প্রতি বছরই বর্ষায় প্লাবিত হয় রূপনারায়ণ। কোলাঘাটের একাংশে জলবন্দি নয়। রূপনারায়ণ নদ তার নাব্যতা হারানোর কারণেই এই সমস্যা। তাই প্লাবনের হাত থেকে বাঁচতে কোলাঘাট ,তমলুক ও মহিষাদলের বাসিন্দারা চান দ্রুত চড়া পড়ে যাওয়া নদীর গভীরতা বাড়ানো হোক। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখনই তার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, জানিয়ে দিয়েছেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া।
নদীর পাড়ে বাস, দুঃখ বারো মাস। তাইই বর্ষা শুরু হলেই আতঙ্কে দিন কাটে দুই মেদিনীপুর, হুগলি ও হাওড়ারর রূপনারায়ণ তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। ঘাটালের বন্যা নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণে কাজ শুরু হয়েছে। এতে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলাবতী, দূর্বাচটি-সহ একাধিক নদী সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই চলছে। ভবিষ্যতে দারকেশ্বর নদও সংস্কারের দাবি উঠেছে এলাকায়। অন্য দিকে পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক ও তমলুকের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের জলবন্দি দশা কাটাতে ‘নো কস্ট’ পদ্ধতিতে কাটানো হচ্ছে টোপা, দেনান , দেহাটি, গঙ্গাখালি, শঙ্করআড়া, বাঁপুর-সহ একাধিক খাল। কিন্তু দুই মেদিনীপুরের একাধিক খাল সংস্কার হলে বিস্তীর্ণ অংশের জল এসে পড়বে রূপনারায়ণেই। কিন্তু এই নদের জলধারণ ক্ষমতা এইনিতেই কম। তাই প্রতি বছরই হয় বন্যা। তাহলে খাল ও অন্য নদী সংস্কারের ফলে যে অতিরিক্ত জল আসবে তা রূপনারায়ণ বইবে কী করে? আগামী বর্ষায় তাই প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় কোলাঘাট ,তমলুক ও মহিষাদলের বাসিন্দারা।
রূপনারায়ণ পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলির সংযোগস্থল বন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে হলদি নদী ও হাওড়ার গঙ্গায় এসে মিলিত হয়েছে। মোট চারটি জেলার জল নিকাশির জন্য এই নদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোলাঘাট ও তমলুকে নদে পড়েছে বালি ও পলির চড়া। হাওড়ার দিকে অতিরিক্ত চড়া পড়ায় কোলাঘাট শহর ও শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের রূপনারায়ণের অনেকাংশই নদীগর্ভে পড়তে শুরু করেছে। কয়েক বছর আগেই সিল্টেশন পদ্ধতিতে সরকারি উদ্যোগে নদীর পার রক্ষার চেষ্টা হলেও তা পুরোপুরি করা যায়নি। ফলে প্রতি বছরই কোলাঘাট শহর ও দেনানের বাসিন্দাদের বন্যা থেকে বাঁচাতে নদীবাঁধের উচ্চতা বাড়াতে হয় বালির বস্তা দিয়ে। দুই জেলার নদী ও খাল সংস্কারের ফলে সেই আতঙ্ক আরও করে গ্রাস করেছে কোলাঘাটবাসীকে।
২০২০ সাল নাগাদ কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের কাছে নদ সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি। কমিটির সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘২০২১ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের জল শক্তি মন্ত্রক থেকে আধিকারিকরা এসে রূপনারায়ণের অবস্থা পরিদর্শন করেন। আমরাও তাঁদের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখিয়েছিলাম। কিন্তু সেই কাজ আজও হয়নি।’’ কোলাঘাটের বাসিন্দা অসীম দাস বলেন, ‘‘প্রতি বছরই কোলাঘাট শহর প্লাবিত হয়। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে এখন নদী ও খালগুলি সংস্কার হচ্ছে। এতে রূপনারায়ণে আরও বেশি জল পড়লে আমাদের তো ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা চাই দ্রুত এই নদ সংস্কার করে গভীরতা বাড়ানো হোক।’’
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সম্পূর্ণ হলে তবেই রূপনারায়ণ সংস্কারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে ২০১৬ সাল থেকে নদী সংস্কারে একটা টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অত্যন্ত কষ্ট করে ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত করছেন। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে রূপনারায়ণ নদ সংস্কারের বিষয়টি আলোচনা হয়েছিল। ভবিষ্যতে তা-ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হবে।’’ (চলবে)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)