শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
প্রাক্তন সেনাকর্মী। বছর তিনেক আগে অবসরগ্রহণের পরে গ্রামে ফিরেছিলেন। ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের গণনার দিন গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ হয়। সেই রাতেই গ্রেফতার হন তিনি। আদালতের নির্দেশে ছিলেন জেলে। সেখানে মাথায় চোট পাওয়ায় প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যাল ও পরে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়েছিল ডেবরার বাসিন্দা সঞ্জয় বেরা (৪২)-কে। মঙ্গলবার সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
প্রাক্তন ওই সেনাকর্মীকে বিজেপির সক্রিয় কর্মী দাবি করে ঘটনায় সিবিআই অথবা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি তুললেন শুভেন্দু অধিকারী।বুধবার ডেবরায় দলের ঘাটাল জেলা কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে শুভেন্দু ঘটনাটিকে হেফাজতে থাকাকালীন মৃত্যু হিসেবে দাবি করেছেন।
তার আগে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে ‘মমতা পুলিশের অত্যাচারে’ ওই বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তারপর দুপুরে ডেবরায় এসে শুভেন্দু বলেন, “সঞ্জয় বেরা আমাদের একনিষ্ঠ সক্রিয় বিজেপি কর্মী। ওঁর মৃত্যু ‘কাস্টডিয়াল ডেথ’। সুপ্রিম কোর্টের নিয়ম অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে হেফাজতে যাঁরা রেখেছেন তাঁদের ঘাড়ে দোষ যায়।’’ সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘‘এই রাজ্যে গণতন্ত্র, সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা তৃণমূল যদি ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ভাবে ৩৯ শতাংশ ভোট পাওয়া দলকে এ ভাবে শেষ করবে, তাহলে ভুল করবে।”
সঞ্জয় ডেবরার ভরতপুর পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমনগর গ্রামের তালবাঁধি বুথের বাসিন্দা। ৪ জুন রাতে তাঁকে গ্রেফতার করে ডেবরা থানার পুলিশ। বিজেপির দাবি, সঞ্জয় সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পুলিশ অন্যায়ভাবে তাঁকে গ্রেফতার করে। ৫ জুন মেদিনীপুর জেলা আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাঁর জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
এরপর মেদিনীপুর জেলে থাকাকালীন তাঁর উপর অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। মাথায় চোট থাকায় ৬ জুন প্রথমে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে পাঠানো হয়। তারপর ১১ জুন নিয়ে যাওয়া হয় প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে। ১৪ জুন পরিবারের চাপে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি
করানো হয়েছিল।
সঞ্জয়ের দুই সন্তান। বছর তেরোর ছেলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। বছর ছয়ের মেয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এ দিন সঞ্জয়ের ছেলেকে পাশে বসিয়েই শুভেন্দু সাংবাদিক বৈঠক করেন। আর সঞ্জয়ের স্ত্রী রুমা বেরা বিজেপি নেতাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন কলকাতা হাই কোর্টে। রুমা বলেন, “আমার স্বামী বিজেপির সমর্থক ছিলেন। কিন্তু সে ভাবে মিটিং, মিছিল কোথাও যেতেন না। ৪ জুনও বাড়িতেই ছিলেন। রাতে খাওয়ার সময় পুলিশ এসে ওঁকে নিয়ে যায়। আমার ধারণা মেদিনীপুর জেলেই ওঁকে মারধর করা হয়েছে। আমি চাই সিবিআই তদন্ত হোক।” রুমার পাশে থাকা বিজেপির ডেবরা ১ নম্বর মণ্ডল সভাপতি সঞ্জয় ঘোড়ই জোড়েন, “আমরা চাইছি কোনও সেনা হাসপাতাল বা কেন্দ্রীয় হাসপাতালে ওঁর ময়নাতদন্ত করার পাশাপাশি সিবিআই তদন্ত হোক।” এ দিন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ এসএসকেএমে চিকিৎসকদের বোর্ড গড়ে ভিডিয়োগ্রাফি করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর পাল্টা বলেন, “ওই তালবাঁধি বুথে এ বার ২০০ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি। তাই গণনার দিন আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করে সঞ্জয় বেরা-সহ বিজেপি কর্মীরা। তারপর পুলিশ সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে। তার পরে ‘জুডিশিয়াল কাস্টডি’তে কী ভাবে কী হয়েছে তা তদন্তসাপেক্ষ।’’ তাঁর খোঁচা, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী সিবিআই বা এফবিআইও চাইতে পারেন। আমরা বিচারব্যবস্থায় আস্থাশীল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy