Advertisement
E-Paper

পরিবারের কথা ভেবেই রোজ নদী সাঁতরে দোকান খোলেন শক্তি

দু’পারের মানুষের যোগাযোগ বলতে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো। বর্ষায় সে টুকুও হারিয়ে যায়। তখন ভরসা শুধু নৌকা। সবং এলাকার মানুষের জীবিকার অনেকটাই নির্ভর করে পটাশপুরের উপর।

গোপাল পাত্র

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০৩:০১
রোজ এ ভাবেই কেলেঘাই পেরিয়ে দোকান খুলতে যান শক্তি জানা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

রোজ এ ভাবেই কেলেঘাই পেরিয়ে দোকান খুলতে যান শক্তি জানা। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

দায়িত্ববোধ আর বেঁচে থাকার কঠিন লড়াইয়ের কাছে হার মেনেছে নদীর প্রতিকূলতা। তাই জীবিকার তাগিদে নদী সাঁতরে রোজ দু’বেলা এ পারে অন্য জেলায় এপারে এসে মুদির দোকান সামলাচ্ছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা শক্তি। অতিমারি পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার কঠিন লড়াই যেন আরও বেশি দায়িত্বশীল করে তুলেছে এই মানুষটিকে।

এর পারে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর, অন্য পারে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং। দুই পাড়ের মানুষের জীবন জীবিকার বেশিরভাগ অংশ জুড়ে রয়েছে কেলেঘাই নদী। দু’পারের মানুষের যোগাযোগ বলতে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো। বর্ষায় সে টুকুও হারিয়ে যায়। তখন ভরসা শুধু নৌকা। সবং এলাকার মানুষের জীবিকার অনেকটাই নির্ভর করে পটাশপুরের উপর। পশ্চিমের বহু মানুষ পটাশপুরের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসা করেন। সেরকমই একজন সবং থানা এলাকার রাউতরা গ্রামের বছর পঁয়তাল্লিশের শক্তি জানা। পটাশপুরের পাথরঘাটা বাজারে মুদি দোকান রয়েছে তাঁর। দোকান খুলতে প্রতিদিন দু’বেলা কেলেঘাই পেরিয়ে সবং থেকে পটাশপুরে আসতে হয়। অতিমারি পরিস্থিতিতে বাড়তি সতর্কতায় দুই জেলার যোগাযোগ বিছিন্ন করতে বাঁশের সাঁকো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে যাতায়াতের উপায় বন্ধ। প্রথম প্রথম দোকান বন্ধ রেখেছিলেন। একে উপার্জন বন্ধ। তার উপর বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, দুই ছেলে ও স্ত্রীর দায়িত্ব। সংসার সামলানোর গুরু দায়িত্বই তাঁকে করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও এপারে দোকান খুলতে বাধ্য করে।

কিন্তু দোকানে যাবেন কী ভাবে?

অনেক ভেবে ঠিক করেন, কেলেঘাই নদী সাঁতরে পটাশপুরে গিয়ে দোকান খুলবেন। বাড়ির অনেকে এমন বিপদ মাথায় করে দোকান খুলতে বারণ করলেও সংসারের কথা ভেবেই বসে থাকতে পারেননি শক্তি। রোজ সকালে বাড়ি থেকে দোকানের জিনিসপত্র ও সাইকেল নিয়ে নদীর পাড়ে চলে আসেন। গামছা পরে প্রায় একশো মিটার কেলেঘাই নদীর জল সাঁতরে এপারে প্রথম জিনিস পত্র রেখে ফের ওপারে সাঁতরে ফিরে যান। ফের সাইকেল কাঁধে নিয়ে নদী সাঁতরে এ পারে এসে ভিজে কাপড় পাল্টে সাইকেলে জিনিসপত্র বেঁধে দেড় মাইল পেরিয়ে পাথরঘাটা বাজারে দোকান খোলেন। দোকান সামলে ফের দুপুরে একই ভাবে নদী সাঁতরে গ্রামে ফেরেন। ফেরে বিকেলে দোকানে এসে আবার সন্ধ্যায় বাড়ির পথ ধরেন। বাঁচার জন্য শক্তির প্রতিদিনের লড়াইয়ে এখন নীরব সাক্ষী কেলেঘাইয়ের স্থির জল।

নিজের লড়াই নিয়ে শক্তি কী বলেন!

তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে এতগুলো পেট। বসে থাকলে আয় কোথায়? তাই ঝুঁকি থাকলেও নদী সাঁতরে পটাশপুরে গিয়ে দোকান খুলতে হয়। কষ্ট হলেও পরিবারের কথা ভেবেই সেই কষ্ট স্বীকার করছি।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy