Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Narayangarh TMC

ব্লকের দাবিকে মান্যতা, ব্যতিক্রমী সূর্য তালুক

স্থানীয়স্তরে মিহিরকেই সমর্থন করেছিল দল। পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের আগে থেকেই দল কড়া বার্তা দিয়েছিল। জানিয়েছিল দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বিশ্বসিন্ধু দে
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৪
Share: Save:

প্রথম দিনেই পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হয়নি জেলার যে দু’টি ব্লকে তার মধ্যে কেশিয়াড়ির পরেই ছিল নারায়ণগড়। কেশিয়াড়ির ক্ষেত্রে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও নারায়ণগড়ের ক্ষেত্রে তা অবশ্য ছিল না। পরে বোর্ড গঠনে কেশিয়াড়িতে পুরনো তালিকাই বহাল ছিল। তবে নারায়ণগড়ে তালিকা পুনর্বিবেচনা করেছে দল। নারায়ণগড়ে সহ সভাপতি হিসেবে প্রথমে বর্তমান তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুকুমার জানার নাম ছিল। যদিও পরে পুনর্বিবেচনায় বদলে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মিহির চন্দকে পদে আনা হয়। কেন এক যাত্রায় পৃথক ফল? তৃণমূলের অন্দরে ভাসছে, বিধায়কের প্রভাবের তত্ত্ব। ফলে প্রকাশ্যে শাসক দলের তরফে জানানো হচ্ছে, কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা থাকায় রাজ্য পরে পরিবর্তন করেছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর সভাপতি ও সহ সভাপতি নির্বাচন হয়েছে নারায়ণগড়ে। উষা ঘোড়াইকে সভাপতি মানলেও সহ সভাপতি হিসেবে সুকুমারকে ১০ অগস্ট প্রথম দফায় না মানতে পারায় বোর্ড গঠন সে দিন হয়নি। পরে পরিবর্তন হয়ে মিহিরকেই সহ সভাপতির পদে আনা হয়েছে।
স্থানীয়স্তরে মিহিরকেই সমর্থন করেছিল দল। পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের আগে থেকেই দল কড়া বার্তা দিয়েছিল। জানিয়েছিল দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। না হলে ‘পদক্ষেপ’ করার সাবধানবানীও শুনিয়েছিল। তবে কেশিয়াড়ির ক্ষেত্রে পদক্ষেপ হলেও নারায়ণগড়ে তা হয়নি। আর এ ক্ষেত্রে ব্লকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ‘নিকেশ’ করা বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্টের ‘প্রভাব’ বা ‘ম্যাজিক’ কাজ করেছে বলে দাবি দলেরই একাংশের। যদিও এসব একেবারেই মানতে নারাজ বিধায়ক সূর্যকান্ত। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কোথাও ত্রুটি ছিল। তা দল বুঝতে পেরেছে। তাই পুনর্বিবেচনা করেছে।’’

শুধু পঞ্চায়েত সমিতি নয়, মঙ্গলবার কুশবসান পঞ্চায়েতের প্রধান নির্বাচনেও দেখা গেল ‘পুনর্বিবেচনা’। গত ১১ অগস্ট বোর্ড গঠনের দিন উপ প্রধান নির্বাচিত হলেও প্রধান হিসেবে দলের পাঠানো মামনি রাউলকে কেউ সমর্থন করেনি। অন্যদিকে স্থানীয়স্তরে টুম্পা সাউ রাউলকে এই পদে চেয়েছিল। ফলে সে দিন গোলমালে বোর্ড গঠন স্থগিত হয়। মঙ্গলবার অবশ্য মামনির বদলে প্রধান হয়েছেন স্থানীয়স্তরে মান্যতা পাওয়া টুম্পা। এ ক্ষেত্রেও দলকে ‘নমনীয়’ হতে হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে হয়নি। গত ১০ ও ১১ অগস্ট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি ও কুশবসান পঞ্চায়েত প্রধান এবং নারমা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হয়নি। দলের পাঠানো তালিকা স্থানীয়স্তরে না মানায় তখন পদক্ষেপের কথা জেলা তৃণমূল জানালেও নারায়ণগড়ের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে হয়েছে দলকে। নারমা পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রেও রাজ্যের পাঠানো তালিকা মানেনি দল। ১০ অগস্টের পর ফের ২৩ অগস্ট নাম পরিবর্তন করে প্রধান নির্বাচিত হয়। ফলে প্রশ্ন উঠছেই দলের সিদ্ধান্ত যদি চূড়ান্তই হবে তবে দল কোথাও গরম আবার কোথাও নরম পদক্ষেপ নিতে 'বাধ্য' হল কেন ? কোথাও কি সুর নরম সুরে বাঁধতে হল জেলা নেতৃত্বকে। এর উত্তরে উঠে আসছে নারায়ণগড় বিধানসভার বিধায়ক, দাপুটে নেতা সূর্যকান্ত অট্টের কৌশলী ম্যাজিকের কথা। জেলা সভাপতির সুজয় হাজরার বিরুদ্ধে জেলার যে কয়েকটি ব্লকের বিধায়কেরা মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ এনেছেন সেই তালিকায় অবশ্য নাম নেই সূর্যের। ফলে সুজয়ের সঙ্গে বিধায়কে ‘সমীকরণ’ নিয়ে চলছে আলোচনা।

