E-Paper

গ্যাসে জগন্নাথের ছাপান্ন ভোগ

ইসকনের গৌড়ীয় পদ্ধতিতে ভোগ রান্নার সঙ্গে পুরীর কাঠের আঁচে ভোগ রান্না পদ্ধতির সঙ্ঘাতে নয়া জটিলতার সূত্রপাত হয়েছে দিঘায়।

কেশব মান্না

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০২৫ ০৯:৫৬
দিঘার মন্দিরে জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও শুভদ্রাকে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়।

দিঘার মন্দিরে জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও শুভদ্রাকে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়। —প্রতীকী চিত্র।

কখনও বিগ্রহ তৈরির কাঠ, কখনও নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা ‘ধাম’—একের পর এক বিতর্ক তৈরি হয়েছে দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র নিয়ে। সেই তালিকায় এ বার নতুন সংযোজন, ৫৬ ভোগ রান্নার পদ্ধতি। ইসকনের গৌড়ীয় পদ্ধতিতে ভোগ রান্নার সঙ্গে পুরীর কাঠের আঁচে ভোগ রান্না পদ্ধতির সঙ্ঘাতে নয়া জটিলতার সূত্রপাত হয়েছে দিঘায়।

দিঘার মন্দিরে জগন্নাথ দেব, বলভদ্র ও শুভদ্রাকে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা হয়। এরপর সেই ভোগ 'মহাপ্রসাদ' হিসেবে পূণ্যার্থীদের বিতরণ করা হয়। কিন্তু যে পদ্ধতিতে ভোগ রান্না করা হচ্ছে তা নিয়েও আপত্তি তুলেছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সেবায়িতেরা। দিঘায় গ্যাসের আঁচে ভোগ রান্নার প্রবল বিরোধিতা করেছেন তাঁরা।

প্রবীণ দয়িতাপতি রামচন্দ্র দাস মহাপাত্র বলেন,"দিঘার নতুন জগন্নাথ মন্দিরে শুধু ধাম শব্দই জুড়ে দেওয়া হয়নি, সেখানে প্রভুর ৫৬ ভোগ রান্না করা হচ্ছে গ্যাস উনুন জ্বেলে! এটা হওয়া অনুচিত।’’

হুবহু পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের আদলে এবং সেখানকার নিয়মকানুন অনুসরণ করে দিঘার মন্দির তৈরি হয়েছে বলে সরকারি ভাবে দাবি করে হয়েছিল। দিঘায় জগন্নাথ মন্দিরের পরিচালনার দায়িত্বে ইসকন থাকলেও মন্দির নির্মাণপর্বে এবং বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার সময় বিশেষ দায়িত্বে ছিলেন পুরীর মন্দিরের দয়িতাপতি। পুরীর মন্দিরে মহাপ্রসাদ রান্নার নির্দিষ্ট নিয়মাবলী রয়েছে। রয়েছে বিশেষ ভোগঘর। রান্নার জন্য পোড়া মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হয়। কাঠের আঁচে রান্না হয়। প্রতিটি পদ রান্নার নির্দিষ্ট সময় এবং পদ্ধতি থাকে।

দিঘায় জগন্নাথ দেবের মহাপ্রসাদ তৈরির আলাদা ভোগঘর রয়েছে। তবে সেখানে কাঠের জ্বালানি ব্যবহারের উনুন নেই। এলপিজি গ্যাস ব্যবহার করে ভোগ রান্না হচ্ছে। তার জন্য আনা হয়েছে ১০ টি র বেশি চুল্লি। এতেই 'জগন্নাথ পরম্পরা' ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে ওড়িশার সংবাদ মাধ্যমেও গত কয়েকদিন ধরেচর্চা চলছে।

উল্লেখ্য, দিঘার ইসকন-পরিচালিত জগন্নাথ মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে সংবাদমাধ্যমে ৫৬ ভোগ নিবেদন করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দয়িতাপতি সম্প্রদায়ের সম্পাদক রামকৃষ্ণ দাস তথা রাজেশ দয়িতাপতি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘প্রভুকে ৫৬ ভোগ অর্পণ করতে হয়। কিন্তু এঁরা (ইসকন) কি সে সব করতে পারবে! জগন্নাথ পরম্পরা সম্পর্কে এঁরা তো জানে না।’’

যদিও দিঘার মন্দিরের দায়িত্বে থাকা ইসকনের সহ সভাপতি রাধারমন দাস বলেন,"পুরীর মন্দিরের রীতিনীতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। ওদের রীতি দেখলে আমরা পুরোটাই ভুল করছি। কিন্তু চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা ও আদর্শ মেনে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির পরিচালিত হচ্ছে। রাজ্য সরকার আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে। আমরা আমাদের গৌড়ীয় রীতিতে সবকিছু ঠিকঠাক করছি। এতেঅপরাধ কোথায়!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

digha Digha Jagannath Temple

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy