E-Paper

এক যুগ পরে আদিবাসী গ্রামে সিপিএম নেতা

চন্দ্রি গ্রাম পঞ্চায়েতটি গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত। মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে এলাকাছাড়া হন এখানকার দাপুটে সিপিএম নেতা প্রশান্ত দাস।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৩ ০৮:৪৮
১৪ বছর পরে চন্দ্রির জনজাতি গ্রামে সিপিএম নেতা প্রশান্ত দাস। নিজস্ব চিত্র

১৪ বছর পরে চন্দ্রির জনজাতি গ্রামে সিপিএম নেতা প্রশান্ত দাস। নিজস্ব চিত্র kingshuk.gupta

মাওবাদী সন্ত্রাসপর্বে যে সিপিএম নেতার মুণ্ডু চাই বলে মিছিল করতেন গ্রামবাসী, ১৪ বছর পরে তাঁকেই কার্যত গ্রামে বরণ করে নেওয়া হল। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে ঝাড়গ্রাম ব্লকের চন্দ্রিতে এমন ঘটনায় উজ্জীবিত সিপিএম নেতৃত্ব।

চন্দ্রি গ্রাম পঞ্চায়েতটি গোপীবল্লভপুর বিধানসভার অন্তর্গত। মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে এলাকাছাড়া হন এখানকার দাপুটে সিপিএম নেতা প্রশান্ত দাস। প্রশান্ত তখন ছিলেন দলের আগুইবনি লোকাল কমিটির সম্পাদক। মাওবাদীরা তাঁকে 'শ্রেণিশত্রু' চিহ্নিত করে এলাকায় পোস্টার দিয়েছিল। ‘হার্মাদ’ বলে বিঁধেছিল তৃণমূল। এ বার সেই চন্দ্রি পঞ্চায়েতের ১০টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, চন্দ্রির জঙ্গলঘেরা জনজাতি অধ্যুষিত কলাবনি ও ধানঘোরি গ্রামে এতদিন কর্মসূচি করা যায়নি। গ্রামে দলের কেউ ঢোকার সাহস পাননি।

কলাবনিতে সাঁওতাল সম্প্রদায় আর ধানঘোরিতে আদিবাসী মুন্ডাদের সংখ্যাধিক্য। দুই গ্রামের দু’টি আসন মিলিয়ে জনজাতি ভোটার ৫৬৪জন। রবিবার দুই গ্রামের জনজাতিদের আমন্ত্রণেই হাজির হন সিপিএমের বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলা কমিটির সদস্য প্রশান্ত দাস। তিনিও মানছেন, ২০০৯ সাল থেকে ওই দু’টি গ্রামে দলের কেউই ঢুকতে পারেননি। তবে এখন কেন আমন্ত্রণ? ধানঘোরির বাসিন্দা মন্টু সিং বলছেন, ‘‘আগে এটা সিপিএমের এলাকা ছিল। ২০০৯-১০ সালে এলাকায় মাওবাদীদের তাণ্ডবে আমরা ভয়ে সিপিএম করব না বলে অঙ্গীকার করে রেহাই পেয়েছিলাম। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোট থেকে গ্রামের সবাই তৃণমূল সমর্থক হয়ে যান। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতে এলাকায় বিজেপির জেতে। ২০১৯-এর লোকসভাতেও বিজেপি ভাল ভোট পায়। কিন্তু তৃণমূল ও বিজেপিকে সমর্থন করেও গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা আবাসের বাড়ি পাননি। কার্যত পরিষেবা কিছুই মেলেনি।’’ মন্টুর দাবি, তাই সিপিএমের নেতাকে ফিরিয়ে এনে এলাকাবাসী দুই ফুলকে বার্তা দিতে চান।

কলাবনির বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ২০১০ সালে গ্রামে একটি বিয়েবাড়ি চলাকালীন মাওবাদীরা হানা দিয়ে লুঠপাঠ চালিয়েছিল। ভয়ে গ্রামবাসী পালিয়েছিল। পরে তৎকালীন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে সবাই গ্রামে ফেরেন ও তৃণমূল সমর্থক হয়ে যান। কিন্তু পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভেই এখন এলাকায় জায়গা পাচ্ছে সিপিএম।

পিছনে অবশ্য তৃণমূলের কোন্দলের গল্পও আছে। কলাবনির গোরাচাঁদ হাঁসদা তৃণমূলের অঞ্চল কোর কমিটির প্রাক্তন সদস্য। এ বার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন গোরাচাঁদ, দল টিকিট দেয়নি। গোরাচাঁদ মানছেন, ‘‘তৃণমূল করেও বাসিন্দাদের কোনও উন্নতি হয়নি। এলাকাবাসী আমাকে পঞ্চায়েত সমিতিতে চেয়েছিল। সেটাও একটা ক্ষোভ।’’ তিনি আরও জোড়েন, ‘‘প্রশান্তবাবু আশ্বাস দিয়েছেন, চন্দ্রি পঞ্চায়েতে সিপিএম বোর্ড গড়লে মাওবাদী পর্বে আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করে দেবেন।’’

প্রশান্ত বলছেন, ‘‘জনজাতির মোহভঙ্গ হয়েছে।’’ সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার জুড়ছেন, ‘‘অনেক গ্রামীণ এলাকাতেই প্রায় এক যুগ পর আমরা ঢুকতে পারছি।’’ তবে অঞ্চল তৃণমূলের নেতা কমল মাহাতোর দাবি, ‘‘টাকার টোপ দিয়ে প্রশান্ত এলাকায় ভোট কিনতে চাইছেন।’’ জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর কথায়, ‘‘সিপিএম ঘোলাজলে মাছ ধরার চেষ্টা করলেও ৩৫ বছরের লাল-সন্ত্রাস মানুষ ভোলেননি।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুও বলছেন, ‘‘সিপিএমের কোনও সংগঠন নেই। বিক্ষুব্ধ তৃণমূলিদের মগজ ধোলাই করে ওরা এলাকায় ঢুকছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

WB Panchayat Election 2023 West Bengal Panchayat Election 2023 Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy