গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে সংশয় ক্রমশ বাড়ছে পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই সংক্রান্ত টেন্ডার-জটের কথা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, তাজপুর প্রায় ফাঁকা। শঙ্করপুরে যেখানে বন্দরের ‘সাইট অফিস’ খোলা হয়েছিল, তালাবন্ধ তা-ও। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ স্থানীয়েরা।
২০১৯ সালে দিঘায় শিল্প সম্মেলন থেকে তাজপুর বন্দরের শিলান্যাস করেন মমতা। ২০২২ সালে আদানি গোষ্ঠীকে এই সংক্রান্ত আগ্রহপত্র দেওয়া হয়। ২৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হওয়ার কথা এখানে। শঙ্করপুরে ‘সাইট অফিস’ খোলা হয় । তার পরে আর কাজ এগোয়নি। এ বার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে তাজপুর বন্দর নিয়ে উচ্চবাচ্য হয়নি। বাজেটেও উহ্য থেকেছে তাজপুর। তার উপরে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তাজপুরের দরপত্র নতুন করে হবে মনে হয়, কিছু ত্রুটি থাকায়।’’
তাজপুর নিয়ে মন্তব্য করেননি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি। তবে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক জানান, আদানিদের আগ্রহপত্র-সহ একটি চিঠি রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক। তা মানতে চায়নি রাজ্য। এ দিকে, আদানি ছাড়াও, দেশের আরও এক বৃহৎ বিনিয়োগকারী সংস্থা তাজপুর বন্দরের জন্য দরপত্র জমা দিয়েছিল। কিন্তু তাদের নতুন করে সুযোগ দেওয়ার আগে, আইনি জটিলতা দূর করতে চাইছে রাজ্য।
তবে প্রশাসনের একটি সূত্র মনে করাচ্ছে, তাজপুর থেকে একশো কিলোমিটারের মধ্যেই এক দিকে হলদিয়া, অন্য দিকে ওড়িশার ধামরা বন্দর রয়েছে। ধামরা পরিচালনার দায়িত্বে আছে আদানি গোষ্ঠী। কিছু দিন আগে শোনা যাচ্ছিল, তাজপুরের বদলে মন্দারমণির কাছে আদানিরা গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তুলতে চেয়েছে। এখন আবার জল্পনা, তাজপুর বন্দরের জন্য নতুন করে ‘গ্লোবাল টেন্ডার’ ডাকা হবে।
তবে এলাকার পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দারা হতাশ। সাইকেলে রাজমিস্ত্রির কাজ সেরে ফিরছিলেন জলধা গ্রামের উত্তম সাহু। বললেন, ‘‘শুনেছিলাম, মালপত্র আসবে। বন্দরের কাজ শুরু হবে। কিন্তু যদি আদানিরা তা না করেন, তা হলে বন্দর গড়বে কে?’’ বোধড়া গ্রামে সৈকতের ধারে চা দোকান চালানো সৌমিত্র প্রধানের কথায়, ‘‘তাজপুরে সমুদ্র বন্দর আর ডেউচা পাঁচামিতে কয়লাখনির ঘোষণা এক সঙ্গেই হয়েছিল। সেখানে কাজ শুরু হলেও তাজপুরে কিছুই হল না।’’
২০১৯ থেকে তাজপুর বন্দরের সাইট অফিসে পাঁচ জন ‘গ্রিন গার্ড’ ছিলেন। তাঁরা দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ওই নিরাপত্তা রক্ষীদের এক জন বাপি নায়েক জানালেন, তাঁরা এখন মন্দারমণিতে কাজে গিয়েছেন। পর্ষদের এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার অপূর্বকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘বন্দর কর্তৃপক্ষ সাইট অফিস খুলেছিলেন। তাঁরা চেয়েছিলেন বলে ডিএসডিএ পাঁচ জন কর্মী নিয়োগ করেছিল। তবে অন্য কাজে থাকলেও তাঁরা সাইট অফিসেও যাচ্ছেন।’’ স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির মন্তব্য, ‘‘তাজপুর নিয়ে যা বলার, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)