Advertisement
E-Paper

সিআইডি ‘জুজু’, উদ্বেগ পুলিশ মহলে

এ বার বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথের কোয়ার্টারে সিআইডি তল্লাশি চালানোয় শোরগোল পড়েছে। প্রদীপবাবু পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপারের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:১৪

প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের ‘ঘনিষ্ঠ’ আধিকারিকদের একের পর এক বদলির নির্দেশ আসতে থাকায় উদ্বেগ ছিলই পুলিশ মহলে। এ বার বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথের কোয়ার্টারে সিআইডি তল্লাশি চালানোয় শোরগোল পড়েছে। প্রদীপবাবু পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুলিশ সুপারের ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। দাসপুরের যে মামলায় তল্লাশি চালানো হয়েছে, তাতে অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে একাধিক পুলিশ কর্তার নামও। কখন সিআইডি-র ডাক আসে, সেই চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন জেলার অনেক পুলিশকর্তাই। উদ্বেগের কথা গোপনও করছেন না অনেকে। মেদিনীপুরের এক পুলিশকর্মীর কথায়, “অনেক বড় অভিযোগ। বড় মামলা! কখন কার ডাক আসে কে বলতে পারে!”

দাসপুর থানার ওই মামলার তদন্তে নেমে শুরুতেই শুক্রবার সকালে বেলদা থানার ওসি প্রদীপবাবুর কোয়ার্টারে হানা দেয় সিআইডি-র দল। প্রদীপবাবুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর কোয়ার্টার থেকে সোনাও উদ্ধার হয়েছে। দাঁতন-২ ব্লকের সাউরি গ্রামে প্রদীপের শ্বশুরবাড়িতেও তল্লাশি চলেছে বলে এ দিন চাউর হয়। প্রদীপের শ্বশুর গঙ্গেশ নন্দ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা। আর গঙ্গেশবাবুর দাদা দুর্গেশ নন্দ তৃণমূলের দাঁতন-২ ব্লক সভাপতি। দুর্গেশবাবু বলেন, “আমার বিশ্বাস প্রদীপ কোনও অন্যায় করেনি।” আর বাড়িতে সিআইডি তল্লাশির খবর সঠিক নয় দাবি গঙ্গেশবাবুর। গ্রেফতার করা হয়েছে বিমল গড়াই নামে এক ব্যক্তিকেও।

জেলায় সিআইডি-র দল পৌঁছনোর পরে অবশ্য তড়িঘড়ি তাঁকে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়াও মানছেন, “বেলদার ওসিকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।” এ প্রসঙ্গে এর বেশি কিছু বলতে চাননি জেলা পুলিশ সুপার। কেন বেলদার ওসিকে তড়িঘড়ি ‘ক্লোজ’ করতে হল? জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের মন্তব্য, “এই পদক্ষেপ করতেই হত। এই অভিযোগের পরে তো আর ওসিকে পদে রাখা যেত না!”

পুলিশের এক সূত্রে খবর, কোনও মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। আর সেই তদন্তের নিশানায় পুলিশের একাধিক কর্তা, কর্মী। এমন ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুরে শেষ কবে ঘটেছে মনে করতে পারছেন না পুলিশের অনেকেই। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “জেলার বেশ কিছু মামলার তদন্ত সিআইডি-র হাতে রয়েছে। কিন্তু এমন মামলার কথা মনে পড়ছে না।”

খড়্গপুরে সিআইডি-র দফতর রয়েছে। জেলায় ওই তদন্তকারী সংস্থার হাতে যে সব মামলা রয়েছে তার বেশির ভাগই ওই দফতর থেকে দেখভাল করা হয়। দাসপুরের এই মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে অবশ্য খড়্গপুরের সব আধিকারিক-কর্মীকে নেওয়া হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সিআইডির যে একাধিক দল জেলার একাধিক এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, সেই দলে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বেশিরভাগই কলকাতার। সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবন থেকে এসেছিলেন তাঁরা। খড়্গপুরের এক কর্মী বলেন, “ওই মামলার ব্যাপারে কিছু জানি না।”

সবমিলিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ছ’বছর ছিলেন ভারতী ঘোষ। পুলিশ সুপার পদে থাকাকালীন নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। পুলিশ সুপার হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে তোলাবাজি, হুমকি দেওয়ার মতো অভিযোগ তুলে সরবও হয়েছে বিরোধীরা। দাসপুরের মামলাটিতে সবমিলিয়ে চারজনের নামে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের একাংশ মনে করছেন, তদন্তে আরও কয়েকজনের নাম জড়িয়ে যেতে পারে। আশঙ্কার শুরু সেখান থেকেই। বিরোধীদের নিশানায় তৃণমূল। তৃণমূল অবশ্য হাত ধুয়ে ফেলতেই ব্যস্ত!

সিআইডি-র হানায় তো পুলিশ মহলের একাংশও তটস্থ? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির মন্তব্য, “আমাদের সরকার মা- মাটি- মানুষের সরকার। কোনও অন্যায় বরদাস্ত করে না। এটা বাম-আমল নয়। প্রশাসন প্রশাসনের মতো চলে। সেখানে কোনও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকে না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বাম-আমলে প্রশাসনিক কাজে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকত। কেউ যদি মনে করেন, এখনও তা আছে তাহলে ভুল করছেন!” শাসক দলের এক জেলা নেতার সংযোজন, “হোক না পুলিশের লোক। অন্যায় করলে শাস্তি হবেই। কেউ বাঁচাতে পারবে না!”

CID Raid Pradip Rath Bharati Ghosh প্রদীপ রথ ভারতী ঘোষ
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy