করোনার দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচতে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পড়ছে লম্বা লাইন। মানুষের এই বিপদের সময়ে ওই লাইনকে হাতিয়ার করেই কোলাঘাটে গজিয়ে উঠছে দালাল চক্র! অভিযোগ, টিকাকরণের কুপন সংগ্রহের লাইনে স্থান দখল করে রাখছে ওই ‘দালালে’রা। তাদের টাকা দিলেই মিলছে লাইনে দাঁড়ানোর ছাড়পত্র।
প্রতিষেধকের সরবরাহ না থাকায় জেলা জুড়ে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল। চলতি মাসে জেলায় নতুন করে টিকা আসে। সেই টিকার মধ্যে কোলাঘাট ব্লক ২৪০ জনের টিকা পায়। শুক্র এবং শনিবার— এই দু’দিন ধরে সেই টিকা দেওয়া হবে টিকা। যে ব্যক্তি আগে যাবেন, তিনি আগে টিকা পাবেন— এই নিয়মে পাইকপাড়ি গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় টিকাকরণের কুপণ। ওই কুপন পাওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার কাকভোর থেকে হাসপাতালের সামনে লাইন দিতে শুরু করেন আগ্রহী মানুষজন। কুপন বিলি শুরু হয় দুপুর ১টায়। অভিযোগ, কুপন সংগ্রহের লাইনের একটা বড় অংশ স্থানীয় কিছু ‘দালাল’ দখল করে নেয়। তাদের টাকা দিলে তারা সেই ছেড়ে দিচ্ছে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় করোনা সংক্রমণের নিরিখে যে কয়েকটি ব্লক শীর্ষে রয়ছে, তার মধ্যে অন্যতম কোলাঘাট। সেখানে এমন ‘দালালরাজ’ বন্ধ করার দাবিতে কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে স্মারকলিপি দিয়েছে হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা সংগঠন। সংগঠনের ব্লক সভাপতি নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘ব্লকের মধ্যে একমাত্র পাইকপাড়ি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হচ্ছে। আগে এলে আগে পাবে, নিয়মে চললে ব্লকের সিংহভাগ মানুষ টিকা পাবেন না। স্থানীয়রাই উপকৃত হবেন। দালালদের টাকা দিয়ে লাইনে জায়গা কিনতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের উচিত ব্লকের অন্তত পাঁচটি জায়গায় টিকাকরণ কেন্দ্র খোলা।’’
এ বিষয়ে কোলাঘাট ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শিবশঙ্কর খান বলেন, ‘‘টিকার জোগান কম থাকায় মানুষজন ১৪-১৫ ঘণ্টা আগে থেকে লাইন দিচ্ছেন। খুব শীঘ্রই বেশি পরিমাণে টিকা আসবে। তখন ব্লক জুড়ে অনেকগুলি জায়গায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। দালালদের লাইন দখলের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, চলতি মাসে জেলায় এসেছে কোভিশিল্ডের ৩২ হাজার ৫০০টি ডোজ। কোভ্যাক্সিন এসেছে চার হাজার ৬৪০ টি। এর বাইরে হকার, পরিবহণ কর্মী, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জন্য অতিরক্ত ২৫ হাজার কোভিশিল্ড এসেছে জেলায়। চলতি সপ্তাহে ওই স্বাস্থ্য জেলায় ৪৫ বছরে ঊর্ধ্বে থাকা প্রায় দু’হাজার মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। স্পেশ্যাল ক্যাটিগরিতে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে থাকা ৩৬০ জন এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩৫৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।