Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
গোষ্ঠী সংক্রমণ নয়, বলছে প্রশাসন
Coronavirus in Midnapore

মাত্র চারদিনে তিনশো ছুঁইছুঁই

করোনা সংক্রমণের নিরিখে যেন ঝোড়ো ব্যাটিং করছে পশ্চিম মেদিনীপুর!

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২০ ০২:৫১
Share: Save:

৭ জুন সেঞ্চুরি। ১০ জুন ডবল সেঞ্চুরি। আর ১৪ জুন তিনশোর দোরগোড়ায়।

করোনা সংক্রমণের নিরিখে যেন ঝোড়ো ব্যাটিং করছে পশ্চিম মেদিনীপুর! নতুন করে ৪৯ জন আক্রান্তের হদিস মেলার পরে শনিবারই জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছিল ২৯৪। রবিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী সংখ্যাটা হয়েছে ২৯৫। আক্রান্তদের প্রায় সকলেই ভিন্ রাজ্য ফেরত পরিযায়ী শ্রমিক। যে ভাবে খুব কম সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে আক্রান্তের সংখ্যা একশো, দু’শো থেকে তিনশোর গণ্ডি পেরিয়ে গেল তা অনেকের কাছেই উদ্বেগের ঠেকছে। অনেকেরই আশঙ্কা, তবে কি গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে!

জেলা প্রশাসনের অবশ্য দাবি, এখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ হয়নি। নতুন করে যাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠই পরিযায়ী শ্রমিক। দেখা যাচ্ছে, শুধু ওই শ্রমিকদেরই সংক্রমণ হয়েছে। তাঁরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের প্রায় কেউই সংক্রমিত হননি। পরিবারের কেউও সংক্রমিত নন। এতে স্পষ্ট, জেলায় করোনা সংক্রমণ এখনও গোষ্ঠী আকার ধারণ করেনি। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের মতে, আক্রান্তদের বেশিরভাগই মহারাষ্ট্র, দিল্লি, গুজরাতের মতো সংক্রমণ-প্রবণ রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। এঁদের একাংশের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা ছিলই। ওই সূত্র আরও মনে করিয়ে দিচ্ছে, এই সময়ের মধ্যে জেলায় করোনা পরীক্ষার হার বেড়েছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে।

জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘সংক্রমণ রোধের সব রকম চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অযথা উদ্বেগের কিছু নেই।’’ জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমারও বলছেন, ‘‘নতুন করে যাঁদের সংক্রমণ ধরা পড়ছে, তাঁদের অনেকেই উপসর্গহীন। বলা ভাল, বেশিরভাগই। এ জেলায় সংক্রমণ কমিউনিটিস্তরে ছড়ায়নি। সংক্রমিতেরা যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের কোয়রান্টিনে থাকার কথা বলা হয়েছে। নজরদারিও চলছে।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডলের কথায়, ‘‘পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে। অহেতুক উদ্বেগের কিছু নেই। এই সময় সতর্ক থাকতে হবে।’’

চলতি মাসের শুরুতেও ছবিটা ছিল অন্য। ১ জুন জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪০। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, গত তিন সপ্তাহে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরেছেন। এরপরই আক্রান্ত হু হু করে বেড়েছে। নতুন নতুন এলাকায় সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে। সংক্রমণ এমন হারে বেড়েছে যে, করোনা আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যের জেলাগুলির মধ্যে প্রথম ছয়ে স্থান করে নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। পশ্চিম মেদিনীপুরের আগে রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পরই পশ্চিম মেদিনীপুরের স্থান। এই সময়ের মধ্যে ৭ জুন, একদিনেই ৮৪ জন সংক্রমিতের হদিস মিলেছিল। ১৩ জুন, একদিনেই ৪৯ জন সংক্রমিতের খোঁজ পাওয়া যায়।

ভিন্ রাজ্যগুলি থেকে এ জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬৮ হাজার মানুষ ফিরেছেন। বেশিরভাগই পরিযায়ী। এখনও পর্যন্ত জেলায় প্রায় ২০ হাজার জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। ভিন্ রাজ্য ফেরতদের বাকি সকলের একে একে পরীক্ষা হবে। এখানেই সংক্রমণ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন অবশ্য উপসর্গহীনদের নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে না। যাঁদের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে, তাঁদেরই নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে। ফলে, নমুনা সংগ্রহ খানিক কমেছে। ১২ জুন যেমন ২৪৯ জনের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে, ৯ জুন ৮১ জনের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সংযোজন, ‘‘করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রোজ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়লেও সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যাটাও কিন্তু কম নয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এটাও অনেকটা আশার আলো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Midnapore Community Transmission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE