Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

কর্মী নেই, বন্ধ অফিসের ভাড়া গোনা হচ্ছে ৯ বছর

কর্মীর অভাবে আস্ত একটা সরকারি অফিসে তালাচাবি পড়ে গিয়েছে। অথচ গত ন’বছর ধরে সেই বন্ধ অফিসের ভাড়া মেটাচ্ছে কৃষিজ বিপণন দফতর। মেটানো হচ্ছে ইলেকট্রিক বিলও।

বন্ধ: তালা দরজায়। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ: তালা দরজায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৭ ০০:৪২
Share: Save:

কর্মীর অভাবে আস্ত একটা সরকারি অফিসে তালাচাবি পড়ে গিয়েছে। অথচ গত ন’বছর ধরে সেই বন্ধ অফিসের ভাড়া মেটাচ্ছে কৃষিজ বিপণন দফতর। মেটানো হচ্ছে ইলেকট্রিক বিলও।

মেদিনীপুরে জেলা সহ-কৃষিজ বিপণন অধিকর্তার দফতরের একতলায় রয়েছে মেদিনীপুর শাখার ‘স্টেট ওনড অয়েল ল্যাবরেটরি’ ও কেমিস্টের অফিসটি। সহ-কৃষিজ অধিকর্তার অধীনেই অফিসটি চলত। কিন্তু এই কেমিস্ট, সহকারী কেমিস্ট, দু’জন ল্যাবরেটরি সহকারী, একজন গ্রেডিং সহকারী এবং দু’জন ইন্সপেক্টরের পদ শূন্য। আছেন শুধু চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ল্যাবরেটরি অ্যাটেনডেন্ট রামজি মিশ্র আর নৈশরক্ষী সমীরচন্দ্র বেরা। সমীরবাবু বন্ধ অফিসই পাহারা দেন। আর রামজি তিন তলায় জেলা কৃষিজ বিপণন দফতরে বসেন।

কৃষিজ বিপণন দফতরের মেদিনীপুর অয়েল গ্রেডিং পরীক্ষাগারে এক সময় সর্ষের তেল পরীক্ষা করে আগ মার্কের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হত। গ্রেডিংয়ের ভিত্তিতে ভারত সরকারের ‘আগ মার্ক’ স্বীকৃতি মিলত। কিন্তু কর্মীর অভাবে মেদিনীপুরে ল্যাবরেটরি-অফিসটি বন্ধ থাকায় কৃষিজ পণ্যের গুণাগুণ পরীক্ষা করানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে, আগ মার্ক ছাড়াই স্থানীয় সংস্থার কৃষিজ পণ্যগুলি খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ।

কৃষিজ বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় বহু ঘানিতে স্থানীয় ভাবে সর্ষের তেল বানানো হয়। সর্ষের তেলের পাশাপাশি, স্থানীয় ভাবে ঘি, মধু ও গুঁড়ো মশলার একাধিক সমবায় উত্‌পাদন ও বিপণন কেন্দ্র রয়েছে। ‘আগ মার্ক’ যুক্ত কৃষিজ পণ্য বিক্রি করতে হলে কৃষিজ বিপণন দফতরের গ্রেডিং করানো জরুরি। তবেই আর্গ মার্কের ছাপ দিয়ে কৃষিজ পণ্য সামগ্রী বিক্রি করা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা পণ্য সামগ্রীর নমুনা পরীক্ষাগারে জমা দিলে সরকারি ফি নিয়ে সেগুলি পরীক্ষা করে শ্রেণিবিন্যাস করে দেওয়া হত। সেই গ্রেডিং বা শ্রেণি বিন্যাসের ভিত্তিতেই আগ মার্ক ব্যবহারের ছাড়পত্র মেলে।

আগে রাজ্য কৃষিজ বিপণন দফতরের এরকম পাঁচটি অফিস ও পরীক্ষাগার ছিল। কর্মীর অভাবে হাওড়া, মেদিনীপুর, বাঁকুড়ার অফিসগুলিতে তালাচাবি পড়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র কলকাতার কাঁকুড়গাছিতে দু’টি অফিস ও পরীক্ষাগারে কাজকর্ম হচ্ছে। কৃষিজ বিপণন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আগ মার্ক বাধ্যতামূলক নয়। তবে আগ মার্ক আছে মানে সেই পণ্যের গুণগত মান উপযুক্ত ভাবে পরীক্ষিত। তবে ব্লেন্ডেড তেলের ক্ষেত্রে আগ মার্ক জরুরি। জেলার কোনও সংস্থায় এমন তেল তৈরি হচ্ছে কি-না তা আমাদের জানা নেই।”

জানার কথাও নয়। এ সব তথ্য খোঁজ নেওয়ার জন্য দফতরের ইন্সপেক্টর পদ শূন্য রয়েছে। তাহলে কেন পাকাপাকি ভাবে মেদিনীপুরে কেমিস্টের দফতর ও পরীক্ষাগারটি তুলে দেওয়া হচ্ছে না? কৃষিজ বিপণন দফতরের ব্যাখ্যা, এখনও দু’জন কর্মী অবসর নেননি। তাঁরা অবসর নিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। কৃষিজ বিপণন দফতরের উপ অধিকর্তা (পশ্চিমাঞ্চল) কানাইলাল হাঁসদা বলেন, “পুরনো কর্মীরা অবসর নিয়েছেন। নতুন কর্মী নিয়োগ হয়নি। তাই পরীক্ষাগারটির কাজকর্ম বন্ধ রয়েছে। তবে কলকাতায় দু’টি পরীক্ষাগারে গ্রেডিংয়ের কাজ হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Government office lack of workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE