E-Paper

শান্ত জঙ্গলমহল, বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম জেলা এখন একেবারেই শান্ত। রাত-বিরেতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত কাঁকড়াঝোর, আমলাশোলের মতো এলাকায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৫:৪৯
ঝাড়গ্রামের পিয়ালগেরিয়া গ্রামে বিদেশি পর্যটকেরা।

ঝাড়গ্রামের পিয়ালগেরিয়া গ্রামে বিদেশি পর্যটকেরা। নিজস্ব চিত্র।

শীত পড়তেই শান্ত জঙ্গলমহলে আনাগোনা বাড়ছে বিদেশি পর্যটকদের। এ বার দু’দফায় ঝাড়গ্রামে এলেন বিদেশি পর্যটকেরা। এক মাসে দু’বার বিদেশি পর্যটকেরা এই প্রথম ঝাড়গ্রামে এলেন। শুধু তাই নয়, বাইক নিয়ে সটান ঝাড়গ্রামে এসে ঘুরে গিয়েছেন এক তরুণ জার্মান পর্যটক। জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘বিদেশি পর্যটক আসার পর পর্যটনের প্রসার ঘটবে। বিদেশি পর্যটকদের মাধ্যমে বহু মানুষজন ঝাড়গ্রাম সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন।’’

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত ঝাড়গ্রাম জেলা এখন একেবারেই শান্ত। রাত-বিরেতে পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত কাঁকড়াঝোর, আমলাশোলের মতো এলাকায়। এমনকি কাঁকড়াঝোরে হয়েছে একাধিক হোম-স্টে। পাশাপাশি সরকারি ভাবে অতিথিশালা ২০২১ সাল থেকে ফের চালু হয়েছে। এমনকি গভীর জঙ্গল ঘেরা এলাকার হোম-স্টে’তে পর্যটকরা গভীর রাত পর্যন্ত ক্যাম্প-ফায়ার করছেন। সেই সঙ্গে জেলা পুলিশের নজরদারি ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান মানুষজনকে আরও সাহস জুগিয়েছে। তবে ঝাড়গ্রাম জেলায় বিদেশি পর্যটকদের আসা ক্ষমতার পালা বদলের পর শুরু হয়েছিল। ২০১৪ প্রথম দু’জন আমেরিকার পর্যটক বেড়াতে এসেছিলেন। ২০১৯ সালেও চারজন আমেরিকার পর্যটক ঝাড়গ্রাম বেড়াতে এসেছিলেন।

গত বছর বাংলাদেশ থেকে চারজন পর্যটক ঝাড়গ্রামে বেড়াতে এসেছিলেন। ঝাড়গ্রামের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে আদিবাসী-মূলবাসীদের জীবন যাত্রা ও লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি হয়েছিলেন। গত কয়েক বছরে হু-হু করে জেলায় বেড়েছে হোম-স্টে। বেলপাহাড়ি এলাকায় ৬৮টি হোম-স্টে তৈরি হয়েছে। সেখানে এসে থাকছেন পর্যটকেরা। দীপাবলির উৎসবের মাঝে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন বিদেশি পর্যটকের দল। জার্মানির মিউনিখ থেকে বেড়াতে এসে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়িতে রাত্রিযাপন করেছিলেন। ওই বিদেশি পর্যটকদের দলে আটজন মহিলা-সহ মোট ১১ জন এসেছেন। ভারতের একটি পর্যটন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুধারকর সেলভিনের তত্ত্বাবধানে ওই বিদেশি পর্যটকরা এসেছেন।

সেই পর্যটকদের দলে থাকা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মনিকা ফোরগেট বলেছিলেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি খুবই ভাল। বিশেষ করে দীপাবলির উৎসবের সময় এসে খুব ভাল লেগেছে। এখানকার ইতিহাস সম্পর্কে জানলাম। এখানকার দই ও মিষ্টি খেয়েও খুব ভাল লেগেছে।’’ রাজ পরিবারের সদস্য বিক্রমাদিত্য মল্লদেব বলেন, ‘‘পর্যটন স্থান হিসেবে ঝাড়গ্রাম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হয়ে উঠেছে। বিদেশি পর্যটক সমাজমাধ্যমের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছেন কলকাতার কাছে খুবই আকর্ষণীয় জায়গা।’’ গত বুধবার বাইকে চালিয়ে এক জার্মান পর্যটক বেলপাহাড়ি গিয়েছিলেন। জার্মানির কোলন শহর থেকে তিনি বিমানে এসেছিলেন। সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন বাইকও। সেই বাইকে চেপে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায় বুধ ও বৃহস্পতিবার ঘুরে বেড়িয়েছেন।

ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহার কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে জেলায় আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভাল রয়েছে, সেই বার্তা বিদেশিদের কাছেও গিয়েছে। যার ফলে তাঁরা আরও বেশি করে বেড়াতে আসার সাহস পাচ্ছেন।’’ ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পর্যটন মানচিত্রে ঝাড়গ্রাম আন্তর্জাতিক স্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram Foreigner

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy