Advertisement
০২ এপ্রিল ২০২৩

ঝলসে মৃত বৃদ্ধ, নালিশ হুকিংয়ের

রবিবার সকালে খেজুরি ১ ব্লকের বীরবন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। অভিযোগ, তিনি ট্রান্সফর্মার থেকে বেআইনিভাবে হুকিং করছিলেন। যদিও মৃতের পরিজনের দাবি, ট্রান্সফর্মার থেকে হুকিং নয়, বাড়ি থেকে জমিতে বিদ্যুতের তার টানতে গিয়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন।

বিপজ্জনক: জমা জলে খোলা তার। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: জমা জলে খোলা তার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খেজুরি শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০০:২০
Share: Save:

দু’দিনে দুই মৃত্যু। দু’টি ক্ষেত্রেই উঠেছে হুকিংয়ের অভিযোগ।

Advertisement

রবিবার সকালে খেজুরি ১ ব্লকের বীরবন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধের। অভিযোগ, তিনি ট্রান্সফর্মার থেকে বেআইনিভাবে হুকিং করছিলেন। যদিও মৃতের পরিজনের দাবি, ট্রান্সফর্মার থেকে হুকিং নয়, বাড়ি থেকে জমিতে বিদ্যুতের তার টানতে গিয়ে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে বীরবন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ অজয়া গ্রামের বাসিন্দা তীর্থবাস কলা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। তিনি সকাল সাড়ে ছ’টা নাগাদ বাড়ির পাশের জমি থেকে জল বার করার জন্য টুলু পাম্প চালাতে গিয়েছিলেন। অভিযোগ, জমির পাশে পাম্প বসিয়ে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারের কাছে যান হুকিং করতে। সেই সময় ট্রান্সফর্মারের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক তারে তাঁর ডান হাত ঝলসে যায়। পরে সেই হাত বুকে লাগলে বুকের কিছুটা অংশ ঝলসে যায়।

স্থানীয় এক যুবকের কথায়, ‘‘সকালে চা দোকানে দাদুর সঙ্গে গল্প করে চাষের কাজে চলে যাই। সবে কাজ শুরু হয়েছে। হঠাৎ চিৎকার শুনতে পাই। গিয়ে দেখি সব শেষ।’’ এক‌ই পাড়ার বাসিন্দা সৌমেন সাঁতরা বলেন, ‘‘আমি তখন মাছের ভেড়িতে ছিলাম। দৌড়ে গিয়ে দেখি ঘটনা ঘটে গিয়েছে।’’ হেঁড়িয়া ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। হেঁড়িয়া ফাঁড়ির আইসি অভিজিৎ পাত্র জানিয়েছেন, ‘‘মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান শর্ট সার্কিটের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

Advertisement

উল্লেখ্য, শনিবারই নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের ঠাকুরচক গ্রামে হুকিংয়ের তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয়েছে সবিতা দাস নামে এক মহিলার।

তীর্থদাসবাবুর পরিবারের তরফে অবশ্য অন্য দাবি করা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বাড়ির সুইচ বোর্ডে বিদ্যুতের তার ঢুকিয়ে তা পাম্পের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তীর্থদাসবাবু। কিন্তু সেই তারের বিভিন্ন অংশ কাটা ছিল। সে এরকম কোনও একটি অংশে শক লেগে ওই ঘটনা ঘটেছে।

কিন্তু তাতে প্রশ্ন উঠেছে, তীর্থদাসবাবু ট্রান্সফর্মারের কাছে গিয়েছিলেন কেন? সদুত্তর মেলেনি। তবে কলা পরিবারের এক সদস্য সৌমেন কলার কথায়, ‘‘বাড়ির পিছনের ওই ট্রান্সফর্মারটি খারাপ। যখন তখন আগুন ধরে যায়। আর ট্রান্সফর্মারের উপরে সব সময় ধোঁয়া বেরোতে থাকে। বিদ্যুৎ দফতর কোনও তদারকি করে না। আজ একটা জীবন চলে গিয়েছে। এরকম চললে ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ ঘটে তো বহু জীবন চলে যেতে পারে।’’

বীরবন্দর চত্বরে রয়েছে বহু মাছের ভেড়ি। যেগুলির অধিকাংশেই হুকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় এক বাসিন্দা মোহন মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার প্রত্যেকটি মাছের ভেড়িতে হুকিং করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। প্রশাসনিক তরফে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?’’

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর, ওই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি রুখতে কেবল তারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খেজুরি বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন মাস্টার প্রশান্ত বিশ‌ওয়াল হুকিং প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই এলাকার বিদ্যুৎ চুরি আটকানো যাচ্ছে না। অথট হুকিং করতে গিয়ে অকালে প্রাণ চলে যাচ্ছে। এত সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর পরও মানুষ বুঝতে চাইছেন না!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.