Advertisement
E-Paper

বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, চাপানউতোর

বৃদ্ধের অপমৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির যোগ রয়েছে, নাকি ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২২ ০৮:৫৫
এখানেই পড়েছিল বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ (বাঁ দিকে), নিহত প্রমথ গায়েন।

এখানেই পড়েছিল বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ (বাঁ দিকে), নিহত প্রমথ গায়েন। নিজস্ব চিত্র।

ভোটের পরদিনই ঝাড়গ্রাম শহরের একটি প্রাথমিক স্কুল চত্বর থেকে উদ্ধার হল এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত দেহ। সোমবার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর এলাকার ঘটনা। পুলিশের অনুমান, প্রমথ গায়েন (৭৩) নামে ওই বৃদ্ধকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। সেই ঘটনায় জুড়ল রাজনীতিও। কারণ, প্রমথের দুই বিবাহিত মেয়ে তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। ভোটের প্রচারে ও রবিবার ভোট গ্রহণের দিনে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল তাঁদের। তবে বৃদ্ধের অপমৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির যোগ রয়েছে, নাকি ঘটনার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে সেটা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

এদিন সকালে শ্রীরামপুর প্রাথমিক স্কুলের পিছনে মিড ডে মিল রান্নাঘর চত্বরে প্রমথের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়েরা। মুখ ও মাথা থেঁতলালো অবস্থায় ছিল। সারা শরীরে ছিল মারের ক্ষতচিহ্ন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। বাঁকুড়ার ডগ স্কোয়াড থেকে দু’টি পুলিশ কুকুর নিয়ে গিয়ে এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ নবীন শীট জানান, ওই বৃদ্ধ লকডাউনের সময় থেকে রাতে স্কুল চত্বরে থাকতেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীরামপুর এলাকাটি শহরের প্রান্তিক এলাকা। জারালাটা যাওয়ার পিচ রাস্তার ধারে প্রাচীরবিহীন সরকারি প্রাথমিক স্কুলটি কার্যত নির্জন এলাকায়। স্কুলের নতুন রান্না ঘরের পাশেই রয়েছে পুরনো পরিত্যক্ত রান্নাঘর। সেখানেই একা থাকতেন প্রমথ। প্রমথের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ে পাপিয়া বারুই ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী কৌশিক সিংহের প্রচার কর্মসূচির পুরোভাগে ছিলেন। রবিবার ভোট গ্রহণের দিনে বেনাগেড়িয়া এলাকায় তৃণমূলের বুথ ক্যাম্পও সামলেছিলেন পাপিয়া। প্রমথের আর এক মেয়ে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিঠু রায়ও সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। প্রমথের দুই ছেলের মধ্যে প্রবীর ভাড়া গাড়ির ব্যবসা করেন। তিনি থাকেন শ্রীরামপুরে। আর এক ছেলে পরিমল পেশায় গাড়িচালক। তিনি স্থানীয় মেহেরাবাঁধ এলাকার বাসিন্দা। তবে ছেলে ও মেয়েদের সংসারে থাকতেন না প্রমথ ও তাঁর স্ত্রী নমিতা। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাছুরডোবা এলাকায় এক শিক্ষকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন নমিতা। তিনি সেখানেই থাকেন। নমিতা জানাচ্ছেন, তাঁর স্বামী নেশা করতেন। তবে ছেলে-মেয়েদের বাড়িতে এসে খাওয়া দাওয়া করতেন।

এলাকা ঘুরে জানা গেল, প্রমথ কিছুটা অপ্রকৃতস্থও ছিলেন। তবে কারও সঙ্গে বিবাদে জনাতেন না। নিজের মতো থাকতেন। তবে পাপিয়া ও মিঠু বলছেন, ‘‘বাবার তো কোনও শত্রুই ছিল না। আমাদের রাজনীতি করার কারণে যদি বাবাকে খুন করা হয়ে থাকে, তাহলে সেই খুনিদের উপযুক্ত বিচার চাই।’’ ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী কৌশিক সিংহ সহ স্থানীয় বাসিন্দারা এদিনই পুলিশ-প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে লিখিতভাবে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি করেছেন। কৌশিক বলছেন, ‘‘এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’’ ওই ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত নবু গোয়ালা বলছেন, ‘‘প্রকৃত ঘটনা পুলিশ তদন্ত করে খুনিদের ধরুক।’’

পুলিশের এক সূত্রের খবর, প্রমথের ছেলে প্রবীরের দায়ের করা এফআইআর-এ কোনও অভিযুক্তের নাম নেই। তবে প্রমথের এক ছেলের গাড়ি ব্যবসা সংক্রান্ত কিছু বিরোধের তথ্যও পেয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘তদন্তে সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে ধরা হবে।’’

Death Jhargram
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy