দলীয় কার্যালয়ে হাতাহাতিতে জড়ালেন বিজেপি কাউন্সিলর এবং বিজেপি নেতা। জুতোপেটা এবং তোলাবাজির অভিযোগ এনে মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলার হুঁশিয়ারি দিলেন নেতা। পাল্টা সেই কাউন্সিলর জানালেন, ‘প্রয়োজনে’ আবার মারবেন! পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুরে একই দলের কাউন্সিলর এবং নেত্রীর ‘যুদ্ধ’ ঘিরে শোরগোল। অনেকে এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানছেন তৃণমূলের বেবি কোলের কাণ্ডের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ঘটনাটি শনিবারের। অভিযুক্ত বিজেপি নেত্রীর নাম মমতা দাস। তিনি খড়্গপুর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও বটে। অভিযোগ, ওই ওয়ার্ডের ‘সক্রিয়’ বিজেপি নেতা অশোক সিংহের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়ান। দলীয় কার্যালয়েই জুতো মেরেছেন নেত্রী। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা যায় (ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম) প্রথমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন অশোক। তার মধ্যেও দু’বার নেতাকে জুতো নিয়ে মারেন কাউন্সিলর। অশোকও পায়ের জুতো খুলে মারতে যান। তবে ক্যামেরা দেখে জুতো নামিয়ে নেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘দেখুন আপনারা, আমাকে চপ্পল দিয়ে কী ভাবে মারছে। এখনই আমি পুলিশকে ডাকছি।’’এর পর অশোক বলতে থাকেন, ‘‘মহিলা হওয়ার সুবিধা নিয়ে নে!’’ পাল্টা মমতা অশোককে বলেন, ‘‘তোর মতো চোর নই আমি... টাকা চাওয়ার প্রমাণ দেখা!’’
কিছু দিন আগে রাস্তায় এক বৃদ্ধকে মারধর এবং তাঁর গায়ে কালি ছিটিয়ে শোরগোল ফেলেছিলেন খড়্গপুরের এক তৃণমূলনেত্রী। সেই বেবি কোলের বিরুদ্ধে পরে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করে তৃণমূল। এ বার বিজেপির কাউন্সিলরের কাণ্ড নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে খড়্গপুরে। ভাইরাল ভিডিয়ো প্রসঙ্গে প্রহৃত অশোকের দাবি, ‘‘২০২২ সালে আমিই ওকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এখন খুব বড় হয়ে গেছে!’’ কিন্তু কী নিয়ে বিতণ্ডা? বিজেপি নেতা বলেন, ‘‘ওই ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তার ধারে চাউমিনের দোকান বসানোর কথা বলছিলেন কাউন্সিলরকে। শনিবার কাউন্সিলর ওঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চান। আমি সেটার প্রতিবাদ করতেই এক জনকে সঙ্গে নিয়ে পার্টি অফিসে ঢুকে আমাকে জুতো মারার চেষ্টা করেছেন।’’ এ নিয়ে খড়গপুর টাউন থানায় দলীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন অশোক। পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বের কাছেও দরবার করবেন।
অন্য দিকে, বেবির সুরে বিজেপি কাউন্সিলর মমতা দাবি করেছেন, তাঁর গায়ে আগে হাত দিয়েছেন অশোক। তাঁকে অশ্রাব্য কথা বলেছেন। মমতা বলেন, ‘‘রাস্তায় বেরোলেই ছেলেদের পিছনে লাগিয়ে দেয়। সে জন্যই মেরেছি... নিশ্চয়ই মারব।’’ পাশাপাশি অশোককে তিনি দলের নেতা বা কর্মী মানতে নারাজ তিনি। কাউন্সিলরের দাবি, ‘‘আশোক সিংহ সমাজবিরোধী। ও বিজেপি করে না, তৃণমূলও করে না। কোনও দলই ওকে নিতে চায় না।’’
আরও পড়ুন:
ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পর স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিতে জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। কাউন্সিলরের কাণ্ডের নিন্দা করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অরূপ দাস। তাঁর দাবি, বিজেপি তৃণমূলের মতো বিশৃঙ্খল নয়, শৃঙ্খলাবদ্ধ দল। সেখানে এমন ঘটনা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করে পদক্ষেপ করা হবে। আর এ নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার খোঁচা, ‘‘অশোক সিংহ নিজেই তোলাবাজ। ওঁদের মধ্যে তোলা নিয়ে কী গন্ডগোল হয়েছে, বলতে পারব না। তবে, বিজেপি-র এটাই সংস্কৃতি।’’