E-Paper

যক্ষ্মা নির্ণয়ে ১০০ দিনের কর্মসূচি

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, সমস্ত যক্ষ্মা রোগীদের খুঁজে বের করতে পারলে আগামী বছর না হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই রোগকে নির্মূল করা সম্ভব।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৫৫

— প্রতীকী চিত্র।

চিন্তা বাড়াচ্ছে যক্ষ্মা। এই আবহে সোমবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যক্ষ্মার স্ক্রিনিং (প্রাথমিক লক্ষ্মণ পরীক্ষা) শুরু হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। আগামী ১০০ দিন ধরে জেলা জুড়ে এই চলবে কর্মসূচি। বাড়ি বাড়ি যাবেন আশা কর্মীরা।

জঙ্গলমহলের এই জেলায় গত বছর যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অর্থাৎ গত বছর গড়ে প্রতি মাসে জেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল এই রোগে। চলতি বছরেও উদ্বেগ বাড়িয়ে ১০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে ওই মারণ রোগে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় এই প্রথম যক্ষ্মার স্ক্রিনিং হচ্ছে। এর ফলে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ এই রোগের লক্ষ্মণ থাকলেও অনেকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করান না।

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, সমস্ত যক্ষ্মা রোগীদের খুঁজে বের করতে পারলে আগামী বছর না হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই রোগকে নির্মূল করা সম্ভব।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, আশা কর্মীরা কোনও বাড়িতে গিয়ে সেই পরিবারের সদস্যদের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্মণ আছে কি না দেখবেন। দু’সপ্তাহের বেশি জ্বর-কাশি, ওজন কমে যাওয়া, রাতে ঘাম, কাশিতে রক্তের মতো লক্ষ্মণ থাকলে তাঁদের কফ পরীক্ষার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালে পাঠানো হবে। বুকে ব্যথা, হাঁফিয়ে যাওয়া, খিদে কমে যাওয়া, ক্লান্তি বেশি আসা, গলা ফুলে যাওয়ার মতো বিষয় থাকলেও একই কাজ করা হবে। কফ পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে বুকের এক্স-রে করতে হবে। তাতেও কিছু না পাওয়া গেলেও ‘ন্যাট’ পরীক্ষা করাতে হবে। সরকারি ভাবে এখন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতালে যক্ষ্মা নির্ণায়ক পরীক্ষা হয়। কেউ যক্ষ্মা আক্রান্ত হলে তাঁকে নিকটবর্তী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র বা সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ওষুধ দেওয়া হয়।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, যক্ষ্মা ছোঁয়াচে রোগ। সর্দি, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। তবে ফুসফুস ছাড়াও কিডনি, যৌনাঙ্গ, হাড়, মস্তিষ্ক ও শিরদাঁড়াতেও যক্ষ্মা ধরা পড়ছে। যে মহিলাদের সন্তান ধারণে সমস্যা আছে, তাঁরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়, ‘‘এই রোগের উপসর্গ থাকলে মানুষ প্রথম দিকে গুরত্ব দেন না। ফলে রোগ নির্ণয় হতেই অনেক সময় চলে যায়। ততক্ষণে যক্ষ্মার জীবাণু শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। মস্তিষ্কে চলে গেলে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘এই রোগের ওষুধ খেলে কিছু জনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ফলে অনেকে ওষুধ অনিয়মিত করে দেন। অনেকে সামাজিক কারণে সরকারি জায়গা থেকে ওষুধ নিতে চান না। খেলেও কিছুদিন পর থেকে বন্ধ করে দেন। যা ঠিক নয়।’’

করোনার পর যক্ষ্মায় আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। যেটা চিন্তার। সব দিক মাথায় রেখেই এই রোগকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, একজন যক্ষ্মা রোগী থেকে ১৩ জনের এই রোগ ছড়াতে পারে। তাই কোনও ব্যক্তির যক্ষ্মা ধরা পড়লে তাঁর পরিবারের সবাইকে কমপক্ষে ছ’মাস ওষুধ খেতে হয়। সরকারি ভাবে প্রতিমাসে ৫০০ টাকা দেওয়া হয় যক্ষ্মা রোগীদের। মূলত পুষ্টিকর খাবার কেনার জন্যই দেওয়া হয় এই টাকা।

ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবন চন্দ্র হাঁসদা বলেন, ‘‘গত বছর জেলায় যক্ষ্মায় মৃত্যুর হার একটু বেশি ছিল। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। যক্ষ্মা হলে পুষ্টি যুক্ত খাবার ও নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। তাই স্ক্রিনিংয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আশা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। এই জন্য ১০০ দিনের স্পেশাল ড্রাইভ নেওয়া হচ্ছে। মানুষকে বুঝতে হবে নিয়মিত ওষুধ খেলে যক্ষ্মা পুরোপুরি সেরে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tuberculosis Jhargram

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy