রী চুনিবালা হাঁসদা ও মেয়ে বিরবাহা হাঁসদাকে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল। শুভেন্দু তখনও পরিবহণ মন্ত্রী। সে দিনই চুনিবালাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই শুভেন্দু এখন বিজেপি নেতা। ফলে, বিধানসভা ভোটে ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-র সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ‘অলিখিত জোটে’র ইঙ্গিতও স্পষ্ট হচ্ছে।
বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী ও চুনিবালা কেউই অবশ্য জোটের কথা মানছেন না। তবে চুনিবালা বলছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে নরেন হাঁসদাকে বাদ দিয়ে আদিবাসীদের সমর্থন আদায় সম্ভব নয়। এটা বিজেপি বুঝেছে।’’ একই সঙ্গে জেএমএম-এর সমালোচনা করে চুনিবালার বক্তব্য, ‘‘এ রাজ্যের প্রস্তাবিত এলাকাগুলিকে বাদ দিয়েই শিবু সরেন ঝাড়খণ্ড রাজ্য মেনে নিয়েছিলেন। এখানকার আদিবাসী-মূলবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল। সেটা আমরা ভুলিনি।’’ আর সুখময়ের বক্তব্য, ‘‘জঙ্গলমহলের ঝাড়খণ্ডী আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ ছিলেন নরেন হাঁসদা। তাই জেএমএম যাই দাবি করুক এখানকার আদিবাসীরা ও সব বিশ্বাস করবেন না। নরেন হাঁসদার প্রতি আদিবাসীদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা এখনও অটুট।’’
গত লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলের আদিবাসী ভোট তৃণমূলের বিপক্ষে গিয়েছিল। আদিবাসী সামাজিক সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল’-এর একাংশ তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে সামাজিক সংগঠনের নেতা রবিন টুডুর স্ত্রী বিরবাহা সরেনকে মেনে নেননি। লোকসভা ভোটের পর থেকে আদিবাসী সমাজ এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে, রয়েছেন রবিন টুডু, নিত্যানন্দ হেমব্রমরা। অন্যদিকে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদিত বাদল কিস্কুর গোষ্ঠী।
বিধানসভা ভোটের আগে এ রাজ্যের জঙ্গলমহলে সক্রিয় হচ্ছে জেএমএম। সম্প্রতি ঝাড়খণ্ডের শাসকদলটি ঝাড়গ্রামে সভা করে বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলের সব আসনগুলিতে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা করেছে। সেই সভায় ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন-সহ জেএমএম-এর শীর্ষ নেতারা বিজেপির কড়া সমালোচনা করলেও তৃণমূল সম্পর্কে নীরব ছিলেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, জেএমএম ভোটে লড়লে জঙ্গলমহলে তৃণমূল লাভবান হবে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপিও প্রয়াত নরেন হাঁসদার কৃতিত্বকেই বড় করে দেখানোর তোড়জোড় শুরু করেছে। দলীয়স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জঙ্গলমহলে নরেন হাঁসদাই আদিবাসীদের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন, সেটাই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় তুলে ধরা হবে। সেই সঙ্গে আদিবাসীদের স্বশাসনের দাবির বিষয়ে কেন্দ্রে ও রাজ্যে এক দলের সরকার থাকলে তবেই যে সেটা সম্ভব, সেকথাও তুলে ধরা হবে।
ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন)-এর প্রতিষ্ঠাতা নরেন হাঁসদা দু’দফায় ছিলেন বিনপুরের বিধায়ক। আজও আদিবাসী সমাজ নরেনকে শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। ১৯৯৯ সালে নরেনের মৃত্যুর পরে দু’বার বিধায়ক হন চুনিবালা। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে অবশ্য তৃণমূল ও কংগ্রেস জোটের সমর্থনে বিনপুরে প্রার্থী হয়ে হেরে যান চুনিবালা। রাজ্যের ক্ষমতার পালাবদলের পরে চুনিবালার দলের বহু নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দেন। তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে দল ভাঙানোর অভিযোগে সরব হন চুনিবালা।
পরে চুনিবালা ও তাঁর মেয়ে বিরবাহার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিরবাহা সরেনের বিপক্ষে বিরবাহা হাঁসদাও ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) প্রার্থী হন। তৃণমূলের সঙ্গে চুনিবালার সম্পর্কের ফের অবনতি হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Jhargram JMM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE