এগরায় ঐক্যের ছবি আঁকল খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
করোনার বিরুদ্ধে দেশবাসীর ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের বার্তা দিতে প্রদীপ, মোমবাতি বা মোবাইলে মাধ্যমে আলো জ্বালানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই আহ্বানে ঘরের আঙিনা থেকে গৃহহীনদের বারান্দা থেকে বহু জায়গাতেই জ্বলে উঠল মোমবাতি, প্রদীপ। ফাটল বাজিও। সেই সঙ্গে শোনা গেল জয় শ্রীরাম ধ্বনিও। তবে প্রধানমন্ত্রীর এমন আহ্ববানে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়াও।
রবিবার রাত ৯টায় সমস্ত আলো নিভিয়ে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানোর জন্য এদিন সকালে তমলুক শহরের বড়বাজার থেকে হলদিয়া, কাঁথি ও এগরায় দোকানে কিছু বাসিন্দা প্রদীপ-মোমবাতি কেনার জন্য তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। তমলুকের বড়বাজারে এদিন দশকর্মা সামগ্রীর দোকানে মাটির প্রদীপ, মোমবাতি সাজিয়ে রাখা হয়েছিল ক্রেতার আশায়। যদিও দোকানে সেভাবে ভিড় জমেনি। মাটির প্রদীপ কিনতে আসা শিবনারায়ণ সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ে সামিল করতে প্রধানমন্ত্রী বাড়িতে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালাতে বলেছেন। এতে রাজনীতির কিছু নেই।’’
কাঁথি শহরের অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। বাসিন্দাদের মোমবাতি ও মাটির প্রদীপের চাহিদার কথা ভেবে কয়েকটি মুদি দোকানে মোমবাতি ও প্রদীপ রাখা হয়েছিল। শহরের ক্যানালপাড়ের এক দোকানদার জানান, সকাল থেকে প্রচুর লোক মোমবাতি কিনেছেন। তবে মাটির প্রদীপের চাহিদা ছিল না। শহরের বাসিন্দা প্রলয় ধর বলেন, ‘‘অনেক ঘুরেও মোমবাতি বা প্রদীপ কেনার জন্য। পাইনি। তবে মোবাইলে ফ্ল্যাশ আলো জ্বেলে সংহতি রক্ষার চেষ্টা করব।’’
কোলাঘাটের দেড়িয়াচকের বাসিন্দা শিক্ষক কার্তিক সাহু বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ২২ মার্চ স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেছি শঙ্খধ্বনি, খোল, কাঁসর বাজিয়ে। কিন্তু ঘরে আলো বন্ধ করে প্রদীপ জ্বালানোর কথা কেন বলেছেন জানি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই কর্মসূচি পালন করছি না।’’
প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে কটাক্ষ করে পাঁশকুড়া ব্লক তৃণমূল সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘উনি একজন ব্যর্থ প্রধানমন্ত্রী। দেশের এমন সঙ্কট মুহূর্তেও রাজনীতি করছেন। প্রদীপ জ্বালিয়ে আমজনতাকে দলে টানতে চাইছেন।’’
হলদিয়ার সিপিএম বিধায়ক তাপসী মণ্ডল বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। এর সঙ্গে করোনার কোনও সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি মোমবাতি জ্বালাব না।’’ এগরা শহর তৃণমূল সভাপতি জয়ন্ত সাহু বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর আর্জিমতো মোমবাতি কিংবা প্রদীপ জ্বালানোর জন্য আমাদের দলীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’’
বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে দেশের মানুষ পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে। প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো নিয়ে কেউ কটাক্ষ বা রাজনীতি করতেই পারেন। তবে প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালিয়ে ফের ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার বার্তা দেবে দেশের মানুষ।’’
বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের রিজিওনাল ম্যানেজার শ্যামল হাজরা বলেন, ‘‘আলো বন্ধের জেরে যাতে সমস্যা না হয় সে জন্য জেলার সমস্ত সাবস্টেশন ও বিদ্যুৎ বণ্টনের সঙ্গে জড়িত কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’
কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাত ৯ টায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শাটডাউন করার মতো কোনও নির্দেশ আমরা রাজ্য থেকে পাইনি। তাই এই ধরনের কোনও কর্মসূচি এখানে পালন করা হচ্ছে না। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ যেমন স্বাভাবিক ছিল তেমনি রয়েছে।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy