সবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ। দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি সদর শহর মেদিনীপুরে। জেলায় দৈনিক সংক্রমিতের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগেরই হদিস মিলছে এ শহরে। প্রশাসন সূত্রে খবর, ৫ থেকে ১১ এপ্রিল- এই সাতদিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে ২১৯ জন করোনা সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। এর মধ্যে ৬০ জন মেদিনীপুরের। শতাংশের নিরিখে যা প্রায় ২৮ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানে শহরে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে সদর শহরে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে।
জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে সচেতন করা হচ্ছে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘এই সময়ে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার অবশ্যই করতে হবে। দূরত্ববিধি মেনে চলতে হবে নিজেদের সুরক্ষার জন্যই।’’ সম্প্রতি করোনা মোকাবিলায় গঠিত জেলাস্তরের টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়েছে। সেখানে জেলার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলাদাভাবে মেদিনীপুরের পরিস্থিতির কথাও উঠে এসেছে। পরে মেদিনীপুরে মহকুমাস্তরের টাস্কফোর্সের বৈঠক হয়েছে। পুরসভার আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ এবং পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
জেলায় সব দলই চুটিয়ে ভোট- প্রচার করেছিল। সভা, সমাবেশে ভিড় হয়েছিল। এখনও চায়ের দোকানে, বাজারে ভিড় দেখা যাচ্ছে। চৈত্র সেলের বাজারেও রমরমা কেনাবেচা চলেছে। এ সবই জেলায় করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে চলার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে জেলার অনান্য এলাকার তুলনায় মেদিনীপুরে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনা সংক্রমণ। যার জেরে ফিরছে বছর খানেক আগের স্মৃতি। এখনই সকলে সতর্ক না- হলে অদূরেই নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে এখানকার করোনা পরিস্থিতি বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকে। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালে শয্যা পেতে কালঘাম ছুটছে করোনা রোগীদের। মেডিক্যালে এইচডিইউ রয়েছে। এখানে ৩০টি শয্যা থাকার কথা। সব শয্যা চালু নেই বলে অভিযোগ। বুধবার সকালে ভর্তি হতে এসে এক করোনা রোগী চরম সমস্যায় পড়েন। তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘‘এখানে বেড নেই। কে বলেছে এখানে আসতে? পারলে খড়্গপুরে কিংবা শালবনিতে চলে যান!’’
প্রশাসন সূত্রে খবর, ৫ থেকে ১১ এপ্রিল- এই সাতদিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬,৩৬৮ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে আরটিপিসিআরে ৩,৮১৭ জনের, অ্যান্টিজেন টেস্টে ২,২৪৭ জনের এবং ট্রুন্যাটে ৩০৪ জনের। রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ এসেছে ২১৯ জনের। করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে রয়েছেন মেদিনীপুরের ৬০ জন, খড়্গপুরের ৪৪ জন (রেলশহরের ২২। বাকি ২২ রেল, আইআইটি, ইএফআর), সোনাখালির ২৫ জন, শালবনির ১১, হিজলির ২৫ জন, ডেবরার ১১ জন। জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে মেদিনীপুরেই সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন ৬৬ জন। বেশিরভাগই হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। সংক্রমিতদের সংস্পর্শে থাকা আরও অনেকের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং টিকাকরণে জোর দেওয়া হচ্ছে। মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শহরে মাইকিং- প্রচার চলছে।’’ জেলার উপ- মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘করোনার প্রতিষেধক নিলেও স্বাস্থ্যবিধি কিন্তু মেনে চলতে হবে।’’
শুধু মেদিনীপুর নয়, জেলা জুড়েই বেলাগাম হতে পারে করোনা। এখনই সেই ইঙ্গিত মিলছে। এক বছর আগের করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে এখনকার করোনা পরিস্থিতির তেমন কোনও তফাৎ খুঁজে পাচ্ছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা ৮- ১০ থেকে বেড়ে ৪০- ৫০ হয়েছে। প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ মিলিয়ে সদর শহরে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ৩,৪৯১। মেদিনীপুরের মতো শহরের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা খুব কম নয়।