অনেকেই ফিরেছেন। এখনও ফিরছেন। তবে গত বছরের থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার হিড়িক এ বার অনেক কম। তাই গত বছরের থেকে ছবিটাও এ বার অনেকটাই আলাদা।
ভিন রাজ্য বাড়ি ফিরলেই তাঁকে ১৪ দিন কোয়ারান্টিন থাকতেই হবে— এ বারও এমনই নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে এ বার অবশ্য ফিরে আসা পরিযায়ীদের আলাদা রাখার জন্য সরকারি ভাবে কোনও কোয়রান্টিন সেন্টার খোলা হয়নি। তাই যাঁদের বাড়িতে আলাদা থাকার জায়গা নেই, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন। সরকারি নজরদারিও ঢিলেঢালা বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক মানছেন, “এ বার পরিযায়ী শ্রমিকেরা বিক্ষিপ্ত ভাবে বাড়ি ফিরছেন। তাই আলাদা ভাবে কোয়রান্টিন সেন্টার খোলার প্রয়োজন হয়নি। তবে যাঁরা ফিরছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। সরকারি নজরদারিতেই তাঁরা বাড়িতে থাকছেন।”
গত বছর কোয়রান্টিন সেন্টার হিসেবে স্থানীয় স্কুল বাড়িগুলিকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আশা কর্মীরা সকাল-সন্ধ্যায় গিয়ে তাঁদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেন। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয়েছিল। সরকারি ভাবে যাবতীয় তথ্য নথিভুক্ত করাও হতো। ১৪ দিন হয়ে গেলে প্রশাসনের নজরদারিতে বাড়ি ফিরতেন পরিযায়ীরা। তবে এ বার সেসবের কিছুই নেই। জেলা প্রশাসনের ব্যাখা, গত বছর এক সঙ্গে অনেকে ফিরেছিলেন। তাই তাঁদের সরকারি স্কুল ঘরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ বার বিক্ষিপ্ত ভাবে যাঁরা বাড়ি ফিরছেন, তাঁরা বাড়িতেই থাকছেন। আলাদা করে কোয়ারন্টিন সেন্টার খোলার জরুরি হয়নি। তবে স্থানীয় ভাবে সেই ব্যবস্থা একেবারেই ছিল না, এমনটা নয়। দাসপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি আশিস হুতাইত যেমন বলেন, “সরকারি ভাবে না হলেও স্থানীয় ভাবে দাসপুর-২ ব্লকে বেশ কিছু স্কুল, ক্লাব ঘর প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। প্রথমের দিকে সেখানে দু’চার জন করে ছিলেনও। তবে এখন সেভাবে কেউ নেই।”
জেলা প্রশাসন সরকারি ভাবে এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার প্রবণতাকে ‘বিক্ষিপ্ত’ বললেও মুম্বই স্বর্ণশিল্পী সেবা সঙ্ঘের কালীদাস সিংহরায় এবং দিল্লি স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের কার্তিক ভৌমিক কিন্তু বলছেন, “গতবারের মতো এবার একসঙ্গে ফেরেনি। এটা ঠিক। তবে এখানে কিন্তু সব প্রায় ফাঁকা। অনেকেই ফিরে গিয়েছেন।”
জানা গিয়েছে, এ বার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে দাসপুরে ফেরার হার সবচেয়ে বেশি। দাসপুর-২ ব্লকে এখনও অবধি সাড়ে ৮ হাজারের বাশি পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছেন। চন্দ্রকোনা-১ ও কেশপুর ব্লকে সেখানে কমবেশি দুশো-আড়াইশো জন ফিরেছেন। ঝাড়গ্রাম জেলায় অবশ্য তুলনায় এবার অনেক কম পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের দিকে প্রশাসনের সতর্ক নজর আছে। জরুরি প্রয়োজনে সেফ হোম তৈরি হয়েছে। নজরদারির জন্য ব্লকের প্রতি পঞ্চায়েতে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। কেউ বাড়ি ফিরলেই নাম নথিভুক্ত করে যাবতীয় ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশা কর্মীরাও বাড়ি বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করাও হচ্ছে।’’ প্রশাসন এই দাবি করলেও ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই কিন্তু তা মানছেন না। তাঁদের ক্ষোভ, সরকারি ভাবে কোনও কোয়রান্টিন সেন্টার যেমন নেই, পাশে দাঁড়ানোর কোনও উদ্যোগও তেমন নেই। গত বছর হলেও এ বার বিকল্প রোজগারের কোনও ব্যবস্থাও করা হয়নি। যোগাযোগও করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রও মানছে, এ বার বিক্ষিপ্ত ভাবে বাড়ি ফেরায় পরিযায়ীদের সঠিক তথ্য প্রশাসনের হাতে নেই। (তথ্য সহায়তা: বরুণ দে ও কিংশুক গুপ্ত)