বুধবার প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের উদ্যোগে বেলদাতে শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানেও সুজয়কে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। সুজয় এদিন বলেন,‘‘কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা থাকায় রাজ্য পরে পরিবর্তন করেছে। এখানে জেলা সভাপতির কোন হাত নেই। তবে আমরা সার্ভে করে নাম পাঠিয়েছিলাম। সমস্যা হওয়ায় দল স্থানীয়ভাবে রিভিউ করে দেখেছে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘স্থানীয়স্তরে কিছু বক্তব্য ছিল। তবে পুরনো নিয়মে দলে অনেকেরই মনে হয়েছিল দলের নির্দেশ না মানার। সে জায়গায় পদক্ষেপ হয়েছে। তবে রাজ্য যেখানে পরে সংশোধন করে নাম পাঠিয়েছে। সেখানে সেটাই মানা হয়েছে।’’ যেখানে পরিবর্তন বা দলকে পুনর্বিবেচনা করতে হল সেখানে বিধায়কের কি প্রভাব কাজ করেছে ! যদিও সুজয় বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এখানে বিধায়কের কিছু বিষয় নেই। তাদের প্রভাবের বিষয়ও নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বা সদস্য যা চেয়েছেন তা নিয়ে দল ভেবেছে।’’ তবে তৃণমূলের অনেকের বক্তব্য, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনের পর যিনি ব্লকে দ্বন্দ্ব মুছে দিয়েছেন এবং জেলায় দৃষ্টান্ত হয়েছেন, তার প্রভাব থাকবে না তা হয় না।’’ বিধায়ক সূর্যকান্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বহীন নারায়ণগড়ের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‘এখানে দ্বন্দ্ব নেই। জেলার মধ্যে এখন এই ব্লক আলাদা। বিধায়ক হওয়ার পর আমি দ্বন্দ্ব মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে কাজ করছি। ফলে এক্ষেত্রে দলের পুনর্বিবেচনা করতে সুবিধে হয়েছে।’’

কোনও ম্যাজিক বা সমীকরণ কি কাজ করল ? সূর্যকান্ত বলেন,‘‘দল ভেবেছিল যে নামগুলো তাদের কাছে গেছে সেগুলোয় বিধায়ক বা ব্লকের সম্মতি আছে। কিন্তু পরে দেখা গেছে তালিকা নিয়ে আমাদের আপত্তি আছে। সে নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে। দল তখন বিবেচনা করেছে। শুধু আমার একার কথা নয়, ব্লকে সবার কথা শুনে এই পরিবর্তন হয়েছে।’’ তালিকা তৈরির সময়ে কি স্থানীয়স্তরে আলোচনা হয়নি? দল জানাচ্ছে, আলোচনা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ত্রুটি হয়েছে। এই বিষয়ে সবটাই দলের পরামর্শদাতা সংস্থাই ঠিক করেছিল। ফলে স্থানীয়স্তরে ক্ষোভ মেটাতেই ফের পরিবর্তন হয়েছে। সহ সভাপতি হতে পারলেন না। ক্ষোভ নেই? নারায়ণগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুকুমার জানা বলেন,‘‘দলের সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সেখানে ব্যক্তি কিছু নয়। আর যা হয়েছে সবটাই ঐক্যমতের ভিত্তিতেই হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narayangarh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE