Advertisement
E-Paper

SSC TET: টেট উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও পাননি চাকরি, সংসদের দারস্থ দৃষ্টিহীন যুবক

অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২২ ০৫:৩০
সাহেব সরকার। নিজস্ব চিত্র

সাহেব সরকার। নিজস্ব চিত্র

প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ হয়েছেন সেই ২০১৪ সালে। একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন হওয়া সত্ত্বেও চাকরি পাননি। কেশপুরের সেই যুবক এ বার চাকরি চেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে দরবার করলেন।

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। অনিয়মের অভিযোগে সম্প্রতি ২৬৯ জন প্রাথমিক শিক্ষককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। এই আবহেই সাহেব সরকার নামে বছর বত্রিশের ওই যুবক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দ্বারস্থ হয়েছেন। সাহেবের বাড়ি কেশপুরের আনন্দপুরে। টেট উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও কেন তাঁর চাকরি হল না, তা জানতে এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যের দফতরেও গিয়েছিলেন সাহেব। পর্ষদের সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচীর দফতরেও তিনি গিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন দৃষ্টিহীন ওই যুবক।

সাহেবের অভিযোগ, ‘‘মানিক ভট্টাচার্যের কাছে গিয়েছিলাম। ওখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলেন। রত্না চক্রবর্তী বাগচীকেও অনুরোধ করেছিলাম, আমার দরখাস্তটা অন্তত নিন। উনি দরখাস্তটাই নেননি।’’ সাহেবের আক্ষেপ, ‘‘দিদি (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছিলেন টেট উত্তীর্ণদের নিয়োগ দেবেন। টেট উত্তীর্ণ হয়েও এখনও নিয়োগপত্র পেলাম না।’’

২০১৪-র প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ চাকরিপ্রার্থীরা সম্প্রতি ফের বিক্ষোভ কর্মসূচি করছেন। বুধবারই কলকাতার হাজরা মোড়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। সাহেব জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তিনিও তাঁর আবেদন নিয়ে গিয়েছিলেন জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সমাজকল্যাণ) কেমপা হোন্নাইয়ার দফতরে। আইএএস কেমপাও একশো শতাংশ দৃষ্টিহীন। সব শুনে তিনি সাহেবকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপরই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষইয়ের দফতরে যান সাহেব।

২০১৪-র টেটে উত্তীর্ণ হয়ে ইন্টারভিউও দিয়েছিলেন সাহেব। তিনি বলছেন, ‘‘ইন্টারভিউ ভালই হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রথম নিয়োগ তালিকায় আমার নাম ছিল না। প্রকাশিত দ্বিতীয় তালিকাতেও আমার নাম ছিল না।’’ সাহেব জানাচ্ছেন, তিনি হাই কোর্টে মামলাও করেছেন। তাঁর মামলাটি এখন বিচারাধীন রয়েছে।

জন্ম থেকেই দু’চোখে আঁধার সাহেবের। পরিবারও স্বচ্ছল নয়। বাবা প্রদ্যোতও দৃষ্টিহীন। মা পুষ্পা গৃহবধূ। এক সময়ে মুড়ি ভেজে সংসার চালিয়েছেন। সাহেব বলছিলেন, ‘‘মায়ের বয়স হচ্ছে। এখন আর বেশি মুড়ি ভাজতে পারেন না। আমার একটা চাকরির খুবই দরকার।’’

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, স্বজনপোষণের অভিযোগ আগেই উঠেছে। বেশ কিছু মামলা এখনও কলকাতা হাই কোর্টে বিচারাধীন। এর মধ্যে যেমন প্রাথমিকের টেট না দিয়েই স্কুলে চাকরি পেয়ে যাওয়া সংক্রান্ত মামলা রয়েছে, তেমন মেধা তালিকায় সামনে থাকা কৃতীদের পিছনে ফেলে স্কুলে চাকরি পেয়ে যাওয়া সংক্রান্ত মামলাও রয়েছে। তবে সাহেবের যে আপাতত সুরাহা হচ্ছে না, তা একপ্রকার স্পষ্টই করে দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু বিষই। তিনি বলেন, ‘‘উনি এসেছিলেন। ওঁকে যা বলার বুঝিয়ে বলেছি। উনিও বুঝতে পেরেছেন এখানে জেলা সংসদের কিছু করণীয় নেই।’’ সংসদ চেয়ারম্যান জুড়ছেন, ‘‘দু’চোখে দৃষ্টিশক্তি নেই। উনি চাকরি পেলে আমাদের থেকে বেশি খুশি আর কেউ হতো না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

SSC TET primary teachers exam
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy