Advertisement
E-Paper

হারানো ব্যাগের সূত্রেই কি বাবা-ছেলের পুনর্মিলন!

উদ্ধার হওয়া একটা ব্যাগের সূত্র ধরে বাবা জানলেন, ছেলে সম্ভবত রয়েছে কল্লোলিনীতেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ০৬:১২
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

জামবনি: করোনায় দিদির মৃত্যু হয়েছে। অথচ প্রবাসে থাকা তরুণকে সে খবর দেননি পরিজনেরা। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন করেন ওই তরুণ। জামবনির বেলিয়া গ্রামের বাড়িতে বসে চিন্তার প্রহর কাটতে থাকেন বৃদ্ধ বাবা। অবশেষে কলকাতায় উদ্ধার হওয়া একটা ব্যাগের সূত্র ধরে বাবা জানলেন, ছেলে সম্ভবত রয়েছে কল্লোলিনীতেই।

অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী রঞ্জিতকুমার পালের দুই সন্তান। মৌসুমি ও বিশ্বজিৎ। বছর একত্রিশের বিশ্বজিৎ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। রাজস্থানের একটি সংস্থায় কাজ করতেন। গত বছর ডিসেম্বরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। তারপরে অনলাইনে বেঙ্গালুরুর একটি সংস্থায় ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কোর্স করছিলেন। ওই কোর্সের প্র্যাকটিক্যালের জন্য গত ফেব্রুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে যান বিশ্বজিৎ। সেখানে পেয়িং গেস্ট হয়ে একজনের বাড়িতে থাকতেন। নিয়মিত ফোনে বাবা ও দিদির সঙ্গে কথাও হতো তাঁর।

বাবা ও মেয়ে একসঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হন। গত ২৫ মে ঝাড়গ্রাম করোনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁদের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বাবা ও দিদিকে ফোন করে স্বাস্থ্যের নিয়মিত খোঁজ নিতেন বিশ্বজিৎ। গত ২৮ মে হাসপাতালে মৌসুমির মৃত্যু হয়। তবে সে খবর রঞ্জিত জানতে পারেন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে, গত ৭ জুন। বিশ্বজিৎ বার বার দিদির নম্বরে কল করে সুইচড অফ পান। গত ১১ জুন সম্পর্কিত কাকা পল্টন পালকে ফোন করে দিদির মৃত্যু সংবাদ জেনে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিশ্বজিৎ। মৌসুমিকে কেন ভাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি সেই কারণ জানতে চেয়ে উষ্মাপ্রকাশ করে বিশ্বজিৎ ফোন কেটে দেন। তারপর থেকে তাঁর ফোন সুইচড অফ।

গত শনিবার অচেনা নম্বর থেকে ফোন পান রঞ্জিত। কলকাতার সোনারপুরের এক ব্যক্তি জানান, তিনি ঢাকুরিয়া লেকের কাছে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পেয়েছেন। সেই ব্যাগে বিশ্বজিৎ পালের পাসপোর্ট ও ফোন নম্বর পান। সেই নম্বর পেয়েই তিনি ফোন করছেন। রঞ্জিত ওই ব্যক্তির কাছ থেকে জানতে পারেন, এলাকাটি রবীন্দ্র সরোবর থানার অধীনে। এর পরেই রবিবার বিষয়টি জামবনি থানায় জানান রঞ্জিত। জামবনি থানা থেকে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সোমবার ছেলের নিখোঁজ ডায়েরি করার জন্য রবীন্দ্রসরোবর থানায় সম্পর্কিত ভাই পল্টন সহ কয়েকজনকে পাঠান রঞ্জিত। এ দিনই ওই ব্যাগটি থানায় জমা দিতে আসেন সোনারপুরের বাসিন্দা সিরাজ লস্কর।

এরপরের ঘটনা আরও নাটকীয়। এ দিন দুপুরে রবীন্দ্র সরোবর থানার অফিসারের ফোন পান রঞ্জিত। তাঁকে অফিসারটি জানান, হারিয়ে যাওয়া ব্যাগ ফেরত পাওয়া গিয়েছে। থানার অফিসারের সঙ্গে কথাবার্তা বলে রঞ্জিত জানতে পারেন, রবিবার বিশ্বজিৎ পাল নামে একজন রবীন্দ্র সরোবর থানায় ব্যাগ হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ নথিভুক্ত করেছেন। সেই অভিযোগপত্রে যে দু’টি মোবাইল ফোনের নম্বর দেওয়া হয়েছে তার একটি বিশ্বজিতের, অন্যটি তাঁর বাবা রঞ্জিতের।

বিশ্বজিতের নম্বরটি সুইচড অফ থাকায়, রঞ্জিতের নম্বরে কল করেছিলেন রবীন্দ্র সরোবর থানার অফিসারটি। রঞ্জিত বলেন, ‘‘ঘরের ছেলে ঘরে ফিরুক এটাই চাই। জামবনি থানা যথেষ্ট সাহায্য করেছে।’’ জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীও পুলিশ মহলে যোগাযোগ করে বিশ্বজিতকে খুঁজে বের করার জন্য তদ্বির শুরু করেছেন। প্রসূন বলেন, ‘‘এদিন বেলিয়া গ্রামে গিয়ে রঞ্জিতবাবুর সঙ্গে দেখা করেছি। বিশ্বজিতকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ মহলে অনুরোধও করেছি।’’

হারানো ব্যাগের সূত্র ধরে কি ছেলের সঙ্গে ফের যোগাযোগ হবে বাবার। হারানো ব্যাগ কি ফিরিয়ে দেবে বাবা-ছেলের হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কের উষ্ণতা!

coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy