E-Paper

প্রসাদের লাইনে ইব্রাহিম, জব্বররাও

দিন কয়েক আগে মন্দির থেকে প্রসাদী খোয়া আসে ২৫টি ব্লক এবং চারটি মহকুমাশাসকের দফতরে। শুক্রবার শুরু হয় রেশন দোকান থেকে প্রসাদ বিলি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ০৯:১৫
প্রসাদ নিতে হাজির সংখ্যালঘুরা। কোলাঘাটে।

প্রসাদ নিতে হাজির সংখ্যালঘুরা। কোলাঘাটে। নিজস্ব চিত্র।

কথা মতোই রেশন দোকান থেকে শুরু হয়েছে দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ আর ছবি বিলি। ‘হিডকো’র ব্যয় বরাদ্দে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই প্রসাদ তৈরি এবং বিলি নিয়ে বিতর্কের আবহেই রেশন দোকান থেকে জগন্নাথের মহাপ্রসাদ সাদরে নিয়ে যাচ্ছেন সংখ্যালঘুরাও।

দিন কয়েক আগে মন্দির থেকে প্রসাদী খোয়া আসে ২৫টি ব্লক এবং চারটি মহকুমাশাসকের দফতরে। শুক্রবার শুরু হয় রেশন দোকান থেকে প্রসাদ বিলি। শনিবার দেশপ্রাণ ব্লকের মুরাবনিয়া গ্রামে প্রসাদের জন্য ডিলারের বাড়িতে দাঁড়িয়েছিলেন শেখ জব্বর, চায়না বিবি, শেখ নাসিরের। চায়নার কথায়, ‘‘ভাল লাগছে। জগন্নাথ দেবের প্রসাদ আর মন্দিরের ছবি পেয়েছি।’’ জব্বর, নাসির জুড়লেন, ‘‘সরকার যে আমাদেরও প্রসাদ পাঠিয়েছে, এতে কৃতজ্ঞ।’’ স্থানীয় ডিলার জানান, গ্রামবাসীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন হাজার। অধিকাংশই সংখ্যালঘু। চারশোর বেশি প্রসাদের প্যাকেট এসেছিল। ৫৫ শতাংশ সংখ্যালঘুরা নিয়েছেন।

একই ছবি কোলাঘাটের মেচেদাতেও। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন অমলহান্ডা পঞ্চায়েত এলাকায় রেশন দোকানে লাইনে দাঁড়িয়ে প্রসাদ নিয়েছেন অনেক সংখ্যালঘু মানুষ। বিডিও অর্ঘ ঘোষ বলেন, ‘‘পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে হাসিমুখে জগন্নাথ দেবের প্রসাদের প্যাকেট বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।’’ মহিষাদলের নামালক্ষ্যার ইব্রাহিম আলি বললেন, ‘‘রাম মন্দিরের প্রসাদ পাশের বাড়িতে গিয়েছিল। আমরা পাইনি। এখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে জগন্নাথদেবের প্রসাদ নিয়ে এসেছি।’’ নন্দকুমার ব্লকের ব্যবত্তারহাট পশ্চিম পঞ্চায়েত এলাকার রেশন ডিলার গৌরহরি মাইতির দোকানে শনিবার পর্যন্ত মোট ৭৪৮ প্যাকেট প্রসাদ বিলি হয়েছে। তিনিও বলেন, ‘‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ পরিবার প্রসাদ নিয়েছে।’’ তমলুক শহরের লালদীঘিতেও এক ছবি। কাঁথির মহকুমাশাসক প্রতীক অশোক ধুমালের কথায়, ‘‘প্রসাদ সকলের জন্য।’’

তৃণমূলের অভিযোগ, অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের পরে প্রসাদ এবং ছবি শুধুমাত্র হিন্দু বাড়িতে বিলি করা হয়েছিল। তবে রাজ্য সরকার ধর্মের ভাগাভাগি করছে না। তৃণমূলের তমলুক জেলা সভাপতি সুজিত রায় বলেন, ‘‘এটা বাংলার সংস্কৃতি। এখানে হিন্দু-মুসলমান মিলেমিশে উৎসব উদ্‌যাপন করে, প্রসাদ ভাগ করে।’’

সম্প্রীতির ছবি সামনে থাকলেও প্রসাদ বিলির আয়োজন ঘিরে বিতর্ক পিছু থামছে না। জানা গিয়েছে, প্রসাদ তৈরির জন্য প্রতিটি জেলাশাসককে সব মিলিয়ে ৪২ কোটি টাকা দিয়েছে হিডকো। কাঁথির বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘রাজ্য সরকার যেমন মন্দির তৈরি করতে পারে না, তেমনই হিডকো প্রসাদ তৈরির জন্য টাকা দিতে পারে না।’’ মুর্শিদাবাদের দৃষ্টান্ত সামনে রেখে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্ন তুলেছেন, মুসলিম কারিগরের তৈরি মিষ্টি জগন্নাথের প্রসাদ হিসেবে বিলি করলে তার পবিত্রতা কোথায়!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Communal harmony

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy